রমজানের এমন সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না
দেখতে দেখতে রমজান প্রায় ফুরিয়ে এলো। শেষ দশক চলছে এখন। রমজান বরাবরের মতোই মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র আনন্দ-উচ্ছ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি ও দান-খায়রাতের মহিমান্বিত মাস। এই মাসে সবার ভেতর একটা ভিন্ন রকম পরিবর্তন আসে। বিপুল সওয়াব লাভের প্রত্যাশায় প্রত্যেকেই আমল-আজকারে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু এরপরও কেউ কেউ অনাহুত কারণে রমজানের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হন।
মহা কল্যাণ ও সৌভাগ্যের রমজানের বাকি দিনগুলো সার্থক ও ফলপ্রসূ করতে অত্যন্ত চমৎকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ। তার সংক্ষিপ্ত পরামর্শ ও উৎসাহমূলক লেখাটি পাঠকের বেশ উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সেই কারণে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লেখাটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো। -বিভাগীয় সম্পাদক
কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন দিনমজুররা। তাদের ধৈর্য ও সংযম পরীক্ষা করার জন্যে দেশের প্রথম সারির একটি শিল্প-প্রতিষ্ঠান অবিশ্বাস্য বড় অফার ঘোষণা করেছে। অফারটি হলো- গোটা চৈত্র মাসজুড়ে দিনের বেলায় কোনো পান বা আহার করা যাবে না। বিনিময়ে প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।
একদিকে এতো বিশাল অফার মিস করার মতো বোকা কেউ নন। অপর দিকে চৈত্রের গরমে ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিয়ে কাজ করাও কঠিন। সেজন্য অনেকে গোটা মাস কাজ না করে— আগের সামান্য সঞ্চয় ও ধার-দেনা দিয়ে কোনো মতে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেকে দিনে ডিউটির পরিবর্তে রাতে ডিউটির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে উপার্জন একটু কম হলেও বিশাল অফারে তো পুষিয়ে দেবে বহুগুণ!
অনেকে কোনো মতে দিনে সামান্য কয়েক ঘণ্টা ডিউটি করে— শুধু বেঁচে থাকার আহারটা জোগাড় করার চিন্তা করছেন। মোটকথা, কেউই এতো বিশাল অফার মিস করতে রাজি নন।
উপরের ঘটনাটি কাল্পনিক। এবার চৈত্রের জায়গায় রমজানকে রাখুন। শীর্ষ শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাকে রাখুন এবং ১০ লক্ষের জায়গায় জান্নাতকে রাখুন। তাহলে শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষরা কীভাবে রোজা পালন করবেন— তার উত্তর পেয়ে যাবেন।
সিয়ামের যে ফজিলত ও পুরস্কারের কথা হাদিসে এসেছে, আমরা শুধু সেটাকে তুলনা করে দেখিয়েছি। সিয়াম ভঙ্গের যে ভয়াবহ শাস্তির বিবরণ উঠে এসেছে হাদিসে, সেটার কথা না-ই বা বললাম।
লকডাউনে পুলিশের হয়রানির ভয়ে যেমন এক মাস পরিশ্রম করা ছাড়াও চলার একটা উপায় আমরা বের করে নিই; জাহান্নামের শাস্তির প্রতি সত্যিকারের ঈমান থাকলে— সিয়াম পালনের জন্যও কোনো একটা পথ আমরা ঠিকই বের করে নিতাম।
আজকাল অনেকে কঠিন পরিশ্রমের অজুহাতে রমজানের ফরজ সিয়াম ভঙ্গ করছেন। অথচ রমযানে দিনের বেলায় এমন পরিশ্রম করাই জায়েজ নয়, যার কারণে রোযা ভেঙে ফেলতে হবে। যদি কেউ আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনে থাকেন, তাহলে তার জন্য এই ত্যাগ কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
মহান আল্লাহ আমাদের ঈমান ও মনোবল শক্ত করে দিন। আখিরাতকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য দেওয়ার মতো ঈমানি শক্তি দান করুন।