রমজানের শেষ দশকের রাতের ইবাদত যেমন হতে পারে

একজন মুমিন বান্দা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন কখন রমজান মাস আসবে। রবের রহমতের বারিধারায় নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করবেন। পরকালীন রসদ সংগ্রহ করে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হবেন। আমাদের মাঝে সেই মহিমান্বিত মাস রমজান এসেছে। চোখের পলকেই আবার তা বিদায় নিচ্ছে। রহমত, মাগফিরাতের দশক পেরিয়ে আমরা আছি রমজানের শেষ দশক নাজাতে।
বিজ্ঞাপন
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রমজানের শেষ দশক নিয়ে উম্মুল মুনিনীন হজতর আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন— রমজানের শেষ দশক শুরু হলে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন। পরিবারকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
নাজাত বা রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এই রাতগুলোর ফজিলত পেতে যেভাবে ইবাদত করা যেতে পারে এখানে তা তুলে ধরা হলো—
বিজ্ঞাপন
ইতিকাফ
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, অন্য সব ব্যস্ততা গুটিয়ে মসজিদে অবস্থানের বিধান হলো ইতিকাফ। এটি ইসলামের প্রাচীন একটি বিধান। কোরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন—
বিজ্ঞাপন
‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে সেই সকল লোকের জন্য পবিত্র কর, যারা (এখানে) তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে এবং রুকু ও সিজদা করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)
ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সময়েও যে ইতিকাফের বিধান ছিল, তা এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন—
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৩৩)
ইতিকাফ প্রকারভেদে সুন্নত, ওয়াজিব কিংবা নফল আমল হতে পারে। আমরা সুবিধা অনুযায়ী ফজিলতপূর্ণ এই আমল করতে পারি।
শবে কদর অন্বেষণ
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে শবে কদর নিয়ে একটি সূরা নাজিল করেছেন, যা সূরা কদর নামে পরিচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন— নিঃসন্দেহে কদরের রাতে আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি। আর আপনি কি জানেন শবে কদর কী? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতা ও রূহুল কুদস (জিবরাঈল আলাইহিস সালাম) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে (পৃথিবীতে) অবতরণ করে। (এ রাতের) আগাগোড়া
শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা কদর, আয়াত : ১-৫)
শবে কদরের মহিমা সূরা কদর পড়লে সহজেই বোধগম্য হয়। হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন — তোমরা শেষ দশকে শবে কদর অন্বেষণ কর এবং প্রতি বেজোড় রাতে অন্বেষণ কর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৭)
আরও পড়ুন
কোরআন তিলাওয়াত
আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাদিদে রমাজান মাসের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে—
রমজান মাস, যে মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে। (সূরা বাকারা, আয়াত :১৮৫)
রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কোরআন শোনাতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)
জিকির
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়। (সূরা আর-রাদ, আয়াত : ২৮)
জিকিরের মাধ্যমে আমরা আত্মার প্রশান্তি অর্জন করতে পারি। এটি একটি পরিশ্রমবিহীন ইবাদত। হাঁটার সময় কিংবা কায়িক পরিশ্রমের সময়ও জিকির করা যায়। আবু ওসমান নাহদী রহ.বলেন—
কোরআন মাজীদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন— তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং শোকর আদায় করো, আমার সাথে কুফরী করো না। (সূরা বাকারা, আয়াত :১৫২)
আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে স্মরণ করছেন, এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি বান্দার জন্য আর কী হতে পারে! জিকিরে মশগুল হোক আমাদের হৃদয়, আত্মা খুঁজে পাক অনাবিল প্রশান্তি।
তাহাজ্জুদ নামাজ
রমজানে অন্যান্য নফল ইবাদতের মতো তাহাজ্জুদের প্রতিও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকর্ষণ আরো বেড়ে যেত। তিনি রমজানে অধিক পরিমাণে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। বিশেষত রমজানের শেষ দশকে তিনি ইতেকাফ করতেন এবং রাত্রি জাগরণ করতেন। এ সময় তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও রাতে আমলের জন্য ডেকে দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, তাঁর পরিবারকে ডেকে দিতেন এবং লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
নফল ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর রাসুলের কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল তাহাজ্জুদের নামাজ। এক হাদিসে তিনি বলেন, রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা মহররমের। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম হলো রাতের নামাজ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)