ইবাদত কবুলের জন্য নিয়ত করতে হয় যে কারণে
যেকোনো আমলের জন্য নিয়ত করা শর্ত। নিয়ত ছাড়া আমল কবুল হয় না। নিয়তের গরমিল আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া লোক দেখানো আমলের কারণে কিয়ামতের দিন অনেকেই ধরা খাবে আল্লাহ তায়ালার দরবারে। আল্লাহ তায়ালা এমন লোকদেরকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
তাই একজন মুমিন যত আমলই করুন, যদি নিয়ত পরিশুদ্ধ না হয় তাহলে অনেক বড় বড় কাজও নিষ্ফল হয়ে যায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, আমাকে খাঁটি নিয়তে আল্লাহর ইবাদত করতে আদেশ করা হয়েছে।’ (সুরা জুমার : ১১)। রাসুলকে (সা.) যে জিনিসের আদেশ দেওয়া হয়েছে, নিশ্চয় তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আল্লাহর কাছে বান্দার আমলের কেবল নিয়তটুকুই পৌঁছে।
কোরবানি কবুল হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিয়তের কথা বলেছেন এভাবে, ‘আল্লাহর কাছে তার গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, পৌঁছে কেবল তোমাদের সদিচ্ছা-তাকওয়া।’ (সুরা হজ : ৩৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গ্রহণ করা হয় না।’ (আস-সুনানুল কুবরা : ৬/৪১)
আরও পড়ুন
ইবাদতের সময় নিয়ত করার দুটো কারণ রয়েছে। ১. নিত্যদিনের অভ্যাস থেকে ইবাদতকে পার্থক্য করার জন্য। যেমন, মানুষ অনেক কারণেই খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকে। কখনও চিকিৎসকের পরামর্শে, কখনও খাবারের চাহিদা না থাকার কারণে, কখনও বা রাগের কারণে। এসব একান্ত ব্যক্তিগত কারণ। আল্লাহর হুকুম পালন বা ইবাদতের কারণে নয়। এ জন্য রোজার সময় রোজা রাখার জন্য নিয়ত করতে হয়। নিয়ত করার ফলে সেই উপবাস ইবাদত বলে গণ্য হবে।
২. এক ইবাদতকে অন্য ইবাদত থেকে পার্থক্য করার জন্য। যেমন, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল ইত্যাদি। নিয়তের মাধ্যমেই পার্থক্য হবে যে, তিনি ফরজ আদায় করছেন, নাকি ওয়াজিব আদায় করছেন, নাকি সুন্নত আদায় করছেন।
নিয়ত দুভাবে করা যায়। ১. মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা। মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করার কথা রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে সরাসরি বর্ণিত হয়ে আসেনি। চার মাজহাবের কোনো ইমামও মৌখিকভাবে নিয়ত করার কথা বলেননি।তবে মনোযোগ সৃষ্টির জন্য কেউ মৌখিকভাবে নিয়ত করতে চাইলে তার অবকাশ আছে।
২. মনে মনে নিঃশব্দে নিয়ত করা। এটাই নিয়তের আসল শাব্দিক ও ব্যবহারিক নিয়ম। কারণ নিয়তের স্থান হলো অন্তর। জিহ্বা নয়। তাই নিয়ত করতে হয় অন্তর দ্বারা। অন্তরের সংকল্প ছাড়া শুধু মুখে নিয়তের কথা উচ্চারণ করলে যথেষ্ট হবে না।
(মেরকাত : ১/৩৬; ফাতাওয়া শামি : ১/৩৮৬; আল-বাহরুর রায়েক : ১/২৭৮)