রমজানের শেষ ১০ দিনে যে কাজ করবেন না
রমজানের অপরিসীম ফজিলত অর্জনের জন্য কিছু আমল করতে হয়। একই সঙ্গে ছাড়তে হয় বেশ কিছু বিষয়ও। না হয় সৌভাগ্যের ও মহা কল্যাণের এই মাস নষ্ট হয়ে যায়। সওয়াব ও পুণ্য লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তাই পুরো রমজানে কিছু বিষয় থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।
রমজানের শেষ দশক আসন্ন। তাই যারা প্রথম দিনগুলোতে এই বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারেননি— তারা যেন শেষ দশ দিনে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন কিংবা বিরত থাকেননি— তাদের সহজতার জন্য আমরা দশটি বিষয় উল্লেখ করছি।
সাহরি না খাওয়া
কেউ কেউ সাহরি খান না। আবার কাউকে দেখা যায়, সন্ধ্যারাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নাহ পরিপন্থী। কারণ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি গ্রহণ।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬০৪)
বিলম্বে ইফতার করা
ইফতারের সময় হলে গেলে দ্রুত ইফতার করে নিতে হবে। সাহাবি আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৫)
লাইলাতুল কদর না খোঁজা
রমজান মাসের শেষ দশদিনে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত : ০৪)
রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর খুঁজতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ।’ (বুখারি, হাদিস : ২০২০)
মিথ্যা বলা ও পাপ কাজ করা
রোজাদারের জন্য মিথ্যা না বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা খুব জরুরি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৭)
সুন্নত মোতাবেক না চলা
মুমিনের প্রতিটি আমল সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৮৪৩)
দান-সদকা না করা
রমজান পুণ্য অর্জনের মাস। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরিব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
জাকাত যাদের ওপর ফরজ, তারা হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা রাসুল (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমাজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০২)
অপচয় ও অপব্যয় করা
প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। অনেকে রমজান মাসে ইফতার বা সাহরিতে এমন খরচ করেন, যা করার কোনো প্রয়োজন নেই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বনি আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান কর এবং খাও, পান কর ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
কোরআন খতমে তাড়াহুড়ো করা
তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়লে কোরআনের হক আদায় হয় না। শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য অনেকে এমনটা করেন। বিশেষ করে তারাবিতে খতম শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে পড়ার প্রচলন তো খুব বেশি। এসব করা সম্পূর্ণ অনুচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫২৭)
ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করা: সিয়াম পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী।’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৫)
দোয়া না করে ব্যস্ত থাকা
রোজা অবস্থায় দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। কিন্তু অনেকে দোয়া করেন না। দোয়া না করে অযথা সময় নষ্ট করেন। যেটা কোনোভাবেই উচিত নয়। দোয়া কবুলের ব্যাপারে নবী (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৩/৩৪৫; সিলসিলাতুস সহিহা, আলবানি : ১৭৯৭ )