আজান দেওয়া শুরু হয়েছিল যেভাবে
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়। আজানের মাধ্যমে মুসলমানেরা নামাজের সময় সম্পর্কে জানতে পারেন। কাজ-কাম, ব্যস্ততা ছেড়ে নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। নিয়মিত নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি আজানের পরেই নিজেকে সব ব্যস্ততা থেকে মুক্ত করে ফেলেন। আজান মুসলিম সমাজের অন্যতম পরিচয় বহনকারী একটি বিষয়ও বটে। নামাজের জন্য আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
বর্তমানে মুসলিম সমাজে নিয়মিত আজানের প্রচলন থাকলেও ইসলামের প্রথমদিকে এভাবে আজান দেওয়া হতো না। আল্লাহর রাসূল সা. ও সাহাবিরা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর আজানের প্রচলন হয়। এর আগে নির্দিষ্ট সময়ে সাহাবিরা নামাজের জন্য মসজিদে নববীতে একত্রিত হতেন। কিন্তু নামাজে উপস্থিত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম বা আহ্বান পদ্ধতি না থাকায় অনেকে মসজিদের জামাতে সময়মতো উপস্থিত হতে পারতেন না।
নামাজের সময় কেউ হয়তো কাজে ব্যস্ত থাকতেন অথবা ঘুমিয়ে থাকতেন। এদিকে মসজিদে জামাত শুরু হয়ে যেতো কিন্তু তাঁর কোনো খবর থাকতো না। তাই কীভাবে নিয়মিত সবাই মসজিদে উপস্থিত হতে পারেন এ নিয়ে একদিন মসজিদে নববীতে আলোচনা সভায় বসলেন রাসূল সা. ও সাহাবিরা।
পরামর্শে বসে বিভিন্ন সাহাবি বিভিন্ন ধরনের মতামত দিলেন। তাদের মতামতে চারটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছিল। বিষয়গুলো ছিল— আজানের সময় হলে দায়িত্বশীল একজন উুঁচু কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে ঝাণ্ডা উড়াবেন। অথবা কেউ একজন আগুন জ্বালিয়ে অন্যদের নামাজের সময়ের বিষয়ে জানাবেন।
আরেকটি পরামর্শ ছিল এমন যে, নামাজের সময় হলে শিঙ্গা বাজিয়ে সবাইকে সচেতন করা হবে। কেউ আবার পরমার্শ দিলেন, নামাজের সময় হলে পুরো এলাকায় জানিয়ে দেওয়ার জন্য ঢোল বাজানো হবে।
আরও পড়ুন
পরমার্শ সভার ৪টি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেন আল্লাহর রাসূল সা.। কারণ ঝাণ্ডা উড়ালে সব মানুষ তা বাড়ি বা দূর থেকে দেখতে পাবে না। দ্বিতীয়ত আগুন প্রজ্বলন অগ্নি উপাসকদের কাজ। তৃতীয়ত শিঙ্গা বাজানো খ্রিস্টানদের কাজ আর চতুর্থত ঢোল বাজানো ইহুদিদের কাজ। এ কারণে সেদিন সমাধান ছাড়াই পরামর্শ সভা মূলতবি করা হয়। রাসূল সা. সবাইকে এ বিষয়ে আরও ভাবার পরামর্শ দেন।
সে রাতে আজান বা নামাজের আহ্বানের জন্য ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা.। ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্নে দেখলেন—
একদল লোক একটি ঘণ্টা নিয়ে কোথাও যাচ্ছে। তিনি তাদের কাছে ঘণ্টাটা কিনে নিতে চাইলেন। তারা তাঁর কাছে ঘণ্টা কেনার কারণ জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, আমরা নামাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে সবাইকে একত্রিত করতে চাই, কিন্তু কোন নিয়মে সবাইকে একই সময়ে একত্রিত করবো তা ভেবে ঠিক করতে পারছি না কেউ। তাই তোমাদের এই ঘণ্টা কিনে নিতে চাইছি, যেন ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে একত্রিত করতে পারি।
তাঁর কথা শুনে সেই কাফেলার লোকেরা বললো, নামাজের জন্য সবাইকে একত্রিত করতে এই ঘণ্টা কেনার দরকার নেই, আমরা তোমাকে কিছু সুন্দর শব্দ শিখিয়ে দিচ্ছি। এইগুলোর মাধ্যমে তোমরা নামাজের সময় সবাইকে ডাকতে পারবে। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ রা.-কে আজানের শব্দগুলো শিখিয়ে দেওয়া হয়।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি রাসূল সা.-এর কাছে গেলেন এবং স্বপ্নের ঘটনা বিস্তারিত জানালেন। তাঁর স্বপ্নে কথা শুনে হজরত ওমর ফারুক রা. বললেন, আমিও স্বপ্নে হুবহু এই শব্দগুলো শুনেছি।
আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ, ওমর রা. ছাড়াও আরও একাধিক সাহাবি সেই রাতে একই স্বপ্ন দেখেন। সবার কথা শুনে রাসূল সা. এই শব্দগুলোর মাধ্যমেই আজান দেওয়ার অনুমোদন দিলেন এবং বিলাল রা.-কে ডেকে আজান দিতে বললেন। এভাবেই মুসলিম সমাজে আজানের প্রচলন শুরু হয়েছে । (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮)