নামাজের সময় প্যান্ট কি টাখনুর ওপরেই রাখতে হবে?
নামাজের সময় কেবল প্যান্ট টাখনুর ওপর গুটিয়ে রাখে এবং নামাজ শেষে আবার টাখনু ঢেকে ফেলে— এমন কাজ করতে দেখা যায় অনেককে। আসলে এটা কি সঠিক? এ ব্যপারে ইসলাম কী বলে?
মূলত পুরুষদের জন্য নামাজের মধ্যে এবং নামাজের বাইরে সর্বাবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া বা ঝুলিয়ে রাখা হারাম। শুধু হারাম নয়, বরং কবিরা গুনাহও। রাসুল (সা.) বলেছেন, ইজারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নিচে থাকবে, সেই অংশ জাহান্নামে যাবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৮৭)
অন্য একটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকার করে পরনের কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে চলাফেরা করে— কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন না।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬৬৫)
যেসব ভাই কেবল নামাজের সময় প্যান্ট গুটিয়ে টাখনুর উপরে রাখে এবং নামাজ শেষে আবার টাখনু ঢেকে ফেলে— তাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহর নবী (সা.) নামাজ ও নামাজের বাইরে সবসময় টাখনু ঢাকতে নিষেধ করেছেন। তাই সবসময় তা অনুসরণ করা জরুরি। কেননা, এটা হারাম কাজ ও কবিরা গুনাহ।
তাই নামাজ ও নামাজের বাইরে সর্বাবস্থায় যেন পুরুষের কাপড় টাখনুর উপরে থাকে সে ব্যাপারে যত্নবান হওয়া অবশ্য কর্তব্য। (ইমদাদুল আহকাম : ৪/৩৩৬)
টাখনু ঢাকা রেখে নামাজ আদায়ের হুকুম
যদি কেউ নামাজরত অবস্থায় টাখনু ঢেকে রাখে কিংবা খোলা রাখে— তাতে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে নামাজরত অবস্থায় টাখনু ঢেকে রাখলে, গুনাহ আরও বেশি হবে— এতে কোনো সন্দেহ নাই।
উল্লেখ্য যে, নবী কারিম (সা.) টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে নামাজ পড়তে দেখে— তাকে পুনরায় ওজু করতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন, তার নামাজ কবুল হবে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৬৩৮; শায়খ আল-বানি (রহ.)-এর তাহকিককৃত)
তবে হাদিসটিকে প্রখ্যাত হাদিসবিশারদরা ও শায়খ আল-বানি (রহ.) দুর্বল হাদিস হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখার শাস্তি
আবু জর ( রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা তো বলবেনই না; বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাদের গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কারা? এদের তো সর্বনাশ হবে। তাদের বাঁচার কোনো রাস্তা নেই।
রাসুল (সা.) এ কথা তিনবার বলেছেন, তারা হলো— এক. যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে। দুই. যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রি করে। তিন. যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ১০৬; নাসায়ি, হাদিস : ২৫৬৩)
টাখনুর নিচে কাপড় পরা নিয়ে আরও ফতওয়া
শায়খ বিন বাজ (রহ.) বলেন, ‘যে কোন অবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়াকে রাসুল (সা.) অহংকারের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। কারণ, তিনি বলেন, ‘টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া থেকে সাবধান! কারণ তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত।’ এখানে তিনি বিশেষ কোনো অবস্থাকে বাদ দেননি। সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরবে, সে এ শাস্তির আওতায় চলে আসবে। চাই তা পায়জামা হোক বা লুঙ্গি, কুর্তা বা অন্য কোন পোশাক। কোনো পোশাকের ক্ষেত্রেই টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।’
মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন, ‘অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে— তার শাস্তি হলো- কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তার দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তার জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আর যদি অহংকারবশতঃ ঝুলিয়ে পরে তাবে তার শাস্তি হলো, সে যতটুকু কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরেছিল— ততটুকু আগুনে প্রজ্জ্বলিত হবে। (তথ্যসূত্র : ফাতাওয়া আল-বালাদিল হারাম, পৃষ্ঠা : ১৫৪৭, ১৫৪৯, ১৫৫০)