নূহ আ. নিজ সম্প্রদায়কে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন
হজরত নূহ আ.-এর জাতিই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম শিরক ও মূর্তিপূজা শুরু করেছিল। তাদেরকে শিরক থেকে বিরত রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা নূহ আ.-কে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি নবী হিসেবে আগমনের পর তাদের কাছে এসে এই আহ্বান করেছিলেন যে—
তোমরা গায়রুল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ করো, যদি তা না করো, তাহলে আল্লাহর শাস্তি তোমাদের ওপর পতিত হবে। তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত করো। তার বিরুদ্ধাচারণ করো না, যদি আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করো, তাহলে আমি তোমাদের ওপর কিয়ামতের দিনের যান্ত্রণাদায়ক শাস্তির আশঙ্কা করছি।
পবিত্র কোরআনে এই বিষয়টি এভাবে বর্ণিত হয়েছে—
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِهٖۤ ۫ اِنِّیۡ لَكُمۡ نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ اَنۡ لَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّا اللّٰهَ ؕ اِنِّیۡۤ اَخَافُ عَلَیۡكُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ اَلِیۡمٍ
আর আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, (নূহ বলল) আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট ভয় প্রদর্শনকারী, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না; আমি তোমাদের ওপর এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির আশংকা করছি। (সূরা হুদ, আয়াত : ২৫-২৬)
নূহ আলাইহিস সালাম তার জাতিকে ঈমানের এই দাওয়াত দেওয়ার পর তাঁর জাতি তাঁর নবুওয়াত ও রেসালাতের ওপর কয়েকটি আপত্তি উত্থাপন করেছিল। নুহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে তাদের প্রতিটি উক্তির উপযুক্ত জবাব দান করেন।
আরও পড়ুন
তাদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলো ছিল, তারা বললো—
হে নূহ! তুমি তো কোনো ফেরেশতা নও। তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব যে আমাদের সবাইকে বাদ দিয়ে শুধু তোমার মতো একজন মানুষের কাছে আল্লাহর ওহী আসবে?
আর আমরা তো স্বচক্ষে দেখছি যে, ইতর শ্রেণীর লোকেরাই শুধু তোমার দলে যোগ দিচ্ছে। কোনো ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত লোক তোমার দলভুক্ত নয়। যারা তোমার দলে যোগ দিচ্ছে তারা কিছু না বুঝেই তোমার মজলিসে উঠাবসা করছে এবং তোমার কথায় হ্যাঁ বলছে।
আমরা ভালোভাবে খেয়াল করেছি তোমার নতুন ধর্ম তোমাদের কোনো উপকারেই আসছে না। এরফলে তোমাদের কোনো আর্থিক উন্নতি হচ্ছে না।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
فَقَالَ الۡمَلَاُ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِهٖ مَا نَرٰىكَ اِلَّا بَشَرًا مِّثۡلَنَا وَ مَا نَرٰىكَ اتَّبَعَكَ اِلَّا الَّذِیۡنَ هُمۡ اَرَاذِلُنَا بَادِیَ الرَّاۡیِ ۚ وَ مَا نَرٰی لَكُمۡ عَلَیۡنَا مِنۡ فَضۡلٍۭ بَلۡ نَظُنُّكُمۡ كٰذِبِیۡنَ
অতঃপর তার সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সব নেতৃস্থানীয় লোক কাফির ছিল তারা বলতে লাগলঃ আমরাতো তোমাকে আমাদেরই মত মানুষ দেখতে পাচ্ছি; আর আমরা দেখছি যে, শুধু ঐ লোকেরাই তোমার অনুসরণ করছে যারা আমাদের মধ্যে নিতান্তই হীন ও ইতর, কোন রকম চিন্তা-ভাবনা না করেই; আর আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্বও আমরা দেখছিনা, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে মনে করছি। (সূরা হুদ, আয়াত : ২৭)
তাদের এমন আপত্তির জবাবে নূহ আ. যা বলেছিলেন তা পবিত্র কোরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে—
قَالَ یٰقَوۡمِ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ کُنۡتُ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّیۡ وَاٰتٰىنِیۡ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِہٖ فَعُمِّیَتۡ عَلَیۡکُمۡ ؕ اَنُلۡزِمُکُمُوۡہَا وَاَنۡتُمۡ لَہَا کٰرِہُوۡنَ ٢٨ وَیٰقَوۡمِ لَاۤ اَسۡئَلُکُمۡ عَلَیۡہِ مَالًا ؕ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلَی اللّٰہِ وَمَاۤ اَنَا بِطَارِدِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ؕ اِنَّہُمۡ مُّلٰقُوۡا رَبِّہِمۡ وَلٰکِنِّیۡۤ اَرٰىکُمۡ قَوۡمًا تَجۡہَلُوۡنَ ٢٩ وَیٰقَوۡمِ مَنۡ یَّنۡصُرُنِیۡ مِنَ اللّٰہِ اِنۡ طَرَدۡتُّہُمۡ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ ٣۰ وَلَاۤ اَقُوۡلُ لَکُمۡ عِنۡدِیۡ خَزَآئِنُ اللّٰہِ وَلَاۤ اَعۡلَمُ الۡغَیۡبَ وَلَاۤ اَقُوۡلُ اِنِّیۡ مَلَکٌ وَّلَاۤ اَقُوۡلُ لِلَّذِیۡنَ تَزۡدَرِیۡۤ اَعۡیُنُکُمۡ لَنۡ یُّؤۡتِیَہُمُ اللّٰہُ خَیۡرًا ؕ اَللّٰہُ اَعۡلَمُ بِمَا فِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ ۚۖ اِنِّیۡۤ اِذًا لَّمِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ٣١
নূহ বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমাকে একটু বল তো, আমি যদি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত এক উজ্জ্বল হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি বিশেষভাবে নিজের পক্ষ থেকে এক রহমত (অর্থাৎ নবুওয়াত) দান করেন কিন্তু তোমাদের তা উপলব্ধিতে না আসে, তবে কি আমি তোমাদের উপর তা জবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেব, যখন তোমরা তা অপছন্দ কর?
হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর (অর্থাৎ এই তাবলীগের) বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনও সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিকের দায়িত্ব আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপর নয়। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমি তাড়িয়ে দিতে পারি না। নিশ্চয়ই তারা তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাত করবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা অজ্ঞতাসুলভ কথা বলছ।
হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই, তবে আমাকে আল্লাহর (ধরা) থেকে কে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না?
আমি তোমাদেরকে বলছি না যে, আমার হাতে আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার আছে, এবং এটাও নয় যে, আমি গায়েব জানি এবং আমি একথাও বলছি না যে, আমি কোনও ফেরেশতা।
তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয়, তাদের সম্পর্কে আমি একথা বলতে পারি না যে, আল্লাহ তাদেরকে কোনও মঙ্গল দান করবেন না। তাদের অন্তরে যা-কিছু আছে, তা আল্লাহই সর্বাপেক্ষা বেশি জানেন। আমি তাদের সম্পর্কে এরূপ কথা বললে নিশ্চয়ই আমি জালিমদের মধ্যে গণ্য হব। (সূরা হুদ, আয়াত : ২৮-৩১)