অজুর ফরজ কী কী?
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাতের আগে আমাদের অজুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অজু ছাড়া নামাজ হয় না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্যে দাড়াও, তখন স্বীয় মুখমন্ডল দুই হাত ও কনুই পর্যন্ত পরিষ্কার করো, মাথা মসেহ করো এবং গিটসহ দুই পা পরিষ্কার করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০৬)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার অজু নেই, তার নামাজ হবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৮)
পবিত্র কোরআনে নির্দেশিত আয়াত এবং রাসুল (সা.)-এর হাদিস অনুযায়ী অজুর চারটি ফরজ নির্ধারিত হয়েছে। এ ফরজগুলো হলো-
মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা
অজুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো— মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা। দুই হাতে পানি নিয়ে মুখমণ্ডল ধোয়ার মাধ্যমে মুখের সব জীবাণু দূর হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত মুখে পানি দিতে থাকলে রোগজীবাণু থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি অজু করলেন এবং তার মুখমণ্ডল ধুলেন। এক আঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। অতঃপর আর এক আঁজলা পানি নিয়ে— তা দিয়ে অনুরূপ করলেন অর্থাৎ আরেক হাতের সঙ্গে মিলিয়ে মুখমন্ডল ধুলেন। অতঃপর আর এক আঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান হাত ধুলেন। অতঃপর আর এক আঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে তাঁর বাম হাত ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাস্হ করলেন। অতঃপর আর এক আঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে দিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর আর এক আঁজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে বাম পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ ‘আমি আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-কে এভাবে অজু করতে দেখেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪২)
কনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিষ্কার করা
হাদিসে রয়েছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুখমণ্ডল পরিষ্কারের পর কনুইসহ দুই হাতের কব্জি পরিষ্কার করেছেন।’ (বুখারি : হাদিস : ১৬৪/১৮৫)।
প্রসঙ্গত, নারীরা গহনা বা আংটি পরে থাকলে— সেগুলো নাড়িয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
মাথা মসেহ করা
রাসুল (সা.) দুইহাত ভিজিয়ে একবার মাথা মাসেহ করতেন। মাসেহ করার সময় তিনি দুইহাতের আঙ্গুল এক জায়গায় মিশিয়ে সামনের দিক হতে চুলের উপর দিয়ে পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার পেছন থেকে উভয় হাত টেনে সেখান থেকে শুরু করেছিলেন আবার সেখানে নিয়ে যেতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৫)
তারপর হাত ভিজিয়ে দুটি শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে দুই কানের ভেতরের দিকে কানের ভঁজে ভাঁজে ঘোরাতে হবে এবং দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই কানের পিঠ অর্থাৎ বাইরের অংশ মসেহ করতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১২১, ১২৩; সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯০)
টাখনুসহ পা পরিষ্কার করা
হাদিসে এসেছে, ‘ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথা হতে গোড়ালি ও টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৬)। আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘পায়ের আঙুল বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।’ (মিশকাত, হাদিস : ৪০৬. ৪০৭)।
এইচএকে/এমএমইউ