ঈদের রাতের আমল ও ফজিলত
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। টানা একমাস সংযমে থেকে পরিশুদ্ধ হৃদয়ে কলুষমুক্ত জীবন, পরিবার ও সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে একে অপরকে পরমাবেগে বুকে জড়িয়ে ধরার নামই হলো ঈদ। রমজানের বরকত লাভের জন্য ত্যাগ, কষ্ট-ক্লেশ ও আয়াস সাধ্য-সাধনার পর বহুল প্রতীক্ষিত ঈদ আমাদের জীবনে বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ ও সুখসমৃদ্ধি।
এ আনন্দ পরকালীন জীবনের জন্যে শান্তি ও মুক্তি লাভের এক অনন্য আধ্যাত্মিক অনুভূতির। তাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমাময় রমজান শেষে আকাশে শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখামাত্রই খুশির জোয়ার বয়ে যায় প্রতিটি রোজাদারের দেহ মনে। এ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার মাঝে। প্রতিটি প্রাণে দোলা দেয় ঈদের আনন্দ।
ঈদের দিন যেমন বিশেষ কিছু আমল আছে, তেমনি আছে— ঈদের আগের রাতেও। ঈদের আগের রাতের বিশেষ কিছু আমল সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
ঈদের আগে অবশ্যই ফিতরা আদায়
পবিত্র রমজানের ইবাদতের মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অন্যতম একটি ইবাদত। রমজানের রোজার ভুল-ত্রুটি পরিপূর্ণতার জন্যেই এটি আবশ্যক করা হয়েছে। সদকাতুল ফিতর হলো নামাজের সিজদায়ে সাহুর মতো। অর্থাৎ নামাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সিজদায়ে সাহু যেমন এটার পূর্ণতা দেয়, তেমনি রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সদকাতুল ফিতর দ্বারা এর প্রতিকার হয়।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর আদায় করাকে ওয়াজিব করেছেন। এর পরিমাণ হলো এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার উপরই এটি আদায় করা আবশ্যক। (বুখারি, হাদিস : ১৫১২)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা পালনকারীর জন্যে সদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন, যা রোজা পালনকারীর অনর্থক, অশ্লীল কথা ও কাজ পরিশুদ্ধকারী এবং অভাবী মানুষের জন্যে আহারের ব্যবস্থা। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে এটা আদায় করবে, তা সদকাতুল ফিতর হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে ঈদের সালাতের আদায় করবে, তা অপরাপর নফল সদকা হিসেবে গৃহীত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)
নতুন চাঁদ দেখা ও দোয়া পড়া
মহিমাময় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নাত। তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়াটি পাঠ করতেন—
اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২৬)
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য বর্ণনায় দোয়াটি এভাবেই এসেছে-
اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ وَالتَّوْفِيْقِ لِما تُحِبُّ وَتَرْضَى رَبِّيْ وِرَبُّكَ اللهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিক; লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদ্বা, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। (সুনানে দারিমি, হাদিস : ১৬৯৭)
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলাম এবং যে জিনিসটি আপনি পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হোন— সেটার তাওফিকের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ।
ঈদের রাতে নফল ইবাদত
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের বার্তা যেমন নিয়ে আসে, তেমনি নিয়ে আসে আল্লাহর নৈকট্যলাভের মহাসুযোগ। বিশেষত ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতমন্ডিত। হাদিসে এসেছে-
আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাল্লাহু হতে বর্ণিত, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধূমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের জন্য দুই ঈদের রাত জেগে ইবাদতে মাশগুল হবে, কিয়ামতের কঠিনের দিনেও তার অন্তর মরবে না, যেদিন ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় পরিস্থতির কারণে মানুষের অন্তর মারা যাবে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস :১৭৮২)