যে ধরনের অক্ষমতায় রোজার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়া যায়

কোনো ব্যক্তি রোজা রাখতে না পারলে তার জন্য রোজার কাজা ও কাফফারা করার বিধান রয়েছে। আর কেউ একেবারে অক্ষম হলে তার জন্য ফিদইয়ার বিধান দেওয়া রয়েছে। ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে—
বিজ্ঞাপন
রোজা রাখতে অক্ষম বলতে শরীয়তের দৃষ্টিতে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা, মারাত্মক রোগ ইত্যাদি বোঝায়, যা থেকে আরোগ্য লাভ করা এবং রোজা রাখার শক্তি ফিরে পাওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়। এ রকম অক্ষম ব্যক্তি রোজা রাখার পরিবর্তে কাফফারা আদায় করবে।
যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের বিবেচনায় রোজা রাখতে অক্ষম হয় এবং পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সুস্থ হওয়ার পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে ফিদইয়া দেওয়া যাবে না।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
পক্ষান্তরে যদি আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে ফিদিয়া আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মাঝে কোনো তারতম্য নেই। সবাইকে ফিদিইয়া দিতে হবে। তবে দারিদ্রতার কারণে কেউ ফিদইয়া দিতে একেবারে অক্ষম হলে তওবা করবে।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তীতে কখনো সামর্থ্য হলে অবশ্যই ফিদইয়া আদায় করবে। প্রত্যেক রোজার ফিদইয়া হলো সদকাতুল ফিতরের সমপরিমাণ। অর্থাৎ, ১.৫ কেজি ৭৪ গ্রাম ৬৪০ মি.গ্রা. বা তার সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া যেতে পারে। একজন গরিবকে প্রতিদিন ১ ফিতরা পরিমাণ করে ৬০ দিন দিলেও আদায় হবে। ৬০ দিনের ফিতরা পরিমাণ একত্রে বা এক দিনে দিলে আদায় হবে না। (ফতোয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, ৫/৪৫৭)
রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ—
১. ইচ্ছা করে বমি করা। ২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা। ৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসব। ৪. ইসলাম ত্যাগ করা। ৫. রোজাদারকে জোর করে কিছু খাওয়ানো। ৬. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করানো।
৭. গ্লুকোজ, শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন নেওয়া।৮. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে গেছে ভেবে আরও কিছু খাওয়া। ৯. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করা।
১০. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেলা। ১১. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করানো। ১২. দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খাওয়া। ১৩. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার সময় ভেতরে পানি চলেগেলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)।
১৪. রাত অবশিষ্ট আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করা। ১৫. হস্তমৈথুন বা অন্য কোনোভাবে বীর্যপাত করা ১৬. শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোনো কারণে রক্ত বের হলে।
এই কারণগুলো ছাড়াও এমন কিছু কাজ আছে যা করলে রোজা ভঙ্গ হবে না; তবে রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে না, বরং রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে। রোজার পূর্ণ সওয়াব অর্জন করতে অন্যান্য আমল ঠিক রাখার পাশাপাশি অশ্লীল কাজ, পাপাচার, সুদ-ঘুষ, হারাম পানাহার, অন্যের হক নষ্ট করা, ওজনে কম দেওয়া সহ সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।