আল-আকসা মসজিদ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
আল-কুদস, মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মাকদিস কিংবা বাইতুল মুকাদ্দাস। পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিনের সুন্দর সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। মুসলিম জাতির প্রথম কিবলা ও পৃথিবীর বুকে অবস্থিত— সব জাতি-বর্ণের মুসলমানদের প্রাণস্পন্দন।
অন্যদের মাধ্যমে দখলকৃত যেকোনো মুসলিম ভূখণ্ড উদ্ধার করা— সমগ্র মুসলমানদের অপরিহার্য বিষয়। তবে ইসলামের প্রথম কিবলার দেশ ফিলিস্তিনের বিষয়টি অন্যসবগুলোর চেয়েও ভিন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রিয় পাঠক! আসুন মুসলমানদের কাছে মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিন অসামান্য মর্যাদা-বৈশিষ্ট্য ও প্রাণাধিক প্রিয় হওয়ার নেপথ্য-রহস্য উম্মোচন করি এবং হাদিসে ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসার বিশেষত্ব নিয়ে কী বলা হয়েছে— তা জেনে নিই।
এক. মহানবী (সা.)-এর গমনস্থল ও ইসরা-মিরাজ
ইসলামের ইতিহাস ও বিশ্বনবির জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হলো মিরাজ। মিরাজ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সন্তান মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম বড় মুজিযা। বিপদে জর্জরিত ও চাচা আবু তালিব ও প্রিয়তমা স্ত্রী খদিজার ইন্তেকালে শোকাভিভুতো প্রিয়নবির অশান্ত হৃদয়ে শান্ত্বনার শীতল পরশ বুলানোর নিমিত্তে এক অসাধ্য সাধন কাজের মাধ্যমে নবুয়তের সত্যতাকে সুনির্ধারিত করতে আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবিকে একান্ত সান্ন্যিধ্যে ডেকে নেন। সৃষ্টিজগতের সেরা আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও তাৎপর্যপূর্ণ এ ঘটনাটিই হলো মিরাজ। আর মসজিদে আকসার দেশ ফিলিস্তিনের বুকেই রচিত হয় সায়্যিদুল আম্বিয়ার সে শ্রেষ্ঠতম নৈশভ্রমনের ইতিবৃত্ত। সেসময় সৃষ্টির সেরা দুলালের পদস্পর্শে ধন্য হয় পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিন। সে রাতে নবীজি মসজিতে আকসা থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত নৈশভ্রমণ করেন। এরপর বায়তুল মাকদিস হতেই তিনি উর্ধ্বাকাশে গমন করেন।
এ সম্পর্কে আনাস ইবনু মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন- ‘বোরাক নিয়ে আসা হলো। বোরাক এমন জন্তু বিশেষ, যা ধবধবে সাদা ও দীর্ঘকায় বিশিষ্ট। গাঁধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে গঠনে ছোট। আর জন্তুটি একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ সীমানায়’। তিনি বললেন, ‘আমি তার উপর আরোহন করে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত গমন করলাম। এরপর আমি সেটাকে নবিদের জন্তুর খুটির সাথে বাঁধলাম।’ তিনি বলেন-‘অতঃপর আমি মসজিদে আকসাতে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলাম। পরিশেষে সেখান হতে আমাকে উর্ধ্বাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। (সহিহ মুসলিম)
দুই. মুসলমানদের প্রথম কিবলা
ইসলামের কিবলা ও কিবলা পরিবর্তনের ইতিহাস একটি বহুল আলোচিত ও পর্যালোচিত বিষয়। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবী (সা.) তার সহচরদের নিয়ে বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতেন। বায়তুল মাকদিস হলো- আমাদের প্রথম কিবলা। মুসলমানদের প্রথম ভালবাসা। প্রথম ভালবাসা ভুলবার নয়। প্রথমটা পুরনো হলেও মুসলমানরা তার সুখস্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে এখনও। পরবর্তী সময়ে নবীজির হৃদয়ের চাহিদা ও মনোবাসনাকে পূর্ণতাসহ বিভিন্ন প্রজ্ঞার কারণে প্রজ্ঞাবান মহান সৃষ্টিতর্কার নির্দেশে কিবলা পরিবর্তিত হলেও এখনও তার ভালবাসা ইসলামের প্রথম সালাতের আদায়ের দিনের মতো প্রোজ্জ্বল।
হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে মহানবি (সা.) কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরামসহ মদিনার অদূরে মসজিদে বনু সালামায় যোহর মতান্তরে আসরের নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মহানবি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম চার রাকাতের অবশিষ্ট দুই রাকাত কাবার দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন বলে মসজিদটি মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে সমধিক পরিচিত। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহানবি (সা.) মক্কায় থাকাকালীন সময়ে পবিত্র কাবা তার সামনে থাকাবস্থায় বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেন। মদিনায় হিজরতের পর সুদীর্ঘ ষোল মাস সেদিকে ফিরেই নামাজ আদায় করেন। অতঃপর কাবার দিকে মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তিত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৮৩৬)
তিন. পৃথিবীর বুকে স্থাপিত দ্বিতীয় মসজিদ
মসজিদ হলো ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। ঈমানের ইস্পাতকঠিন দূর্গ। তাওহিদের বাণীর প্রচার-প্রসার ও কুরআন-হাদিস চর্চার আঁতুড়ঘর। সেকালের জ্ঞানচর্চার প্রধান শিক্ষালয়। ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ মজসিদুল হারাম হলেও এরপরের স্থানে আছে সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ মসজিদে আকসা। এটা নিংসন্দেহে ফিলিস্তিনবাসী মুসলমানদের জন্যে বিশেষ সম্মানের বিষয়; অন্যান্য মুসলমানদের অশেষ গৌরবের বস্তু। আসুন! আবু যর গিফারির মুখ থেকেই শুনে নিই সে গৌরবময় উপাখ্যান—
আবু জর গিফারি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। অতঃপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১৫)
চার. সালাত আদায় ও প্রহরার বিশেষ গুরুত্ব
কাজের স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে কাজের মর্যাদা ও মান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তেমনি সালাত আদায় করা ও প্রহরার ক্ষেত্রেও স্থান অনুপাতে এ মর্যাদা শতগুন বেড়ে যায়। মসজিদুল আকসায় সালাত আদায় ও প্রহরায় সওয়াবের বিষয়ে জানতে হলে— নিম্নোক্ত হাদিসটি পাঠ করুন।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন সুলায়মান ইবনু দাউদ বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ের প্রার্থনা করলেন। তার মতো শাসনক্ষমতা এবং এমন রাজত্ব, যা তার পরে কাউকে প্রদান করা হবে না ও সালাত আদায়ের একনিষ্ঠ মনে উক্ত মসজিদে আগমনকারীর পাপ মোছন করে তার জন্মের দিনের মতো নিস্পাপ করার প্রার্থনা করেছেন।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘আল্লাত তার আবেদনের ভিত্তিতে তাকে দুটি প্রদান করেছেন। তৃতীয়টিও কবুল করেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’ (সুনানে ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৪৭৯)
পাঁচ. মসজিদুল আকসায় সফরের প্রতি নবীজির বিশেষ গুরুত্বারোপ
ফিলিস্তিন প্রাকৃতিক নদ-নদী, ফল-ফসলের প্রাচুর্যতা এবং নবি-রাসুলের বাসস্থান ও কবরস্থান হওয়ার কারণে পৃথক বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। আর এসব গুণ-বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে মহানবির মুখ থেকে উচ্চারিত হয়— তার দিকে সফরের বিশেষ গুরুত্বের কথা। মহানবী (সা.) মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসার উদ্দেশ্যে সফরকে বিশেষ পুণ্যময় কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ বার্তা অন্যকোনো মসজিদের ব্যাপারে আসেনি।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বর্ণনা করেন, ‘তোমরা তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যকোনো মসজিদে বিশেষ সওয়াবের উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণ করো না। আর সে তিনটি মসজিদ হলো— মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১১৫)
ছয়. ফিলিস্তিনের তীর্থযাত্রীদের বিশেষ ফজিলত
ইসলামে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হজ্ব মুমিনদের জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ বিশেষ আমলটির রয়েছে সবিশেষ মর্যাদা। তবে বিশেষ অবস্থার কারণে ফিলিস্তিনের হজ্বযাত্রীদের জন্যে নবিজি বিশেষ অফার ঘোষণা করেছেন। হজ্বের নির্ধারিত সওয়াব তো থাকছেই, সাথে আছে আরো বিশেষ অফার। আসুন, উম্মে সালামার মুখ থেকে জেনে নিই সে অফারের আদ্যোপান্ত বিবরণ।
ফিলিস্তিন নিয়ে প্রথম কিস্তি পড়ুন : কোরআনে আল-আকসা মসজিদ নিয়ে যা বলা হয়েছে
উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে ব্যক্তি মসজিদুল আকসা থেকে মসজিদে হারামে হজ কিংবা উমরা পালনে গমন করবে তার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে কিংবা তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৭৯)
সাত. ফিলিস্তিন হাশরের ময়দান
মানুষ মরণশীল। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে পরিশেষে উপস্থিত হবে ফলাফল প্রকাশের মাহেন্দ্রক্ষণ। তার পূর্বে আয়োজন করা হবে দুনিয়াবাসীদের মিলনমেলার, প্রস্তুত করা হবে ফলাফল প্রকাশের সুবিশাল মঞ্চ। আল্লামা কুরতুবির ভাষ্য মতে, ৪টি হাশরের দুটিই কায়িম হবে দুনিয়াতে। আসুন, মায়মুনার (রা.)-এর বক্তব্য থেকে এমন কোনো একটি অঞ্চলের অনুসন্ধান করি।
মায়মুনা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)কে বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু বলুন!’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘বায়তুল মাকদিস হলো হাশরের ময়দান। পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা তাতে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা, তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায়ের সওয়ার পাওয়া যায়।’ তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদুল আকসাতে গমনের শক্তি-সামর্থ্য রাখেন না তার ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?’ তিনি বললেন, “সে যেন তার জন্যে জ্বালানি তেল হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করে। কেননা যে বায়তুল মাকদিসের জন্যে হাদিয়া প্রেরণ করে, সে তাতে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়ার লাভ করবে।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৬৩৪৩)
আট. বীর-মহাবীর দেশ ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনি জাতি মাটি কামড়ে লড়ে যাওয়া নিবেদিত লড়াকু হাজারো বীরের দেশ। ইতিহাসের মহাবীর সুলতান সালাহুদ্দিন আয়ুবি ও বাইবার্সের দেশ ফিলিস্তিন। এ পবিত্র ভূমিতে কেয়ামত অবধি মায়েদের কোল আলোকিত করে জন্ম নেবে— হাজারো রথী-মহারথী ও বীরপুরুষ। মুজাহিদরা কেয়ামত পর্যন্ত নিবেদিত থাকবেন— ফিলিস্তেনর মাটিতে। এ প্রসঙ্গে উমামা (রা.)-এর মুখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যটা শুনে আসি।
আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘আমার উম্মতের একটি দল সত্যের উপর বিজয়ী থাকেবে, শত্রুর মনে পরাক্রমশালী থাকবে, দুর্ভিক্ষ ব্যতীত অন্য কোনো বিরোধী পক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না; আল্লাহর আদেশ তথা কেয়মত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কোথায়? রাসুল (সা.) বললেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস এবং তার আশেপাশে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১২৮৬)
নয়. আল্লাহর পছন্দনীয় ভূমি
পৃথিবীতে আল্লাহর পছন্দনীয় স্থানসমূহের অন্যতম হলো মক্কা মুকাররামা ও মদিনা মুনাওয়ারা। এছাড়াও তার আরো অনেক প্রিয় স্থান সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। প্রিয় পাঠক, আপনার কাছে আল্লাহর আরো একটি প্রিয়তম স্থানের আলোচনা তুলে ধরছি-
ইবনু হাওয়ালা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন-“শিগগিরই অবস্থা এমন হবে যে, তোমরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একদল সিরিয়ায়, আরেক দল ইয়ামনে এবং অন্যদল হবে ইরাকে। ইবনু হাওয়ালা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি সে যুগ পাই, তখন আমি কোন দলের সাথে থাকবো তা আপনি মনোনীত করে দিন। তিনি বললেন, তুমি সিরিয়াকে গ্রহণ করবে। কারণ সিরিয়া হলো- আল্লাহর পছন্দনীয় জমিন। শেষকালে আল্লাহ তাআলা তার নেক ও পুণ্যবান ব্যক্তিদের সেখানে সমবেত করবেন। যদি তোমরা সেখানে যেতে না চাও, তাহলে ইয়ামনে চলে যাবে। তোমাদের গবাদিপশকে নিজেদের হাউজ থেকে পানি পান করাবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা আমার উসিলায় সিরিয়া ও সিরিয়াবাসীর জন্যে জিম্মাদার হয়ে গেছেন। এর ফলে তার বাসিন্দাগণ কুফরের অনিষ্টতা এবং ফিতনা-ফাসাদের হতে নিরাপদ হতে নিরাপদে থাকবে। (সুনানে আবু দাউদ)
দশ. শেষকালের হিজরতভূমি
নববী জীবনের ত্রয়োদশতম বছরে সংঘটিত হলো মক্কা থেকে মদিনার হিজরত। এরপর পৃথিবীতে সংঘটিত হবে মহা হিজরত। আর সে হিজরত হবে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের হিজরতভূমির দিকে। এ মহা হিজরতের আলোচনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.)। তিনি কি বলছেন তা জানতে চোখ রাখুন তার এ বর্ণনায়!
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, অদূর ভবিষ্যতে এক হিজরতের পর আরেকটি হিজরত সংঘটিত হবে। তখন উত্তম মানুষ তারাই হবে, যারা ওই জায়গায় হিজরত করবে, যে জায়গায় হযরত ইবরাহিম (আ.) হিজরত করেছিলেন।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে— এ ধরাপৃষ্ঠে তারাই সর্বোত্তম যারা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর হিজরতের স্থানকে নিজেদের হিজরতস্থল বানাবে। এ সময় কেবল মন্দ লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে। তাদের দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করা হবে। আল্লাহ তাআলা তাদের ঘৃণা করবেন। অতঃপর একটি আগুন তাদেরকে বানর ও শুকরের দলসহ হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। তারা যেখানে রাতযাপন করবে, আগুনও সেখানে রাত কাটাবে। আর যেখানে তারা দ্বিপ্রহরের বিশ্রাম করবে, আগুনও সেখানে বিশ্রাম করবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১২৩)
শাহেদ বিন হোসাইন
শিক্ষার্থী, জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম।