রমজানে দান-সদকার ফজিলত

রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস, সংযম ও ইবাদতের মাস। এই মাসে ইবাদতের মাধ্যমে যেমন অধিক সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি দান-সদকার প্রতিদানও পাওয়া যায় বহুগুণে। ইসলামে দান-সদকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসনীয় একটি ইবাদত। আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বান্দা তার নিজ সম্পদ থেকে দান-সদকা করে থাকে। রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এই মাসে অধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন এবং এই বিষয়ে সাহাবাদেরও উৎসাহিত করতেন।
রমজানে দান-সাদাকার গুরুত্ব ও ফজিলত
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
রমজান সংযমের মাস, এই মাসে একজন রোজাদার নিজেকে আত্মশুদ্ধির পথে পরিচালিত করে। এই মাসে দান-সাদাকা করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—
‘যারা দিন-রাত, প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহর পথে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। তাদের কোনো ভয় থাকবে না, আর তাদের কোনো দুঃখও ছুঁতে পারবে না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৪)
গুনাহ মোচন ও জান্নাত লাভের মাধ্যম
দানের মাধ্যমে গুনাহ মোচন হয় এবং জান্নাত লাভের রাস্তা সহজ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
‘নিশ্চয়ই দান-সদকা গুনাহকে এমনভাবে মিটিয়ে ফেলে, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।’ (তিরমিজি)
রিজিক বৃদ্ধি ও বরকত লাভ
দানের ফলে সম্পদের বরকত বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘দান করার ফলে সম্পদ কখনো কমে না, বরং বৃদ্ধি পায়।’ (মুসলিম)
রমজানে বেশি দান করলে আল্লাহ দুনিয়াতে রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং আখিরাতেও উত্তম প্রতিদান দেন।
আরও পড়ুন
রোজাদারকে ইফতার করানোর পুরস্কার
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার মতোই সওয়াব পাবে, তবে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছু কমানো হবে না।’ (তিরমিজি)
এই মাসে দরিদ্রদের জন্য ইফতার ও সাহরির ব্যবস্থা করলে বিশেষ সওয়াব হাসিল করা যায়।
রমজানে যেসব দান-সদকা করা যেতে পারে—
- জাকাত প্রদান করা; ধনীদের জন্য এটি ফরজ।
- গরিব ও এতিমদের সহায়তা করা–খাবার, পোশাক, ওষুধ প্রদান করা।
- মসজিদ ও মাদ্রাসায় দান করা।
- ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে অবদান রাখা।
- ইফতার ও সাহরির আয়োজন করা; বিশেষত অভাবীদের জন্য।
- কোরআন শরীফ, ইসলামিক বই ও জায়নামাজ বিতরণ করা।
- গোপনে দান করা; এটি সবচেয়ে উত্তম, কারণ এতে রিয়া (প্রদর্শন) থাকে না।
দান শুধুমাত্র সামাজিক কল্যাণ বা দয়ার বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদত, যা আত্মশুদ্ধি, নৈতিক উন্নতি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। তাই ইসলামে দানকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এটি ইবাদতের মর্যাদা লাভ করেছে।
রমজান মাস দান-সাদাকা করার সর্বোত্তম সময়। এই মাসে দান করলে গুনাহ মাফ হয়, রিজিক বাড়ে, দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি লাভ হয়। তাই আমাদের উচিত, এই বরকতময় মাসে অভাবীদের পাশে দাঁড়ানো এবং যত বেশি সম্ভব দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা করা।