সিরিয়ায় মুসলিমবাহিনী পাঠানোর আগে যে উপদেশ দিয়েছিলেন আবু বকর রা.
বর্তমান সিরিয়াকে এক সময় শাম বলা হতো। বর্তমান ফিলিস্তিন, ইয়ামান, জর্দান, লেবানন, অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলও এই শাম অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের এই অঞ্চল বিজয়ের যাত্রার সূচনা হয়েছিল রাসূল সা. এর যুগে রোমানদের বিরুদ্ধে মুতা যুদ্ধের মাধ্যমে। পরবর্তীতে তাবুক অঞ্চলে একটি যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধে রাসূল সা. নিজেও অংশ নিয়েছিয়েছিলেন।
সিরিয়া অঞ্চলে মুসলমানদের যুদ্ধ ও বিজয় যাত্রা বিস্তার লাভ করেছিল আবু বকর রা. এর শাসনামলে। চূড়ান্ত বিজয় লাভ হয়েছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রা.-এর খেলাফতকালে।
মুতা ও তাবুক যুদ্ধের পর একাদশ হিজরিতে রাসূল সা. রোমান বাহিনীর সঙ্গে চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য সেনা বাহিনী প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। হজরত আবু বকর, ওমর, সাদ ইবনে আদি ওয়াক্কাস, আবু উবাইদা ইবনুল জাররা প্রমুখ প্রথম সারির সমর বিশারদ সাহাবিদের এ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন রাসূল সা.। তবে তিনি এই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করেছিলেন উসামা বিন যায়িদ রা.-কে। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর ছিল।
রাসূল সা. গাজা উপত্যকার কাছে বালকার আশেপাশের সীমান্তে ছাউনি ফেলার নির্দেশ দেন তাঁকে।
আরও পড়ুন
বাহিনী প্রস্তুত হলো। এ সময় রাসূল সা. অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর রোগ বেড়ে গেল। উসামা রা.-এর নেতৃত্বাধীন বাহিনী মদিনার উপকণ্ঠে জুরুফ নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করলো। ইতোমধ্যে রাসূল সা. ইন্তেকাল করলেন।
রাসূল সা. এরপরে আবু বকর রা. খলিফা নির্বাচিত হলেন। তিনি উসামা রা.-এর বাহিনীকে যাত্রার নির্দেশ দিলেন। উসামা রা.-এর নেতৃত্বাধীন বাহিনী যাত্রা শুরু করলে আবু বকর রা. সওয়ারির সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন—
১. খিয়ানত করবে না।
২. মিথ্যা কথা বলবে না।
৩. অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে না।
৪. শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদেরকে হত্যা করবে না।
৫. কোনো ফলদার বৃক্ষ কাটবে না, জ্বালাবে না।
৬. আহারের প্রয়োজনীয়তা ছাড়া উট, বকরি, গাভী জবাই করবে না।
৭. কোনো জাতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাদেরকে নম্রভাবে ইসলামের দাওয়াত দিবে।
৮. কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তার মর্যাদা রক্ষার প্রতি খেয়াল রাখবে।
৯. তোমাদের সামনে কোনো খাবার এলে আল্লাহর নামে শুরু করবে।
১০. ইহুদি, খৃষ্টানদের যেসব লোক পার্থিব সম্পর্ক ত্যাগ করে তাদের উপাসনালয়ে আবাস গড়েছে তাদের উত্যক্ত করবে না।
১১. রাসূল সা. তোমাদের যেসব কাজ করার আদেশ দিয়েছেন, এতে কোনো কমবেশি করবে না।
১২. আল্লাহর পথে কাফেরদের সঙ্গে লড়াই করবে।
সূত্র : ইসলামের ইতিহাস, ১ম খন্ড, ২৫৭