আপন ভাই ও বোনকে জাকাত দেওয়া যাবে?

ইসলামের অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো জাকাত। কোরআন মজিদের বহু স্থানে সালাত-জাকাতের আদেশ করা হয়েছে। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো- নামাজ ও জাকাত।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং তোমরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য জাকাত আদায় করো। অত:পর তিনি তা দ্বীগুণ করে দেবেন। (সূরা আর-রুম,আয়াত : ৩৯)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘মুত্তাকিরা জান্নাতে ফোয়ারার নিকটে থাকবে। তারা গ্রহণ করবে, যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সত্কর্মপরায়ণ, তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং তাদের ধনসম্পদে ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক বা ন্যায্য অধিকার।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত : ১৫-১৯)
বিজ্ঞাপন
যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে— এমন স্বাধীন ও পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী জাকাত আদায় করবে।
আল্লাহ তায়ালা জাকাত ব্যয়ের খাতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। গরিব-দুঃখীর স্বার্থের প্রতি খেয়াল রেখেই জাকাতের খাতগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জাকাতের সম্পদ ব্যয়ের খাত মোট আটটি। খাতগুলো হলো—
এক. গরিব-ফকির— যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। দুই. মিসকিন— যাদের কোনো সম্পদ নেই। তিন. ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারকর্তৃক জাকাত, সদকা, ওশর ইত্যাদি উসুল করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি। চার. ইসলামের দিকে ধাবিত করার জন্য জাকাত দেওয়া। তবে এ খাতটি বর্তমানে আর প্রযোজ্য নয়। পাঁচ. নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী। ছয়. পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল না থাকার দরুণ ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঋণী ব্যক্তি। সাত. যোদ্ধা, যারা যুদ্ধের অস্ত্র যোগাতে অক্ষম অথবা টাকার কারণে হজের কাজ পূর্ণ করতে অক্ষম বা ইলম হাসিল ও দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত গরিব মানুষ। আট. সফর অবস্থায় অভাবগ্রস্ত মানুষ।
আরও পড়ুন
কোনো ব্যক্তির আপন ভাই ও বোন ভাই জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তাদেরকে জাকাতের টাকা দেয়া যাবে। বরং তাদেরকে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা, তাদেরকে দিলে দুটি সওয়াব হবে। একটি সদাকার সাওয়াব, অপরটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার সওয়াব।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
الصدقة في المسكين صدقة وفي ذي الرحم صدقة وصلة
মিসকীনকে জাকাত দেওয়া সদকা। আর আত্মীয়কে দেওয়া সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৭৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২৫৮২)
যে কোনো মুসলমান দরিদ্র ও অভাবীকে জাকাতের অর্থ দেওয়া যায়। তবে নিজের আত্মীয়দের মধ্যে যাদের ভরণপোষণের খরচ দেওয়া আবশ্যকীয় কর্তব্য বা ওয়াজিব তাদেরকে জাকাত দেওয়া যায় না। যেমন নিজের বাবা, মা, দাদা, দাদী, নানা, নানী যত ওপরেরই হন, নিজের ছেলে, মেয়ে, পৌত্র, প্রপৌত্র যত নিচেরই হয়, এদেরকে জাকাত দেওয়া নিষিদ্ধ। তারা অভাবে পড়লে সামর্থ্য থাকলে তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা ওয়াজিব। এর বাইরে নিজের স্বজন, ভাই-বোনকে জাকাত দেওয়া যাবে।