ইসলামের জন্য জীবন দিয়েছেন যে নারী সাহাবি
শান্তির ধর্ম ইসলাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে একদল মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে। মুসলমানদের মাঝে তারা সাহাবি নামে পরিচিত। আল্লাহ তায়ালার বাণী সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ইসলামের সূচনালগ্নে সাহাবিরা অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছেন। মক্কার কাফেরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছেন তারা। ইসলাম ও আল্লাহর ওপর ঈমানের বিনিময়ে তাদের অনেককে নিজের জীবন বিলাতে হয়েছে।
এ তালিকায় পুরুষদের মতো নারী অবদান কোনো অংশে কম নয়। বরং ইসলামের জন্য প্রথম জীবনদানকারী বা শহীদের তালিকায় রয়েছে একজন নারী সাহাবির নাম। তিনি হজরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.)।
সুমাইয়া রা.-এর পরিচয়
সুমাইয়া ছিলেন একজন হাবশী বা আবিসিনিয়ান (বর্তমান ইথিওপিয়া) কৃষ্ণাঙ্গ নারী। তিনি মক্কার আবু হুজাইফা ইবনে আল-মুগীরা আল মাখযুমির দাসী ছিলেন।
আবু হুজাইফা ইবনে আল-মুগীরা আল মাখযুমি তাকে ইয়ামেনের মাজহাজ গোত্রের আনসি শাখার সন্তান ইয়াসির ইবনে আমির (রা.)-এর বিয়ে দেন।
আরও পড়ুন
ইসলাম গ্রহণের পর নির্যাতন...
ইসলামের সূচনালগগ্নে যারাই ইসলাম গ্রহণ করতেন, তাদেরকে করা হতো অবর্ণনীয় নির্যাতন। অসহায়, দুর্বল ও সমাজের নিম্নবিত্ত, গোলাম-দাস শ্রেণীর মানুষদের ওপর এই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেতো।
সুমাইয়া রা. দাসী ছিলেন। তাই তার ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে এলে তার ওপর চালানো হয় অত্যাচারের স্টিমরোলার। বহিরাগত ও দাস হওয়ার সুমাইয়া রা.-এর পরিবারের ওপর কুরাইশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।
আবু জাহেল ও তার সঙ্গী কুরাইশরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অত্যাচার চালাত। তবে মুহাম্মাদ সা. তার চাচা আবু তালিব ও হজরত আবু বকরের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তার চেষ্টা করেছিলেন।
কুরাইশরা তাদের পরিবারের সবাইকে লোহার বর্ম পরিয়ে প্রচণ্ড রোদে দাঁড় করিয়ে রাখত।
মহানবী সা.-এর শান্ত্বনা
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. বলেন, মুহাম্মাদ সা. তাঁদের অত্যাচারিত অসহায় অবস্থায় দেখে বলেন, ‘হে ইয়াসিরের পরিবারবর্গ, ধৈর্য ধর, ধৈর্য ধর! তোমাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
সুমাইয়া রা.-এর শাহাদাত
প্রতিদিনের মতো সারা দিন অত্যাচারিত হয়ে সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত বাড়ি ফিরলেন। সন্ধ্যায় আবু জাহেল অশালীন ভাষায় গালাগাল করতে থাকল। কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। একপর্যায়ে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে বৃদ্ধা এই নারীর দিকে বর্শা ছুঁড়ে মারে আবু জাহেল। সেটি তাঁর পেটের নিম্নভাগে আঘাত হেনে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে সুমাইয়া (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। লাভ করেন ইসলামের প্রথম শহিদ হওয়ার গৌরবোজ্জ্বল মর্যাদা।
স্বামী ও ছেলের শাহাদাত
ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেছেন, এই অত্যাচারের সময়েই সুমাইয়ার স্বামী ইয়াসির ইবনে আমির ও ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসির শাহাদাত বরণ করেন।