কোরআনে যে সাহাবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে
প্রাথমিক যুগে যখন ইসলাম বিরোধিরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নেমেছিল, তখন সাহাবিরা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত রাখতে পৃথিবীর সব পরাশক্তি মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিলেন। তারা ইসলামের জন্য সর্বস্ব বিলীন করেছিলেন।
সাহাবিদের সঙ্গে ইসলামের বিভিন্ন বিধান, হাদিস বর্ণনা ও কোরআনের আয়াত নাজিলের ঘটনা উৎপ্রোতভাবে জড়িত। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে কোরআনে সাহাবিদের গুণাগুনের প্রশংসা ও তাদের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন আল্লাহ তায়ালা। অনেকের প্রশংসাও করেছেন তিনি। তবে কোরআনে সরাসরি নাম উল্লেখ করা হয়েছে এমন সাহাবি শুধুমাত্র একজন। তিনি হলেন রাসূল সা.-এর পালকপুত্র জায়েদ বিন হারিসা রা.।
বিশেষ একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তার নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেক্ষাপটটি হলো—
জায়েদ বিন হারেসা রা. প্রথমে মহানবী (সা.)-এর দাস ছিলেন। রাসূল সা. তাকে মুক্ত করে নিজের পালকপুত্র হিসেবে লালনপালন করেন। পালক পুত্র জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে রাসূল সা.-এর ফাফাতো বোন জয়নব (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল।
চতুর্থ হিজরিতে তাদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ১০ দিনার, যা প্রায় চার ভরি স্বর্ণ পরিমাণ ও ৬০ দিরহাম বা ১৮ তোলা রৌপ্য পরিমাণ। তা ছাড়া দেয়া হয়েছিল একটি ভারবাহী জন্তু, কিছু গৃহস্থালির আসবাবপত্র, আনুমানিক ২৫ সের আটা ও পাঁচ সের খেজুর। মহানবী (স.) নিজের পক্ষ থেকে তা প্রদান করেছিলেন। (ইবনে কাসির)
আরও পড়ুন
জায়েদ ইবনে হারেসার সঙ্গে জয়নবের বিয়ে হলেও তাদের দাম্পত্য জীবন খুবটা মনোরম ছিল না। জায়েদ প্রাথমিক জীবনে দাস থাকায় তাকে মনে প্রাণে মেনে নিতে পারতেন না জয়নব।
তাদের মন-মানসিকতায় পার্থক্য ছিল, স্ত্রীর মনে বংশ-মর্যাদা ও আভিজাত্য বাসা বেঁধে ছিল। ফলে তাঁদের আপোসে কলহ লেগেই থাকত, যা যায়েদ (রাঃ) মাঝে মাঝে নবী (সাঃ)-এর নিকট প্রকাশ করতেন এবং ত্বালাক দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। কিন্তু নবী (সাঃ) তাঁকে ত্বালাক দিতে নিষেধ করতেন ও কোন রকম ভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য বলতেন।
এ সময় আল্লাহ তায়ালা নবী (সাঃ)-কে ওহীর মাধ্যমে এই ভবিষ্যদ্বাণী করে দিয়েছিলেন যে, যায়েদের পক্ষ থেকে তালাক হবে এবং তারপর জয়নাবের সাথে আপনার বিয়ে হবে।
পালকপুত্রের স্ত্রীর সঙ্গে রাসূল সা.-এর বিয়ের মাধ্যমে জাহেলি যুগের বিশেষ একটি বিধান রহিত করেছেন আল্লাহ তায়ালা। আর তাহলো, জাহেলি যুগে পালক পুত্রকে নিজের ঔরসজাত পুত্রের মতো মনে করা হতো। নিজের সন্তানের মতো পালকপুত্রকের সম্পদের ভাগিদার মনে করতো।
এই ঘটনার মাধ্যমে জাহেলিয়াতের পোষ্যপুত্র রাখার প্রথার উপর জোর কুঠারাঘাত হেনে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে পোষ্যপুত্র আপন পুত্রের মত নয় এবং তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে বিবাহ করা বৈধ, যার কাছে সে প্রতিপালিত হয়েছে তার সম্পদে তার কোনো অংশীদারিত্ব নেই ।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
وَ اِذۡ تَقُوۡلُ لِلَّذِیۡۤ اَنۡعَمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ وَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡهِ اَمۡسِكۡ عَلَیۡكَ زَوۡجَكَ وَ اتَّقِ اللّٰهَ وَ تُخۡفِیۡ فِیۡ نَفۡسِكَ مَا اللّٰهُ مُبۡدِیۡهِ وَ تَخۡشَی النَّاسَ ۚ وَ اللّٰهُ اَحَقُّ اَنۡ تَخۡشٰهُ ؕ فَلَمَّا قَضٰی زَیۡدٌ مِّنۡهَا وَطَرًا زَوَّجۡنٰكَهَا لِكَیۡ لَا یَكُوۡنَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ حَرَجٌ فِیۡۤ اَزۡوَاجِ اَدۡعِیَآئِهِمۡ اِذَا قَضَوۡا مِنۡهُنَّ وَطَرًا ؕ وَ كَانَ اَمۡرُ اللّٰهِ مَفۡعُوۡلًا
‘আর স্মরণ করো, আল্লাহ যার ওপর নেয়ামত দিয়েছিলেন এবং তুমিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলে, তুমি যখন তাকে বলেছিলে ‘তোমার স্ত্রীকে নিজের কাছে রেখে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো’। আর তুমি অন্তরে যা গোপন রাখছ আল্লাহ তা প্রকাশকারী এবং তুমি মানুষকে ভয় করছ অথচ আল্লাহই অধিকতর হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে; তারপর জায়েদ যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম, যাতে পালক পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিনদের কোনো অসুবিধা না থাকে; যখন তারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়ে থাকে।’ (সূরা আহজাব, আয়াত : ৩৭)