পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেভাবে এলো
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ ও অন্যতম ফরজ বিধান। ঈমানের পর একজন মুসলমানকে প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় করতে হয়। মেরাজের রাতে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে নামাজ উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এজন্য নামাজকে মুমিনের মেরাজ বলা হয়।
মেরাজের রাতে মহানবী সা. কীভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার পেয়েছিলেন তা নিয়ে হাদিসে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মেরাজের রাতে নামাজ ফরজ বিষয়ক হাদিসে হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আবু জার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেছেন—
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদিন আমি মক্কায় ঘুমিয়ে ছিলাম, এ সময় আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হলো। এরপর জিবরাঈল আ. এসে জমজমের পানি দিয়ে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর হিকমাত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। এরপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন।
যখন দুনিয়ার আকাশে আসলাম জিবরাঈল আ. আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। আসমানের রক্ষক বললেন, কে আপনি? জিবরাঈল আ. বললেন, আমি জিবরাঈল । (আকাশের রক্ষক) বললেন, আপনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন কি? জিবরাঈল আ. বললেন, হাঁ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছেন।
আসমানের রক্ষক বললেন, তাকে কি ডাকা হয়েছে? জিবরাঈল আ. বললেন, হাঁ। আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমানকে খুলে দেয়া হলো, আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করে দেখলাম সেখানে এমন এক ব্যক্তি বসে আছেন, যার ডান পাশে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি আর বাম পাশে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন হেসে উঠছেন আর যখন বাম দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন। এরপর তিনি বললেন, স্বাগতম হে সৎ নবী ও সৎ সন্তান।
আমি (রাসূলুল্লাহ) জিবরাঈল আ.-কে বললাম, কে এই ব্যক্তি? তিনি জবাব দিলেন, ইনি হচ্ছেন আদম আ.। আর তার ডানে বামে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রূহ। তাদের মধ্যে ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বাম দিকের লোকেরা জাহান্নামী। ফলে তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন।
এরপর জিবরাঈল আ. আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। তার রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। তখন এর রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেওয়া হল।
আনাস রা. বলেন, আবু জার রা. উল্লেখ করেন যে, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানসমূহে আদম, ইদরীস, মূসা, ঈসা এবং ইবরাহিম (আলাইহিমুস সালাম)-কে পান। কিন্তু আবু যার তাদের স্থানসমূহ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। তবে এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আদম আ.-কে দুনিয়ার আকাশে এবং ইবরাহিম আ.-কে ষষ্ঠ আসমানে পান।
আরও পড়ুন
আনাস রা বলেন, জিবরাঈল আ. যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ইদরীস আ.-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন তখন ইদরিস আ. বলেন, মারহাবা হে সৎ ভাই ও পুণ্যবান নবী। আমি (রাসূলুল্লাহ) বললাম, ইনি কে? জিবরাঈল আ. বললেন, ইনি হচ্ছেন ইদরিস আ.।
এরপর আমি মুসা আ.-এর কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, মারহাবা হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরাঈল আ. বললেন, ইনি মুসা আ.। এরপর আমি ঈসা আ.-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, মারহাবা হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরাঈল আ.বললেন, ইনি হচ্ছেন ঈসা আ.। এরপর আমি ইবরাহিম আ.-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, মারহাবা হে পুণ্যবান নবী ও নেক সন্তান। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরাঈল আ.বললেন, ইনি ইবরাহিম আ.।
ইবনু শিহাব বলেন, ইবনু হাযম রহ. আমাকে জানিয়েছেন যে, ইবনু আব্বাস ও আবু হাববা আল-আনসারী বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এরপর আমাকে আরও উপরে উঠানো হল, এমন এক সমতল স্থানে এসে আমি উপনীত হলাম যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পাই।
ইবনু হায্ম ও আনাস ইবনু মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারপর আল্লাহ আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। ফেরার পথে মুসা আ.-এর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসা করেন—
আল্লাহ তায়ালা আপনার উম্মাতের উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান, কারণ, আপনার উম্মত তা আদায় করতে পারবে না।
আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ তায়ালা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। ফেরার সময় আমি মুসা আ.-কে বললাম, কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আরও আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মাত এই পরিমাণও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা আ.-কে গিয়ে জানালাম। এবারও তিনি নামাজের পরিমাণ কমিয়ে আনার কথা বললেন।
আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোন রদবদল হয় না। আমি আবারো মুসা আ.-এর কাছে এলে তিনি আমাকে আবারো বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে পুনরায় যান। আমি বললাম, পুনরায় আমার প্রতিপালকের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এরপর জিবরাঈল আ. আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে আবৃত ছিল, যার তাৎপর্য আমি অবগত ছিলাম না। এরপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলে আমি দেখলাম, সেখানে অনেক মুক্তোমালা রয়েছে আর তার মাটি কস্তুরীর তৈরি।
(বুখারি, হাদিস : ১৬৩৬, ৩৩৪২; মুসলিম, হাদিস :৭৪, ১৬৩, আহমাদ, হাদিস : ২১১৯৩)