উদযাপনের আগে মুসলিমদের যা ভাবা জরুরি
শেষ হচ্ছে পুরনো বছর, শুরু হচ্ছে নতুন বছর। নতুন বছরকে বরণের উম্মাদনায় বিভোর সবাই। কীভাবে উদযাপন করা হবে নতুন বছর তা নিয়ে ভাবছেন অনেকে। বছরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে উদযাপনের নেশায় মত্ত না হয়ে একজন মুমিনের উচিত জীবন সম্পর্কে ভাবা, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের ভালোমন্দের হিসাব নেওয়া। কতটা ভালো বা মন্দ করতে পারলাম পরকালের জন্য— তা নিয়ে ভাবা উচিত।
মানুষের জীবনের স্থায়িত্বকাল খুবই অল্প। নির্ধারিত সময়ের পর পরপারে পাড়ি জমাতে হবে। সেই জীবনই আসল জীবন। সেখানে নতুন বছর বা পেছনে ফেলা আসার মতো কিছু থাকবে না। পরকালের প্রতিটি মুহূর্তই হবে অনন্ত এবং নতুন। পরকালের জীবনকে কোরআন ও হাদিসের ভাষায় অনন্ত জীবন বলা হয়েছে। এই জীবনের শুরু হবে, শেষ হবে না।
বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা পেশ করো, তা পানির মতো, যা আমি বর্ষণ করি আকাশ থেকে। যদ্দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়। অতঃপর তা শুকিয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৪৫)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জেনে রাখো, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক শ্লাঘা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছু নয়। তার উপমা বৃষ্টি, যদ্দ্বারা উত্পন্ন শস্যসম্ভার কৃষকদের চমত্কৃত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২০)
আরও পড়ুন
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার জীবনোপকরণ বর্ধিত করেন এবং সংকুচিত করেন। কিন্তু তারা পার্থিব জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র।’ (সুরা রা’দ, আয়াত : ২৬)
পৃথিবীর জীবনের আমল-ইবাদতের ওপর ভিত্তি করেই পরকালের জীবনের চূড়ান্ত স্থান নির্ধারিত হবে। যারা পৃথিবীতে আল্লাহর আদেশ ও ভালোমন্দ মেনে চলবে তারাই পাবে চূড়ান্ত স্বস্তি ও সুখের জীবন। বিপরীতে যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করবে, পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাশে মত্ত থেকে পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য ভুলে যাবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের লেলিহান শিখা। এই লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে পৃথিবীতে পাপ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
নতুন বছর উদযাপনের নামে বর্তমানে যা কিছু হয়, এর বেশির ভাগই পাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর কারণে মানুষের পরকালের জীবনে পাপের পাল্লা ভারী হয়। যা আমলনামাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। তাই উদযাপনের উম্মাদনায় মেতে উঠার আগে সবার ভেবে দেখা উচিত, কী করছি, কী করা উচিত ছিল? কীভাবে পরকালের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। ইসলাম নিরস কোনো জীবনযাপনের কথা বলে না। তবে সবকিছুতে পরিমিতি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মাত্রাতিরিক্ত বা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের কোনো কিছুই কল্যাণ বয়ে আনে না। বছরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এ বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত সবার।
এমন ভাবনাই মানুষকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য অনুধাবনে সাহায্য করবে। ওমর রা. বলেছেন, (আল্লাহ) তোমাদের হিসাব নেয়ার আগেই তোমরা তোমাদের নিজেদের হিসাব নাও। এবং কিয়ামতের দিনের মহা প্রদর্শনীর পূর্বে নেক আমল দিয়ে নিজেদেরকে সুসজ্জিত কর।