বৃষ্টির জন্য যেভাবে নামাজ পড়বেন
প্রচণ্ড গরমে অসহ্য হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। তাপদাহ ও তীব্র রোদে জনজীবন হয়ে উঠেছে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। ভীষণ এই অনলবর্ষী রোদ্দুরে এক পশলা বৃষ্টি নেমে এলে স্বস্তির হাওয়া বইবে। রহমতের বারিবর্ষণে প্রশান্ত ও সিক্ত হবে ওষ্ঠাগত প্রাণ। স্নাত ও আর্দ্য-মেদুর হবে বিষিয়ে ওঠা আবহ-প্রকৃতি। জনমানব উদ্বেলিত হবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তারপর তা একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৪৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৩৮)
বৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীতে সজীবতা
সৃষ্টিকুলের জীবনধারণের সব উপকরণ আল্লাহ তাআলা পরিমিতভাবে ও যথাস্থানে স্থাপন করে রেখেছেন। সবুজাভ প্রকৃতি, শ্যামলি-নিসর্গ ও বনভূমির মাধ্যমে তিনি প্রকৃতিকে সজীব ও প্রাণবন্ত করেছেন।
আরও পড়ুন : ফজর নামাজ পড়তে না পারলে করণীয়
পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর আমি এর মাধ্যমে সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, জায়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত ও সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য করো, যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য করো। নিশ্চয় এগুলোতে ঈমানদারদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৯৯)
বৃষ্টির জন্য নামাজ ও দোয়া
রোদ-বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত। কৃষি কাজ ও শস্য ফলানোসহ মানবজীবনের প্রায় অনেক ক্ষেত্রে বৃষ্টি যেমন দরকার, রোদ-গরম ও সূর্যের তাপেরও প্রয়োজনীয়তা তেমন জরুরি। কিন্তু মানুষের আমল ও কর্মের কারণে প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে। বিভিন্ন সময়ে কোনোটার মাত্রা কম-বেশি হয়। কোরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে আলোচনা এসেছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি না হলে, বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় মানুষজন অসুবিধা ও কষ্টে ভোগেন। তখন প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি কামনা করে দোয়া করা সুন্নত। আরবিতে এটাকে ‘ইসতিসকা’ বা ‘সিক্তকরণের দোয়া’ বলা হয়।
সালাতুল ইসতিসকা; বৃষ্টি কামনায় নামাজ
আর বৃষ্টি প্রার্থনায় সম্মিলিতভাবে জামাতে দুই রাকাত নামাজও আদায় করা হয়। এটাকে বলা হয় ‘সালাতুল ইসতিসকা’। ইমাম সাহেব কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। মুসল্লিরাও তখন কায়মনোবাক্যে দোয়া-প্রার্থনা করেন।
বস্তুত পাপমোচনের জন্য আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ অন্তরে তওবা-ইস্তেগফার করতে হয়। কেউ অন্যের হক বা মানবাধিকার নষ্ট করলে, তা ফেরত দিয়ে দোয়া করতে হয়। তবেই আল্লাহ তাআলা মানুষের মনোকামনা পূরণ করেন এবং বৃষ্টি দিয়ে নিসর্গ সিক্ত করেন।