রাত কাটুক ইবাদতে, আল্লাহর ভালোবাসায়
মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযুক্ত সময় রাত। দিনের ব্যস্ততা শেষে যখন পৃথিবী শান্ত হয়, তখন একজন মুমিন বান্দা তার রবের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভুল-ত্রুটি স্বীকার করে এবং তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার আশায় ইবাদতে মশগুল হয়। আল্লাহর ভালোবাসা মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য। কোরআন ও হাদিসে রাতের ইবাদতকে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোরআনের আলোকে রাতের ইবাদতের গুরুত্ব
রাতের ইবাদত মানুষের অন্তরের প্রশান্তি আনে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই রাত্রিজাগরণ প্রবৃত্তি দলনে অধিক সহায়ক, এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অধিক অনুকূল। (সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, রাতের সময় মনোযোগ গভীর থাকে, চিন্তা বিশুদ্ধ হয়। এ সময় ইবাদত অন্তরকে শুদ্ধ করে এবং বান্দার আত্মাকে আল্লাহর কাছে আরও নিবেদিত করে।
আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার
রাতের ইবাদত বান্দাকে বিশেষ মর্যাদা দান করে। আল্লাহ বলেন, আর রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদের জন্য নির্ধারণ করো; এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। হয়তো তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত এক অবস্থানে দাঁড় করাবেন। (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)
আরও পড়ুন
রাতের ইবাদত আমাদেরকে এমন এক উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করে যা দুনিয়ার জীবনে পাওয়া সম্ভব নয়। এটি আখিরাতের সাফল্যের পথ উন্মুক্ত করে।
আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারের ঘোষণা
রাত জেগে যারা ইবাদত করে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন পুরস্কার দান করবেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, তারা (মুমিনরা) রাতে তাদের বিছানা থেকে দূরে থাকে; তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় এবং আশার সাথে ডাকে এবং আমি তাদেরকে দেওয়া জীবিকা থেকে ব্যয় করে। (সূরা সাজদাহ, আয়াত : ১৬)
রাতের ইবাদত শুধু আত্মার পরিশুদ্ধি নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশাল প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি।
হাদিসে রাতের ইবাদতের ফজিলত
রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, রাতের নামাজের মধ্যে সর্বোত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৩১, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৮)
রাতের নামাজে বান্দা আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। এটি বান্দার দোয়া কবুল এবং গুনাহ মাফের অনন্য সুযোগ।
রাতের শেষ তৃতীয়াংশ
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমাদের রব প্রতি রাতে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে এবং বলেন, কে আছে যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৮)
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহর কাছে দোয়া করার গুরুত্ব এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
প্রিয় নবীর (সা.) এর অভ্যাস
হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, নবী করিম সা. এত বেশি রাতের নামাজ পড়তেন যে তাঁর পা ফেটে যেত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার তো পূর্ব ও পরবর্তী সব পাপ ক্ষমা করা হয়েছে, তবুও কেন এত কষ্ট করেন? তিনি বললেন, আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পারি না? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৩৭)
রাতের ইবাদত করার উপায়
১. নিয়ত করা : ঘুমানোর আগে ইবাদতের জন্য মন স্থির করা।
২. পরিমিত ঘুম : রাতের শেষ অংশে জেগে ওঠার জন্য শরীরকে প্রস্তুত রাখা।
৩. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া : সর্বোত্তম ইবাদত।
৪. কোরআন তিলাওয়াত : গভীর মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর বাণী পড়া।
৫. দোয়া ও ইস্তেগফার : আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন ও গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া।
মোটকথা, রাতের ইবাদত বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। রাতের নীরবতা ও একাগ্রতার মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসা অনুভব করা যায়, যা বান্দার আত্মাকে প্রশান্তি ও পূর্ণতা দেয়। রাতের ইবাদতই সেই পথ যা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয় এবং তাঁর চিরস্থায়ী ভালোবাসায় আবদ্ধ করে।
এনটি/এমআইকে