কিয়ামতের দিন দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতা নিয়ে যা বলেছেন বিশ্বনবী সা.
দায়িত্ব— মোটামুটি সবার জীবনের আছে। প্রাপ্ত বয়স্ক ও পরিণত বয়সে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কিংবা পরিস্থিতির চাপে পড়ে সবারই কিছু না কিছু দায়িত্ব নিতে হয়। দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা জরুরি। দায়িত্ব পালনে যেন কোনো অবহেলা না হয় তাই দায়িত্ব পালনকারীর জবাবদিহিতার জায়গা থাকা জরুরি।
যখন কোনো ব্যক্তির জন্য জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতা থাকবে তখন তিনি দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের অবহেলা করবেন না। যথাযথভাবে তা পালন করবেন। কারো ওপর জুলুম করবেন না।
যদি প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সজাগ হয় এবং আখিরাতে জবাবদিহির অনুভূতি হৃদয়ে জাগরূক থাকে তাহলে সমাজের সিংহভাগ অভিযোগ ও সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কারণ, নিশ্চয় সে জানে যে, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে, তা সে (কেয়ামতের দিন) দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দকর্ম করলে, তাও সে দেখতে পাবে।’ (সূরা জিলজাল, আয়াত : ৭-৮)
জবাবদিহির অনুভূতি ও দায়িত্বজ্ঞানের তীব্রতা মুসলিম নেতাদের মধ্যে কেমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তা উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর একটি ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। এক দিন তিনি প্রচণ্ড সূর্যতাপে সদকার উটের পরিচর্যা করছিলেন। এমন সময় বনু তামিম গোত্রের নেতা আহনাফ বিন কায়েস ইরাক থেকে একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আসেন। যখন তারা তার নিকটবর্তী হলেন, তখন উমর রা. আহনাফকে ডেকে বললেন,
হে আহনাফ! কাপড়-চোপড় রেখে দ্রুত এসো এবং উট পরিচর্যার ব্যাপারে আমিরুল মুমিনিনকে সাহায্য করো। কেননা এগুলো সদকার উট। এর মধ্যে এতিম-মিসকিন ও বিধবাদের হক রয়েছে।
তখন একজন বলল, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি সদকা খাতের কোনো একজন কর্মীকে এ কাজের নির্দেশ দিলেই তো যথেষ্ট ছিল। জবাবে উমর রা. বললেন, আমার চেয়ে ও আহনাফের চেয়ে বড় গোলাম আর কে আছে? কেননা যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোনো দায়িত্বে থাকে, তার ওপর ওভাবে দায়িত্ব পালন করা ওয়াজিব, যেভাবে মনিবের প্রতি একজন গোলামের দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক।’ (তারিখু উমর লি-ইবনিল জাওজি, পৃষ্ঠা : ৮৯)
এজন্য দায়িত্বশীলদের নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এক হাদিসে হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর তোমরা প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। জনগণের আমীরও একজন দায়িত্বশীল সে তার প্রজাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
একজন পুরুষ তার পরিবারস্থ লোকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন স্ত্রীলোক তার স্বামীর ঘরের তত্ত্বাবধায়ক সে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। গোলাম তার মালিকের ধন-সম্পদের ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক এতদ্বিষিয়ে সে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ২৫৫৪)।