তাবলীগের সংঘাত, হাফেজদের বিশ্বজয়, ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত যত ঘটনা
সময়ের নিয়মেই শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ২০২৪। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালও ছিল ঘটনাবহুল। আন্দোলন, অস্থিরতা, অভ্যুত্থানের নতুন কিছু স্মৃতি যুক্ত হয়েছে এ বছর। মুক্তির স্বাদ, বিজয় রক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ সময়কে করেছে আরও কঠিন। আন্দোলন-অভ্যুত্থানের বছরে দেশের ইসলামী অঙ্গনের বেশ কিছু ঘটনাও ছিল আলোচিত। কোনোটা স্বস্তির, আবার কোনো ঘটনা বিব্রতকর। কিছু ঘটনা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে।
২০২৪ সালে ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত ঘটনা প্রবাহ স্মৃতির অ্যালবামে যুক্ত করতে সালতামামির এই আয়োজন—
বছরজুড়ে আন্তজার্তিক কোরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজদের বিশ্বজয়
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক কোরআন ও কিরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছেন একাধিক কোরআনের হাফেজ। অনেকেই সরাসরি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, কেউ কেউ ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল কোরআনের হাফেজদের জয়রথ। সর্বশেষ ডিসেম্বরেও বিজয়ী হয়েছে দুইজন কোরআনের হাফেজ।
এক নারীসহ ১৫জন বিশ্বজয়ী কোরআনের হাফেজের তালিকায় রয়েছেন রাজধানীর মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামীর দুই হাফেজ, হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ও হাফেজ আনাস মাহফুজ।
এছাড়াও বিজয়ী হয়েছেন রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষার্থী হাফেজ বশির আহমাদ ও হাফেজ আনাস বিন আতিক।
আরও বিজয়ী হয়েছেন তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহর দুই শিক্ষাথী হাফেজ মুশফিকুর রহমান ও হাফেজ হুজাইফা।
তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহর আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এই তালিকায় হাফেজ সাদিকুর রহমান, হাফেজ জাকারিয়া, হাফেজ আকমাল আহমাদের নাম রয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে মিশরে কিরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন হাফেজ তানভির আহমাদ, আবুধাবীতে হদর তিলাওয়াতে বিজয়ী হয়েছেন হাফেজ আম্মার বিন মাসুম।
এই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী আরও দুইজন হাফেজ হলেন হাফেজ আবু রায়হান ও হাফেজ মাহমুদুল হাসান। কিরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন কারি আবু জর গিফারী।
তরুণ হাফেজদের বাইরেও এ বছর কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন নারী হাফেজ হুমাইরা মাসউদ।
আরও পড়ুন
দেশের ইতিহাসে প্রথম আলেম উপদেষ্টা
২০২৪ সালে অন্যতম আকর্ষণীয় ঘটনা ছিল স্বাধীনতার পর দেশের সরকার ব্যবস্থায় প্রথম কোনো আলেম উপদেষ্টার নিয়োগ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের প্রতিনিধি রাখা হয়। উপদেষ্টা তালিকায় রাখা হয়েছে দেশের শ্রদ্ধাভাজন আলেম মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে।
আ ফ ম খালিদ হোসেন ইসলামি অঙ্গনে তুমুল জনপ্রিয়। আ ফ ম খালিদ হোসেনের মূল নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বিশ্ব মুসলীম লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নালসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে আ ফ ম খালিদ হোসেনের দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০ টি। এছাড়াও তিনি ৪টি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ
২০২৪ সালের দুঃখজন একটি ঘটনা ছিল বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মাঝে সংর্ঘষ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত খতিব মাওলানা রুহুল আমিনকে ঘিরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বেশ কিছুদিন অনুস্থিত ছিলেন খতিব মাওলানা রুহুল আমিন। অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটিতে ছিলেন জানিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমে জুমা পড়াতে আসেন।
তবে সেদিন পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী জুমা পড়ানোর দায়িত্ব ছিল ড. আবু সালেহ আহম্মেদ পাটোয়ারীর। খতিব রুহুল আমিন জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদে এলে মুসল্লিরা তার পেছনে নামাজ পড়তে অস্বীকৃতি জানান।
এ সময় খতিব জটিলতায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন মুসল্লি ও সাবেক খতিবের সমর্থকরা। এ সময় মসজিদের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়। দরজা জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব
সেপ্টেম্বরে বায়তুল মোকাররমে খতিব নিয়ে সংঘর্ষ, জটিলতার পর অক্টোবরে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দেশের ইসলামী অঙ্গনের পরিচিত মুখ মাওলানা আবদুল মালেককে।
এর আগে আন্তর্জাতিক ও দেশের ইসলামী অঙ্গনে পরিচিত থাকলেও খতিব হিসেবে নিয়োগের পর দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন বিনয়ী ও শ্রদ্ধাভাজন এই আলেম।
মুফতি আবদুল মালেক দেশ-বিদেশের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামিক স্টাডিজ, হাদিস ও ফিকহের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। বিশ্বখ্যাত মুফতি বিচারপতি তাকী ওসমানী তার ওস্তাদ। আরব বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি পণ্ডিত ও সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দীন অনুষদের অধ্যাপক শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর (রহ.) অধীনে তিনি দুই বছর হাদিস ও ইসলামি আইন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা করেন।
আবদুল মালেক মক্কা, মদিনা, পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক সফর করেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা
জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন আখ্যান। এতে অন্য সবার মতো স্বতঃর্স্ফূত অংশগ্রহণ ছিল দেশের মাদরাসার শিক্ষার্থীদের। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজধানীর প্রায় সব মিছিলে তাদের সরব উপস্থিতি ছিল। আন্দোলনের সময় মাদরাসার ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করে কওমি শিক্ষার্থী ও আলেমদের সংগঠন ‘সাধারণ আলেম সমাজ’।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্বৈরাচার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্গ গড়তে সাহায্য করেন মাদরাসার ছাত্র ও আলেম সমাজ। এই আন্দোলনে প্রায় ৭০ জনের মতো মাদরাসা শিক্ষার্থী শহিদ হন।
বিভিন্ন মামলায় মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেমদের জামিন
শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে বিভিন্ন সময় দেশের আলেমদের ওপর নিপীড়ন ও জেল, জুলুমের ঘটনা ঘটেছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে বন্দি করা হয়। দুই, তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন অনেকেই। এই তালিকায় মাওলানা মামুনুল হকের নাম ছিল শীর্ষে।
২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মাওলানা মামুনুল হক। তিন বছর পর ২০২৪ সালের মে মাসে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর আরও একাধিক আলেম কারাগার থেকে মুক্ত হন।
তাবলিগের শূরায়ে নেজামপন্থিদের ইসলামী মহাসম্মেলন
মাওলানা সাদের বিতর্কিত অবস্থানকে ঘিরে ২০১৭ সাল থেকে তাবলিগ জামাতের মাঝে বিভাজন দেখা দেয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বিভাজন দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। দ্বন্দ্বের পর থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ইজতেমা করছেন তাবলীগের একাংশ শুরায়ে নেজাম, যাদের সঙ্গে মাওলানা জোবায়েরসহ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমগণ রয়েছেন।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করে আসছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। তারা ২০২৫ সালের প্রথম পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য এবং মাওলানা সাদকে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।
বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমগণ এবং শুরায়ে নেজাম ইসলামি মহাসম্মেলনের ঘোষণা দেন ৫ নভেম্বর। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দানে আয়োজিত ওই সম্মেলনে মাওলানা সাদকে আসতে না দেয়া, সাদ অনুসারীদের পৃথক পর্ব না রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।
ইজতেমার মাঠে সংঘাত
২০২৪ সালে দুঃখজন আরেকটি ঘটনা ছিল বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলিগের সাথীদের মাঝে সংঘাত। দিল্লির নিজামুদ্দীনের মাওলানা সাদ অনুসারী ও শূরায়ে নিজাম (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) এর অনুসারীদের মাঝে সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
এতে আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করা শূরায়ে নিজামপন্থিদের (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) ওপর গভীর রাতে মাওলানা সাদ অনুসারীদের অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠে। তবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের পক্ষ থেকে শূরায়ে নিজামপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রথমে ইটপাটকেল ছোঁড়ার অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ৩ জন নিহতের সংবাদ পাওয়া যায়।
সংঘাতের ঘটনায় শূরায়ে নিজামপন্থিদের পক্ষ থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাদপন্থী নেতা মাওলানা মুয়াজ বিন নূর।
৪ বছর পর মিজানুর রহমান আজহারীর দেশ ও মাহফিলে ফেরা
২০২৪ সালে আলোচিত আরেকটি ঘটনা ছিল সাড়ে চার বছর পর মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর দেশে ফেরার ঘটনা। পারিপার্শ্বিক কারণ ও গবেষণার কাজের জন্য ২০২০ সালে দেশ ছাড়লেও আওয়ামী দুঃশাসনেরকালে তাকে আর দেশে ফিরতে দেখা যায়নি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে ২ অক্টোরব দেশে ফেরেন তিনি। এক সপ্তাহ দেশে থেকে আবারো মালয়েশিয়ান যান। এবার ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে মাহফিলে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে মাহফিলে অংশ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের পেকুয়ায় এক মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বয়ান করেন তিনি। রাত সাড়ে ৯টায় মঞ্চে ওঠেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। ৯টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ১০টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা বয়ান করেন তিনি। মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হওয়ায় অতিরিক্ত মানুষের চাপে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেটসেবা কিছুটা ব্যহত হয়।
মাহফিলে বক্তাদের অসংযত বক্তব্য
২০২৪ সালে আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনার তালিকায় উঠে এসেছে মাহফিলের মঞ্চে বক্তাদের অসংযত বক্তব্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাহফিলের মঞ্চে বক্তাদের বক্তব্যে বরাবরই অসংযত বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। যা ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিব্রত করেছে। এর কারণে মাহফিলের ভাবগাম্ভীর্যও ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
এ বছর মাহফিলের মঞ্চে সিনেমার নায়িকার নাম উচ্চারণ করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন বক্তা আমির হামজা। সর্বশেষ ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। মাহফিলের মঞ্চে পুলিশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ইসলামী বক্তা তাহেরীও। পরবর্তীতে এক মাহফিলে পুলিশের আগমনের কারণে তার পালিয়ে যাওয়ার সংবাদও এসেছিল গণমাধ্যমে।
হজের খরচ ও হাজীদের মৃত্যু
২০২৪ সালে মাত্রাতিরিক্ত হজের খরচের বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। কোটা খালি রেখে শেষ হয় এ বছরের হজের নিবন্ধন। হজের সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে অধিক সংখ্যায় হজযাত্রীর মৃত্যু ঘটে এ বছর। এবার হজে ৬৫ জন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি হজের খরচ কমানোর জন্য দুটির বদলে তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন খাবার খরচ ছাড়াই।
সরকারি এ হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানায় বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। তাদের দাবি, হজের খরচ কমেনি, বরং বেড়েছে। তবে হজ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সৌদি রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়ায় হজ খরচ বেশি একটা কমানো যায়নি।
এছাড়া, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অব এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হাব)-এর কমিটি ভেঙে দেয়া হয় দুর্নীতির অভিযোগে। এরপর হাব দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হাবে সরকার থেকে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটির একাংশ। এরপর বেসরকারি হজ প্যাকেজ নিয়ে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা দিতেও দেখা যায়।
বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা
আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মানুষজন হতাহতও হন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইভেন্ট খুলেও মাজার ভাঙার আহ্বান জানাতে দেখা যায়।
এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজারে হামলার ঘটনা এবং সিলেটের শাহপরান মাজারে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার ঘটনা বেশি আলোচিত ছিল। গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার ভাঙার জন্য ফেসবুকে প্রচারিত একটি ইভেন্ট দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ইসলামী বইমেলা
২০২৪ সালে অন্যতম আলোচিত ও নজরকাড়া বিষয় ছিল এবারের ইসলামী বইমেলা। প্রতি বছর রবিউল আওয়াল মাসে ইসলামী বইমেলা সংঘটিত হলেও এবার কিছুটা দেরিতে হয়েছিল ইসলামী বইমেলা। এবার ইসলামী বইমেলা হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন ইসলামী বইমেলা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় প্রতিবাদ জানায় ইসলামী প্রকাশনীগুলো।
এর প্রেক্ষিতে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গীকে সাজানো হয় বইমেলা। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের পরিবর্তে বায়তুল মোকাররমের পূর্ব চত্বরে সাজানো হয় ইসলামী বইমেলার পূর্ণ আয়োজন। দক্ষিণ গেটে রাখা হয় হকারদের প্রকাশনীগুলো।
এবারের ইসলামী বইমেলা সবার দৃষ্টি আকষর্ণ করতে সক্ষম হয়। এবারের মেলায় মোট ১৫১টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ, তাফসীর, হাদিসগ্রন্থসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক বিভিন্ন বই ছিল মেলায়। এছাড়াও মেলায় প্রকাশিত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে একাধিক ম্যাগাজিন।
জুলাই বিপ্লবে হতাহত ও ফেনীর বন্যার্তদের পাশে আস-সুন্নাহ
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় ফেনী জেলা। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ফেনীতে ৭১ কোটি টাকার পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। ৪২ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের চিকিৎসাসেবায় এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন পরবর্তীতে আরও ৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।