সুখে-দুঃখে আল্লাহর ওপর মুমিনের ভরসা যেমন হবে
সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষের জীবন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুঃখের পরেই সুখ দেন। আবার কখনো সুখ-স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপনের পর দুঃখের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন।
তাই সুখ-দুঃখ-সর্বাবস্থায় মুমিন-মুসলমানের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা, নিরাশ না হওয়া।
আল্লাহ তায়ালা যখন বান্দাকে সুখ-দুঃখ দিয়ে পরীক্ষা করেন তখন ঈমানদার ও সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ঈমানের স্তরভেদে আল্লাহর ওপর ভরসা, কৃতজ্ঞার মাঝে পার্থক্য দেখা দেয়। অর্থাৎ, মুমিন ও সাধারণ মুসলমানের ভরসার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মানুষের এই স্বভাব ও ঈমানের স্তরের ভিত্তিতে তার পাথ্যর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সাধারণ মানুষ সুখের পর কোনো দুঃখ, কষ্টে পতিত হলে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে এবং মহান আল্লাহর প্রতি বদ ধারণা পোষণ করতে শুরু করে। তার আচার-আচরণে এমন ভাব ফুটে উঠে, এতে মনে হয় যেন ইতোপূর্বে সে কখনো কোনো আরাম বা সুখ ভোগ করেনি। অথবা এই দুঃখ-কষ্টের পর আবারো যে তার জীবনে কখনো সুখের দিন ফিরে আসতে পারে তা সে কখনো আশাও করতে পারে না।
আরও পড়ুন
এর বিপরীতে দুঃখ-কষ্টের পর যদি তার জীবনে সুখ শান্তি ফিরে আসে তখন সে বলতে শুরু করে যে, দুঃসময় তার ওপর থেকে সরে গেছে। এ কথা বলে সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং অন্যদের ওপর গর্ব করতে থাকে। এরপর আবার যে, তার ওপর দুঃখ-বিপদ নেমে আসতে পারে এ সম্পর্কে সে বেখেয়াল ও নিশ্চিন্ত হয়ে পড়ে।
তবে যারা মুমিন তারা এই বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত। তারা দুঃখ-দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ করে এবং সুখ ও আরামের সময় মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ও তাঁর অনুগত হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এর বিনিময়ে ক্ষমা ও বড় পুরস্কার দেন।
এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্ত্বার কসম। মুমিনের ওপর এমন কোনো কষ্ট, বিপদ, দুঃখ ও চিন্তা পতিত হয় না, যার কারণে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ না করেন, এমন কি একটা কাঁটা ফুটলেও। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১, ৫৬৪২, মুসলিম, হাদিস : ২৫৭৩)।
আরেক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন, মুমিনের জন্য আল্লাহর প্রত্যেকটা ফয়সালা কল্যাণকর হয়ে থাকে। সে সুখ-শান্তির সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয় এবং দুঃখ-কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করে ফলে তখনও সে কল্যাণ লাভ করে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)
পবিত্র কোরআনে মুমিন ও সাধারণ মুসলমানের স্বভাবের এই পার্থক্য নিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
وَلَئِنۡ اَذَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنَّا رَحۡمَۃً ثُمَّ نَزَعۡنٰہَا مِنۡہُ ۚ اِنَّہٗ لَیَـُٔوۡسٌ کَفُوۡرٌ ٩ وَلَئِنۡ اَذَقۡنٰہُ نَعۡمَآءَ بَعۡدَ ضَرَّآءَ مَسَّتۡہُ لَیَقُوۡلَنَّ ذَہَبَ السَّیِّاٰتُ عَنِّیۡ ؕ اِنَّہٗ لَفَرِحٌ فَخُوۡرٌ ۙ ١۰ اِلَّا الَّذِیۡنَ صَبَرُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّاَجۡرٌ کَبِیۡرٌ ١١
আর যদি আমি মানুষকে আমার পক্ষ থেকে রহমত আস্বাদন করাই ও পরে তার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেই তবে তো নিশ্চয় সে হয়ে পড়ে হতাশ ও অকৃতজ্ঞ।
আর তাকে বিপদ-আপদ স্পর্শ করার পর আমি যদি তাকে নেয়ামাতের স্বাদ গ্রহণ করাই তখন সে বলতে শুরু করে, আমার সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে গেল। (আর) সে গর্ব করতে থাকে, আত্মপ্রশংসা করতে থাকে।
কিন্তু যারা ধৈর্য ধারণ করে ও ভাল কাজ করে এমন লোকদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং বিরাট প্রতিদান। (সূরা হুদ, আয়াত : ৯-১১)