আদর্শ সমাজ গঠনে যে বিষয়গুলো মেনে চলবেন
মানুষ একা একা জীবনযাপন করতে পারে না। জীবনের প্রয়োজনেই অন্যের সহযোগিতা, সাহচর্যের প্রয়োজন হয়। তাই ইসলাম মানব জাতিকে সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে সমাজ পরিচালনার নীতিমালাও বলে দিয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হত পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছু জানেন; সমস্ত খবর রাখেন।’(সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
সমাজবদ্ধ থাকার গুরুত্ব রাসূল সা.-এর একটি হাদিস থেকে অনুমান করা যায়। যেখানে তিনি বলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকো। কেননা নেকড়ে সেই বকরি খেয়ে ফেলে যে দলছাড়া হয়ে দূরে চলে যায়। (আবু দাউদ)।
মহানবী সা. আরও বলেন- ‘বকরির জন্য যেমন নেকড়ে বাঘ, তেমনি শয়তান মানুষের জন্য নেকড়ে বাঘ। এ নেকড়ে বাঘ সেই বকরি ধরে,যে দলছাড়া হয় ও দূরে চলে যায় অথবা পৃথক হয়ে কোন দিকে চলে যায়। (মুসনাদ আহমাদ)
আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য ইসলাম যে নীতিমালাগুলো দিয়েছে, তা মানুষের নৈতিকতা, ইবাদত ও পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতির মাধ্যমে সমাজকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল করে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা তুলে ধরা হলো—
ইখলাস ও তাকওয়া
ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ইখলাস ও তাকওয়া। ইখলাস অর্থ হলো— আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা এবং ইবাদতসহ প্রতিটি কাজে সম্পূর্ণ আন্তরিকতা রাখা। ইখলাস ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে, এটাই সঠিক দীন। (সূরা বায়্যিনাহ, আয়াত : ৫)
তাকওয়া অর্থ হলো, আল্লাহ ভীতি ও সচেতনতার মাধ্যমে তার আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকা। এটি মুমিনের হৃদয়ে গড়ে তোলে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রবল চেতনা।
আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান। ‘(সূরা হুজরাত, আয়াত : ১৩)
ইখলাস ও তাকওয়া মুমিনের জীবনে আলো ছড়ায়। শুধু আমলকে শুদ্ধ করে না, বরং আখিরাতের জন্য জান্নাতের পথও প্রশস্ত করে। তাই আমাদের উচিত সব সময় ইখলাস ও তাকওয়ার উপর দৃঢ় থাকা। আল্লাহর কাছে এ গুণাবলির জন্য দোয়া করা।
ইলম
ইলম শব্দের অর্থ জ্ঞান বা শিক্ষা। এটি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ জ্ঞানই মানুষকে সঠিক পথ দেখায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পথপ্রদর্শক হয়। ইলম ছাড়া ইবাদত এবং জীবনের কোনো কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন
ন্যায়বিচার
আদল অর্থ ন্যায়বিচার বা ইনসাফ। এটি ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা এবং সামাজিক জীবনের একটি অপরিহার্য দিক। ন্যায়বিচার মানে প্রত্যেককে তার অধিকার প্রদান করা, পক্ষপাতিত্ব ও অন্যায় থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তায়ালা ন্যায়বিচারকে ঈমানদারদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন।
পারস্পরিক সহানুভূতি ও দয়া
সহানুভূতি মানে অন্যের কষ্ট অনুভব করা এবং তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা। দয়া হলো কাউকে ভালোবাসা এবং তার কল্যাণে কাজ করা। ইসলাম একে মানুষের সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে স্থাপন করেছে এবং এটি মুমিনদের অন্যতম গুণ।
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকা
হুযায়ফাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই একে অপরকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তোমাদের উপর তার পক্ষ থেকে বিশেষ শাস্তি পাঠাবেন। তখন তোমরা তাঁকে ডাকবে; অথচ তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৯)
আদব ও শিষ্টাচার
আদব ও শিষ্টাচার ইসলামের এক উজ্জ্বল দিক, যা মানুষকে আদর্শ জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়। এটি শুধু দুনিয়ার জীবন নয়, আখিরাতের সফলতার জন্যও অপরিহার্য। তাই আমাদের উচিত সব সময় আদব ও শিষ্টাচারের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং এই গুণগুলো অর্জনে সচেষ্ট থাকা।
সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ
সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ ইসলামের একটি মৌলিক শিক্ষা, যা সমাজে শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। এটি কেবল মুসলিম উম্মাহর মধ্যেই নয়, বরং মানবজাতির জন্যও একটি কল্যাণকর পথ। আমাদের উচিত, এই গুণগুলো চর্চা করা এবং এগুলোকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা।
হারাম ও হালালের সীমারেখা মেনে চলা
হালাল অর্থ বৈধ, যা আল্লাহ ও তার রাসূল সা. অনুমোদন করেছেন। হারাম অর্থ নিষিদ্ধ, যা আল্লাহ ও রাসূল সা.স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। মুসলিম জীবনে হারাম ও হালালের মধ্যে পার্থক্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ইসলামের অনুসৃত জীবনব্যবস্থার ভিত্তি,আমাদের উচিত সবসময় হালালের প্রতি আগ্রহী হওয়া এবং হারাম থেকে বিরত থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
লেখক: তরুণ আলেম