মাতৃগর্ভে ভ্রূণের অবস্থান নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে
মাতৃগর্ভে ভ্রূণের অবস্থান কেমন থাকে এ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যথেষ্ট গবেষণা আছে। কোরআন হাদিসেও এ বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মাতৃগর্ভে মানবশিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিজিক, আয়ুকাল ও ভালো না মন্দ সব লিপিবদ্ধ কর।অতঃপর তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়।’
এক ব্যক্তি একজন জাহান্নামীর আমলের মত আমল করতে থাকে এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাতের তফাৎ রয়ে যায়, এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতবাসীদের আমলের মত আমল করে থাকে। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।
আর এক ব্যক্তি (প্রথম হতেই) জান্নাতবাসীদের আমলের মত আমল করতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের ব্যবধান রয়ে যায়। এমন সময় তার ভাগ্য লিখন অগ্রগামী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীদের আমলের মতো আমল করে থাকে এবং ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। (বুখারি, হাদিস : ২৯৬৮)
পবিত্র কোরআনের সূরা মুরসালাতেও ভ্রূণের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন আল্লাহ তায়ালা। বর্ণিত হয়েছে,
اَلَمۡ نَخۡلُقۡکُّمۡ مِّنۡ مَّآءٍ مَّہِیۡنٍ ۙ ٢۰ فَجَعَلۡنٰہُ فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ۙ ٢١ اِلٰی قَدَرٍ مَّعۡلُوۡمٍ ۙ ٢٢ فَقَدَرۡنَا ٭ۖ فَنِعۡمَ الۡقٰدِرُوۡنَ ٢٣
আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করিনি এক হীন পানি দ্বারা? অতঃপর আমি তা এক সুরক্ষিত অবস্থানস্থলে রাখি। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তারপর আমি তাতে পরিমিত রূপ দান করি। সুতরাং আমি কতই না উত্তম রূপদাতা! (সূরা মুরসালাত, আয়াত ২০-২৩)
আরও পড়ুন
কোরআনের অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুনরুত্থানের প্রমাণ হিসেবে বলেছেন. প্রথমবার যিনি মানুষকে সৃষ্টি করতে পেরেছেন তাঁর পক্ষে দ্বিতীয়বার অর্থাৎ, মৃত্যুর পর মানুষকে সৃষ্টি করা কঠিন কাজ নয়। প্রথম সৃষ্টিই প্রমাণ করছে যে, তিনি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنۡ كُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّنَ الۡبَعۡثِ فَاِنَّا خَلَقۡنٰكُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَۃٍ ثُمَّ مِنۡ مُّضۡغَۃٍ مُّخَلَّقَۃٍ وَّ غَیۡرِ مُخَلَّقَۃٍ لِّنُبَیِّنَ لَكُمۡ ؕ وَ نُقِرُّ فِی الۡاَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ثُمَّ نُخۡرِجُكُمۡ طِفۡلًا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوۡۤا اَشُدَّكُمۡ ۚ وَ مِنۡكُمۡ مَّنۡ یُّتَوَفّٰی وَ مِنۡكُمۡ مَّنۡ یُّرَدُّ اِلٰۤی اَرۡذَلِ الۡعُمُرِ لِكَیۡلَا یَعۡلَمَ مِنۡۢ بَعۡدِ عِلۡمٍ شَیۡئًا ؕ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ هَامِدَۃً فَاِذَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡهَا الۡمَآءَ اهۡتَزَّتۡ وَ رَبَتۡ وَ اَنۡۢبَتَتۡ مِنۡ كُلِّ زَوۡجٍۭ بَهِیۡجٍ
হে মানুষ! পুনরুত্থানের ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দিহান হও, তাহলে (চিন্তা করে দেখ) আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, অতঃপর শুক্র হতে, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে, অতঃপর মাংসপিন্ড হতে পূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট বা অপূর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট অবস্থায় (আমার শক্তি-ক্ষমতা) তোমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য। আর আমি যাকে ইচ্ছে করি তাকে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে রাখি, অতঃপর তোমাদেরকে বের করে আনি শিশুরূপে, অতঃপর (লালন পালন) করি যাতে তোমরা তোমাদের পূর্ণ শক্তির বয়সে পৌঁছতে পার। তোমাদের কারো কারো মৃত্যু ঘটাই, আর কতককে ফিরিয়ে দেয়া হয় নিস্ক্রিয় বার্ধক্যে যাতে (অনেক) জ্ঞান লাভের পরেও তাদের আর কোন জ্ঞান থাকে না। অতঃপর (আরো) তোমরা ভূমিকে দেখ শুষ্ক, মৃত; অতঃপর আমি যখন তাতে পানি বর্ষণ করি তখন তাতে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়, আর তা উদগত করে সকল প্রকার নয়নজুড়ানো উদ্ভিদ (জোড়ায় জোড়ায়)। (সূরা হজ, আয়াত : ৫)