ঘুমানোর আগে করণীয় আমল
রাতে ঘুমের আগে বেশ কিছু আমল রয়েছে। সবগুলোই জীবনঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ। যদ্দুর সম্ভব প্রতিটি আমল পূর্ণ করা চাই। তবে কিছু আমল রয়েছে যেগুলো সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যক। নিম্নে ঘুমের আগের রাতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমলের আলোচনা দেওয়া হলো।
পবিত্রতা অর্জন
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়া সুন্নত। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি রাতে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে ও অজু করে নিদ্রা যায় এবং রাতের গভীরে জেগে আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কোনো ধরনের কল্যাণ প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে সেটি দান করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪২)
দরজা বন্ধ করা ও পাত্র ঢাকা
ঘুমানোর আগে খাবারের ও অন্যান্য জিনিসপত্রের পাত্র ঢেকে রাখা চাই। না হয় তাতে ইঁদুর, তেলাপোকা বা অন্য কোনো পোকা ঢুকে নষ্ট করতে পারে। এতে নানা ধরনের জীবণু ছড়ানোর পাশাপাশি বড় কোনো রোগের সংক্রমণও হতে পারে।
জাবের থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,
‘(রাতে ঘুমানো আগে) তোমরা পাত্র ঢেকে দাও, পানির মশকের মুখ বেঁধে দাও, দরজাগুলো বন্ধ করে দাও, প্রদীপ নিভিয়ে দাও। কেননা, শয়তান মুখ বাঁধা মশক খুলে না, বন্ধ দরজাও খুলে না এবং পাত্রের ঢাকনাও উম্মুক্ত করে না। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি পাত্রের মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঢেকে রাখার জন্য কেবল একটি কাষ্ঠখণ্ড ছাড়া অন্য কিছু না-ও পায়, তাহলে সে যেন তাই করে। কারণ ইঁদুর ঘরের লোকজনসহ ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।’
(রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস : ১৬৫৪)
‘ব্ল্যাক ডেথ’ বৈশ্বিক ইতিহাসের বিখ্যাত ও মর্মন্তুদ ঘটনা। খাবারের মধ্যে ইঁদুরের ছড়ানোর মাধ্যমে এই ভাইরাসের সৃষ্টি। এতে প্রায় ১০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়। তাই হাদিসের বর্ণনা নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরের বাসন-পাত্র ইত্যাদি ঢেকে রাখা অপরিহার্য।
বাতি নিভিয়ে দেওয়া
ঘুমানোর আগে ঘুমের ঘরের সব ধরনের বাতি নিভিয়ে দেওয়া চাই। অনুরূপভাবে কয়েল ইত্যাদিও নিভিয়ে দেওয়া ভালো। কারণ এগুলোর কারণে অনেক সময় ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশের জন্যও ঘরে অন্ধকার আবহ তৈরি করে নেওয়া জরুরি।
ঘুমের সময় শরীর থেকে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে, যা প্রশান্তির ঘুমের সহায়ক। চিকিৎসাবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী এমনটা জানা গেছে। তারা আরো বলেছেন, মেলাটোনিন মাথায় পিনেয়াল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হওয়া এক বিশেষ ধরনের হরমোন— এটি মানুষের বুদ্ধি বাড়ায়। মাথার কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাছাড়া এই হরমোনটি ক্যান্সার ও আলঝেইমারস কমাতে সাহায্য করে। তাই ঘুমের সময়ে ঘর অন্ধকার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিছানাপত্র ঝেড়ে নেওয়া
রাতে ঘুমের আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন,
‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার জামা দিয়ে বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে তার অনুপস্থিতিতে বিছানার ওপর পীড়াদায়ক কোনো কিছু ছিল কি না। তারপর এই দোয়া পড়বে— হে আমার রব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব।’
(বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
সুরমা লাগানো
চোখে সুরমা লাগানো রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুরমা চোখের ছোঁয়াচে সব ধরনের রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে। চোখে ধুলো-বালি কিংবা ক্ষতিকর পদার্থ পড়লে তা নিঃসরণে কার্যকরী। দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে প্রতিবন্ধক জীবাণু রোধ করে। চোখের জ্বালাপোড়াও নিরাময় হয় এতে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে—
রাসুল (সা.)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রতি রাতে (ঘুমানোর আগে) তিনি ডান চোখে তিনবার এবং বাঁ চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন।’
(শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৪১)
ডান কাতে শোয়া
শোয়ার শুরুতে ডান কাত হয়ে শোয়া সুন্নত। তবে পরবর্তীতে সুবিধা মতো বাঁ দিকে কাত হওয়া যাবে। ইসলামে সব ভালো কাজে ডানকে প্রাধান্য দিতে বলেছে। তাই ঘুমের ক্ষেত্রেও ডান দিক থেকে শুরু করা উত্তম। চিকিৎসকদের মতে, ডান কাত হয়ে ঘুমালে আমাদের হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী ও ফুসফুস ইত্যাদির অবস্থান স্বাভাবিক থাকে। এছাড়াও বাঁ কাত হয়ে ঘুমানোর চেয়ে ডান কাতে শোয়ার উপকারিতা বেশি।
ঢাকা পোস্টের ইসলাম পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]