হিজরতের পথে মহানবী সা.-কে আল্লাহর সাহায্য
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মহানবী সা. ও সাহাবীদের হিজরতের পরেই মদিনা থেকে ইসলাম শক্তিশালী হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।
মক্কায় মুসলমানদের ওপর মুশরিকরা বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার চালাতো। অত্যাচার অসহনীয় পর্যায়ে গেলে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে সাহাবিরা মদিনায় হিজরত শুরু করেন। হিজরতের পথেও বিভিন্ন বাধা তৈরি করতো মুশরিকেরা। তাই বেশির ভাগ সাহাবিই গোপনে হিজরত করতেন।
এভাবে সাহাবিদের উল্লেখ্যযোগ্য একটি অংশ হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা.-কে হিজরতের নির্দেশ দেন। রাসূল সা.-এর হিজরতের সঙ্গী ছিলেন হজরত আবু বকর রা.।
আল্লাহর রাসূলের হিজরতে পথে পদে পদে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে মুশরিকেরা। তারা হিজরতের রাতেই রাসূল সা.-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের ষড়যন্ত্রের কবল থেকে তাঁকে রক্ষা করেন।
আরও পড়ুন
সেই রাতে আল্লাহর রাসূল নিজের বিছানায় আলী রা.-কে শুইয়ে রেখে গভীর রাতে নিজের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় তিনি কোরআনের একটি আয়াতের ওপর আমল করেন। যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তায়ালা মুশরিকদের চোখে এক ধরনের ধোয়াশা তৈরি করে দেন। তারা রাসূল সা.-এর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেও বের হওয়ার সময় তাঁকে দেখতে পায়নি।
বাড়ি থেকে বের হয়ে রাসূল সা. আবু বকর রা.-কে সঙ্গে নিয়ে গারে সাওরে আশ্রয় নেন। তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে মুশরিকেরা সেখানেও পৌঁছে যায়। তবে আল্লাহ তায়ালা সেখানে প্রিয় হাবীব সা.-কে সাহায্য করেন। তারা গুহার এতো কাছে চলে আসে যে, তাদের পায়ের পাতা, কথার শব্দও শুনতে পেলেন আবু বরক রা.। তিনি কিছুটা আতঙ্কিত হলেন। রাসূল সা. তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, ভয় পেয়ো না আমাদের সঙ্গে আল্লাহ আছেন।
মুশরিকেরা যখন গুহার মুখের কাছে চলে এসেছিল, তখন আল্লাহর কুদরতের ইশারায় সেখানে মাকড়শা জাল বুনলো এবং জঙ্গলী কবুতর সেখানে এসে ডিম পাড়লো। গুহার মুখের এমন অবস্থা দেখে মুশরিকরা ভাবলো এখানে তো কোনো মানুষ থাকা সম্ভব নয়। এসব ভেবে তারা সেখান থেকে চলে গেল।
মুশরিকেরা যখন কোনোভাবেই রাসূল সা.-এর হিজরত আটকাতে পারলো না, তখন তারা সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ সা.-এর আটককারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করলো।
এই ঘোষণা শুনে সুরাকা ইবনে মালেক নামে একজন রাসূল সা.-এ খোঁজে বেরিয়ে পড়লো। খুঁজতে খুঁজতে তিনি আল্লাহর রাসূল সা.-কে এক জায়গায় পেয়ে গেলেন। তার পুরস্কার প্রাপ্তিতে তখন আর কোনো বাধা নেই। কিন্তু আল্লাহ এখানেও প্রিয় হাবীব সা.-কে সাহায্য করলেন।
রাসূল সা.-কে দেখার পর সুরাকা সামনে অগ্রসর হলো। কিন্তু হঠাৎ তাঁর ঘোড়া হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। সে ঘোড়াসহ উঠে আবার সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলো। তাকে দেখে আবু বকর রা. আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সেদিকে কোনো গুরুত্ব দিলেন না।
সুরাকা আবারো সামনে অগ্রসরের চেষ্টার পর এবার তাঁর ঘোড়ার পা মাটিতে দেবে গেল। অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়াকে উঠানো গেল। সে আল্লাহর রাসূলের কাছে সাহায্য চাইলো। রাসূল সা. কাছে এসে তার ঘোড়াটি উঠিয়ে দিলেন। এ সময় ঘোড়ার পায়ের নিচ থেকে ধোয়া উঠতে শুরু করলো। তা দেখে সুরাকা ভয় পেয়ে গেল। আল্লাহর রাসূল সা. তখন তার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলেন, সে যেন কারো কাছে তাদের অবস্থান প্রকাশ না করে। সুরাকা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলো। (সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া)