আমল, ইবাদতে মনোযোগী হতে নতুন বছরে পরিকল্পনা সাজাবেন যেভাবে
নতুন বছর মানে নতুন আশা, নতুন পরিকল্পনা, জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। মুমিনের জীবন প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই আমাদের উচিত এই সুযোগকে কাজে লাগানো। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করা।
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে নামাজ, রোজাসহ ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো কীভাবে পালন করতে হবে, দৈনন্দিন কতটুকু কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে, নফল নামাজ কয় রাকাত পড়তে হবে, প্রতি মাসে নফল রোজা কয়টা রাখতে পারি, অন্যের সহায়তা কীভাবে করতে পারি, দান-সদকা কীভাবে বাড়াতে পারি ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা করা। একইসঙ্গে নিজের মন্দ স্বভাব ছাড়ার পরিকল্পনাও করতে হবে। গতকালের চেয়ে আগামীকাল বেশি উপকারী ও ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করতে হবে।
হজরত ইমাম শাফিঈ রহ. বলেছেন, সময় হলো তরবারি তুমি যদি তাকে না কাটো তাহলে সে তোমাকে কেটে ফেলবে। তিনি আরও বলেছেন, তুমি তোমার ও প্রবৃত্তিকে ভালো কাজে ডুবিয়ে রেখো, নইলে সে তোমাকে মন্দ কাজে ঢুকিয়ে রাখবে।
প্রতিটি নতুন বছর আমাদের জন্য একটি নতুন সুযোগ। এই সময়টি অতীতের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে আল্লাহর পথে নতুন করে চলার সংকল্প গ্রহণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। কোরআনে বলা হয়েছে, 'আমি জ্বিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি' (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত : ৫৬)। তাই নতুন বছরের শুরুতে আমল ও ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হতে নিতে হবে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন
ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তোলা
ইবাদত আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার প্রধান উপায়। নামাজ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।(সূরা আঙ্কাবূত, আয়াত : ৪৫)। তাই নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা নতুন বছরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
কোরআন তিলাওয়াত
কোরআন হলো আমাদের জীবন চলার নির্দেশিকা। নতুন বছরে কোরআন তিলাওয়াত এবং এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করতে হবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায় (সহিহ বুখারি)। প্রতিদিন কিছু সময় নির্ধারণ করে কোরআন তিলাওয়াত ও তাফসির অধ্যয়নের পরিকল্পনা নিতে হবে।
সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন
নবী করিম (সা.)-এর সুন্নাহ আমাদের জন্য আদর্শ। নতুন বছরে সুন্নাহর ওপর আমল করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকতে হবে। যেমন, বেশি বেশি দোয়া করা, সকালে ও রাতে দোয়া পড়া এবং সুন্নাহ মোতাবেক জীবনযাপন করা।
দুনিয়া ও আখিরাতের কাজে ভারসাম্য
আমাদের জীবনের লক্ষ্য শুধুমাত্র দুনিয়া অর্জন নয়। আখিরাতের প্রস্তুতিও অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তুমি আখিরাতে (স্থায়ী সুখভোগের) আবাস অনুসন্ধান কর, আর দুনিয়ায় তোমার অংশের কথা ভুলে যেও না, (মানুষের) কল্যাণ সাধন কর, যেমন আল্লাহ তোমার কল্যাণ করেছেন, দেশে বিপর্যয় সৃষ্টির কামনা কর না, নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। (সূরা কাসাস, আয়াত : ৭৭) সুতরাং, এই বছরে আমরা দুনিয়ার কাজের সঙ্গে সঙ্গে আখিরাতের জন্যও আমল করব।
সময়ের সঠিক ব্যবহার
ইবাদতের প্রতি মনোযোগ দিতে হলে সময়ের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুটি নেয়ামত এমন আছে যার ব্যাপারে বেশিরভাগ লোক ধোঁকায় নিপতিত : সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১২) সময় নষ্ট না করে প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো আমাদের জীবনের অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : তরুণ আলেম