তাবলিগ জামাতের জনপ্রিয় কিতাব ফাজায়েলে আমাল রচিত হয়েছে যেভাবে

দাওয়াত ও তাবলিগ জামাতের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আলেম ও সাধারণ মুসলমানদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি কিতাব ফাজায়েলে আমাল। এই কিতাবটি মূলত পৃথক নয়টি মূল্যবান বইয়ের সমষ্টি। নয়টি বই-ই লিখেছেন শাইখুল হাদিস জাকারিয়া কান্ধলভি রহ.। নয়টি বই হলো—
১. ফাজায়েলে নামাজ। ২. ফাজায়েলে কোরআন মাজিদ। ৩. ফাজায়েলে রমজান। ৪. ফাজায়েলে হজ। ৫. ফাজায়েলে সাদাকাত। ৬. ফাজায়েলে জিকির। ৭. ফাজায়েলে দুরুদ শরিফ। ৮. ফাজায়েলে তাবলিগ ও ৯. হেকায়াতে সাহাবা।
কোনো পরিকল্পনা করে কিতাবসমূহ লেখা হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে লেখা হয়েছে। পরবর্তীতে তাবলিগের জিম্মাদারগণ দাওয়াতি কাজে বের হওয়া জামাতের সাথীদের দীনি তালিম ও তারবিয়তের জন্য কিতাবসমূহকে নির্বাচন করেন। এ জন্য প্রথম দিকে প্রকাশকগণ কিতাবসমূহের সমষ্টিকে ‘তাবলিগি নেসাব’ নামে প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে কিতাবসমূহের বিষয়বস্তু বিবেচনায় ফাজায়েলে আমাল নামে প্রকাশ করা হয়।
ফাজায়েলে কোরআন
১৩৪৮ হিজরির জিলহজ মাসের শুরুতে ফাজায়েলে কোরআন রচনা শুর করেন এবং জিলহজের ২৯ তারিখ রচনা সমাপ্ত করেন। এক মাসের কম সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কিতাবটি রচনা করেন। এই কিতাবটি রচনা করেন মাওলানা রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহি রহ.-এর অন্যতম খলিফা শাহ ইয়াসিন রহ.-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে।
ফাজায়েলে রমজান
প্রচলিত তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা ও নিজের চাচা মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর অনুরোধে ফাজায়েলে রমজান রচনা করেন শাইখুল হাদিস জাকারিয়া কান্ধলভি রহ.। এই কিতাবটি লিখেন ১৩৪৯ সনের রমজান মাসে। রমজানের ২৭ তারিখ রচনা সমাপ্ত হয়।
ফাজায়েলে তাবলিগ
এটিও হজরত ইলিয়াস রহ.-এর অনুরোধে লিপিবদ্ধ করেন। এর রচনা সমাপ্ত হয় ৫ সফর সোমবার রাতে, ১৩৫০ হিজরিতে। এটি রচনায় কিছুটা দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
হেকায়েতে সাহাবা
১৩৫৭ হিজরিতে আজরাডা যাওয়ার পথে মিরাটে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন শাইখুল হাদিস জাকারিয়া কান্ধলভি রহ. এবং নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ডাক্তাররা কয়েক মাস মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বললেন। এ দিকে শাহ আব্দুল কাদের রায়পুরী রহ. প্রায় চার বছর ধরে হেকায়েতে সাহাবা নামক একটি কিতাব লেখার অনুরোধ করে আসছিলেন। এই অসুস্থতা হজরত রায়পুরীর অনুরোধ পূরণের সুযোগ এনে দেয়। এই সময়ে হেকায়েতে সাহাবা রচনা করেন। ১৩৫৭ হিজরির শাওয়াল মাসে এর রচনা সমাপ্ত হয়।
ফাজায়েলে নামাজ
এটিও হজরত ইলিয়াস রহ.-এর অনুরোধে লেখা হয়। ১৩৫৮ হিজরির ৭ মুহাররম সোমবার রাতে এর রচনা সমাপ্ত হয়।
ফাজায়েলে জিকির
ফাজায়েলে জিকির বইটিও হজরত ইলিয়াস রহ.-এর অনুরোধে রচনা করেন তিনি। ২৬ শাওয়াল ১৩৫৮ হিজরির জুমারাতে এর রচনা সমাপ্ত হয়।
ফাজায়েলে হজ
হজরত মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি রহ.-এর পীড়াপীড়ি ও অনুরোধে এটি রচনা করেন। কিতাবটির রচনা ১৩৬৬ হিজরির ৩ শাওয়াল শুরু করেন এবং ১৩৬৭ হিজরির ১৪ জুমাদাল উলা শুক্রবার দিন সমাপ্ত করেন। ১৯৪৭ সনে দেশ বিভাগের সময় চার মাস নিজামুদ্দিন মারকাজে অবরুদ্ধ ছিলেন। এই সময়ে এটি রচনা করেন। মূল রচনাটি শাওয়াল মাসে শেষ হলেও পরবর্তীতে এতে কিছু ঘটনা যুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন
ফাজায়েলে সাদাকাত
তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর অনুরোধ ছিল ফাজায়েলে জাকাত ও ফাজায়েলে তেজারত নামে দুটি কিতাব লেখার। এর প্রেক্ষিতে শাইখুল হাদিস রহ. নিজামুদ্দিন মারকাজে থাকা অবস্থায় ফাজায়েলে সাদাকাত লিখতে আরম্ভ করেন এবং ১৩৬৮ হিজরির ২২ সফর সাহারানপুরে লেখা সমাপ্ত করেন।
ফাজায়েলে দুরুদ
ফাজায়েলে দুরুদ বইটি লিখেছিলেন শাহ ইয়াসিন রহ.-এর অনুরোধে। শাহ সাহেব ইন্তেকাল করেন ১৩৬০ হিজরির ৩০ শাওয়াল। কিন্তু তিনি অসিয়ত করে গিয়েছিলেন, আমার ইন্তেকালের পরেও মাওলানা মুহাম্মাদ জাকারিয়ার কাছে এই কিতাব রচনার আবেদন অব্যাহত রাখবে। শাইখুল হাদিস রহ. ১৩৮৪ হিজরির ২৫ রমজানে এর রচনা শুরু করেন এবং ১৩৮৪ হিজরির ৬ জিলহজ এর রচনা সমাপ্ত করেন।
দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আলেম ও সাধারণ মুসলমানদের কাছে এই কিতাবগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি রহ. বলেন, ‘এর দ্বারা ইলমি ও দীনি যে উপকার সাধিত হয়েছে তা বিবেচনায় নিলে এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, এই কিতাবসমূহ দ্বারা আল্লাহর হাজার হাজার পথহারা বান্দা বেলায়েতের স্তরে পৌঁছে গেছে।