তুরস্কে নির্বাসিত আসাদ বিরোধী সিরীয় আলেমের মৃত্যু
দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তুরস্কে নির্বাসিত সিরিয়ান আলেম শায়খ সারিয়া আব্দুল কারিম আল রিফায়ী ইন্তেকাল করেছেন। সোমবার ৭৭ বছর বয়সে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইন্তেকাল করেন তিনি। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে দুই মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
শায়খ সারিয়া আব্দুল কারিম আল রিফায়ীর ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠন হামাস। তাকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থক উল্লেখ করে হামাস বলেছে, আল্লাহ তার ওপর রহমত বর্ষণ করুন। শায়খ সারিয়া তার বাবা শায়খ আব্দুল করিম আল রিফায়ীর তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছিলেন। তার জীবনে তার বাবার লালন-পালনের প্রভাব ছিল। তিনি একজন ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ, সমাজ সেবী ও জনহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর আল ফাতাহ মসজিদে তার জানাজার নামাজ আদায় করা হবে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তার ছেলে আম্মার আল রিফায়ী ফেসবুকে জানিয়েছেন, এই দিনটিরই ভয় করছিলাম, আমার বাবা আল্লাহ তায়ালা জিম্মায়।
সিরীয় আলেম সারিয়া আল রিফায়ী কে?
শায়খ সারিয়া আব্দুল কারিম আল রিফায়ী ১৯৪৮ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শায়খ আব্দুল কারিম আল রিফায়ী সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেমদের একজন। তিনি বাবার কাছে বেড়ে উঠেছেন।
তিনি ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দামেস্কে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উসুলদ্ব দ্বীন ও তাফসির বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।
তিনি কয়েক বছর সিরিয়ান আরব প্রজাতন্ত্রের সাবেক মুফতি শায়খ আবি ইসার আবিদিনের কাছে থেকে আরবি ও হানাফী ফিকাহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। মিশরে অধ্যয়নের সময় তার শিক্ষক ছিলেন শায়খ আবদুল হালিম মাহমুদ, শায়খ মুহম্মদ মাহমুদ হিজাজি এবং শায়খ আবদুল ওয়াহাব আবদুল লতিফ প্রমুখ।
আরও পড়ুন
কর্ম জীবন
দামেস্কে ফিরে আসার পর শায়খ সারিয়া আল-রিফাই ইসলামিক আইন বিষয়ে কাজ করেন। একইসঙ্গে দাতব্য ও সামাজিক কাজে অংশ নেন এবং তিনি দামেস্ক শহরের জায়েদ বিন সাবিত মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি হিফজুন্নুমা নামক একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি সিরিয়ার অন্যতম দাতব্য সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
এই সংস্থার একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম ছিল। যারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করতো এবং দরিদ্র ও সুস্থদের মাঝে বন্টন করতো। পরবর্তীতে এর কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০০৯ সালের রমজানে এই দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে হাজার হাজার মানুষকে রমজানের ইফতার প্রদান করা হয়।
শায়খ সারিয়া আল-রিফায়ী কোরআনের চর্চায় জায়েদ বিন সাবিত ইনস্টিটিউট পুনরায় চালু করেছিলেন। এটি তার বাবা শায়খ আব্দুল করিম আল-রিফায়ী শুরু করেছিলেন।
দাতব্য, সামাজিক সেবা এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি, তিনি সিরিয়ান ইসলামিক কাউন্সিল এবং লিগ অফ লেভান্ট স্কলারের সদস্য ছিলেন।
সারিয়া আল-রিফায়ীর রাজনৈতিক অবস্থান
সারিয়া আল-রিফায়ীরসবসময় সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ পরিবারের দমন-পীড়নের বিরোধী ছিলেন। বাশার আল আসাদের বাবা হাফেজ আল-আসাদের শাসনামলে জুলুম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এক কারণে ১৯৮০ থেকে ১০৯৩ সাল পর্যন্ত তাকে সিরিয়ার বাইরে অবস্থান করতে হয়েছিল।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। আসাদ পরিবারের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সিরিয়ার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন তিনি।
২০১১ সালের আগস্টে রমজান মাসে সিরিয়ার হাউলা শহরে আসাদ বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার প্রথম সমালোচকদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ফজর নামাজের পর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে এক খুতবায় তিনি বলেছিলেন, সিরিয়ার জনগণের ওপর জুলুম বন্ধ না করলে মানুষের প্রতিবাদ বন্ধ হবে না। হাউলা গণহত্যার পর দামেস্কে আসাদ বিরোধী সফল ধর্মঘট পালনে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিপ্লবের সমর্থন এবং আসাদ সরকারের বিরোধী অবস্থানের কারণে ২০১২ সালে সিরিয়া ত্যাগ করেন তিনি।
সূত্র : আল জাজিরা মুবাশির