সূরা নাযিয়াতে ফিরাউনের ঔদ্ধত্য ও পরিণতির আলোচনা
সূরা নাযিয়াতে কিয়ামত, মৃত্যুর পরের জীবনের প্রমাণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে আল্লাহর রাসূলকে মিথ্যা বলার পরিণাম সম্পর্কে সাবধানবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। এ সূরাটিতে পুনরুত্থান বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আসমান জমিন এইসবের অস্তিত্ব না থাকা অবস্থায় যেভাবে তিনি এসব সৃষ্টি করছেন, একইভাবে সব ধ্বংসের পর তিনি আবার তা সৃষ্টি করতে সক্ষম।
এ সূরায় আল্লাহ তায়ালা ঔদ্ধত্য-স্বৈরাচারী ফিরাউনের সত্য থেকে বিমুখ, তার পরিণতি ও তার দরবারে নবী মুসা আ.-এর সত্যের বাণী উপস্থানের বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
এখানে মুসা আ.-এর ঘটনা উপস্থানের কারণ হলো নবীজি হজরত মুহাম্মদ সা.-কে শান্ত্বনা দেওয়া। কারণ, মক্কার কাফেরদের অবিশ্বাস, হটকারিতা ও শক্রতার ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মর্মপীড়া অনুভব করতেন, তা দূর করার উদ্দেশ্যে মূসা আলাইহিস সালাম ও ফিরআউনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, শত্রুরা শুধু আপনাকেই কষ্ট দেয়নি, পূর্ববর্তী সকল রাসূলকেও কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু তাদের পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। সুতরাং আপনিও সবর করুন।
আল্লাহ তায়ালা মুসা আ.-কে নবুওয়ত দিলেন। এরপর তাকে স্বৈরাচার ফিরাউনের কাছে একত্ববাদের বাণী দিয়ে পাঠালেন। মুসা আ. তাকে সত্যের পথে আহ্বান করলেন। তাকে নবুওয়তের মহানিদর্শন দেখালেন। কিন্তু সে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং নিজের রব দাবি করল।
তার এই ঔদ্ধত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে আল্লাহ তাকে এমনভাবে পাকড়াও করলেন যে, আগামীতে দুনিয়ায় আগমনকারী আল্লাহদ্রোহীদের জন্য শিক্ষণীয় ও উপদেশস্বরূপ হয়ে রইল। আর কিয়ামতের আযাব তো তার জন্য আছেই, যা সে সেখানে ভোগ করবে।
আরও পড়ুন
সূরা নাযিয়াত
وَالنّٰزِعٰتِ غَرۡقًا ۙ ١ وَّالنّٰشِطٰتِ نَشۡطًا ۙ ٢ وَّالسّٰبِحٰتِ سَبۡحًا ۙ ٣ فَالسّٰبِقٰتِ سَبۡقًا ۙ ٤ فَالۡمُدَبِّرٰتِ اَمۡرًا ۘ ٥ یَوۡمَ تَرۡجُفُ الرَّاجِفَۃُ ۙ ٦ تَتۡبَعُہَا الرَّادِفَۃُ ؕ ٧ قُلُوۡبٌ یَّوۡمَئِذٍ وَّاجِفَۃٌ ۙ ٨ اَبۡصَارُہَا خَاشِعَۃٌ ۘ ٩ یَقُوۡلُوۡنَ ءَاِنَّا لَمَرۡدُوۡدُوۡنَ فِی الۡحَافِرَۃِ ؕ ١۰ ءَاِذَا کُنَّا عِظَامًا نَّخِرَۃً ؕ ١١ قَالُوۡا تِلۡکَ اِذًا کَرَّۃٌ خَاسِرَۃٌ ۘ ١٢ فَاِنَّمَا ہِیَ زَجۡرَۃٌ وَّاحِدَۃٌ ۙ ١٣ فَاِذَا ہُمۡ بِالسَّاہِرَۃِ ؕ ١٤ ہَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی ۘ ١٥ اِذۡ نَادٰىہُ رَبُّہٗ بِالۡوَادِ الۡمُقَدَّسِ طُوًی ۚ ١٦ اِذۡہَبۡ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّہٗ طَغٰی ۫ۖ ١٧ فَقُلۡ ہَلۡ لَّکَ اِلٰۤی اَنۡ تَزَکّٰی ۙ ١٨ وَاَہۡدِیَکَ اِلٰی رَبِّکَ فَتَخۡشٰی ۚ ١٩ فَاَرٰىہُ الۡاٰیَۃَ الۡکُبۡرٰی ۫ۖ ٢۰ فَکَذَّبَ وَعَصٰی ۫ۖ ٢١ ثُمَّ اَدۡبَرَ یَسۡعٰی ۫ۖ ٢٢ فَحَشَرَ فَنَادٰی ۫ۖ ٢٣ فَقَالَ اَنَا رَبُّکُمُ الۡاَعۡلٰی ۫ۖ ٢٤ فَاَخَذَہُ اللّٰہُ نَکَالَ الۡاٰخِرَۃِ وَالۡاُوۡلٰی ؕ ٢٥ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَعِبۡرَۃً لِّمَنۡ یَّخۡشٰی ؕ٪ ٢٦ ءَاَنۡتُمۡ اَشَدُّ خَلۡقًا اَمِ السَّمَآءُ ؕ بَنٰہَا ٝ ٢٧ رَفَعَ سَمۡکَہَا فَسَوّٰىہَا ۙ ٢٨ وَاَغۡطَشَ لَیۡلَہَا وَاَخۡرَجَ ضُحٰہَا ۪ ٢٩ وَالۡاَرۡضَ بَعۡدَ ذٰلِکَ دَحٰىہَا ؕ ٣۰ اَخۡرَجَ مِنۡہَا مَآءَہَا وَمَرۡعٰہَا ۪ ٣١ وَالۡجِبَالَ اَرۡسٰہَا ۙ ٣٢ مَتَاعًا لَّکُمۡ وَلِاَنۡعَامِکُمۡ ؕ ٣٣ فَاِذَا جَآءَتِ الطَّآمَّۃُ الۡکُبۡرٰی ۫ۖ ٣٤ یَوۡمَ یَتَذَکَّرُ الۡاِنۡسَانُ مَا سَعٰی ۙ ٣٥ وَبُرِّزَتِ الۡجَحِیۡمُ لِمَنۡ یَّرٰی ٣٦ فَاَمَّا مَنۡ طَغٰی ۙ ٣٧ وَاٰثَرَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا ۙ ٣٨ فَاِنَّ الۡجَحِیۡمَ ہِیَ الۡمَاۡوٰی ؕ ٣٩ وَاَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّہٖ وَنَہَی النَّفۡسَ عَنِ الۡہَوٰی ۙ ٤۰ فَاِنَّ الۡجَنَّۃَ ہِیَ الۡمَاۡوٰی ؕ ٤١ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰہَا ؕ ٤٢ فِیۡمَ اَنۡتَ مِنۡ ذِکۡرٰىہَا ؕ ٤٣ اِلٰی رَبِّکَ مُنۡتَہٰىہَا ؕ ٤٤ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُنۡذِرُ مَنۡ یَّخۡشٰہَا ؕ ٤٥ کَاَنَّہُمۡ یَوۡمَ یَرَوۡنَہَا لَمۡ یَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا عَشِیَّۃً اَوۡ ضُحٰہَا ٪
সূরা নাযিয়াত অনুবাদ
শপথ তাদের (অর্থাৎ সেই ফেরেশতাদের), যারা (কাফেরদের প্রাণ) কঠোরভাবে টেনে বের করে। এবং যারা (মুমিনদের প্রাণের) বন্ধন খোলে কোমলভাবে। তারপর (শূন্যে) তীব্রগতিতে সাতার কেটে যায়। তারপর দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়। তারপর যে আদেশ পায় তার (বাস্তবায়নের) ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যে দিন প্রকম্পিতকারী (শিঙ্গাধ্বনি সবকিছু) কাঁপিয়ে দেবে। তার পেছনে আসবে পরবর্তীটি।
সে দিন বহু হৃদয় হবে প্রকম্পিত। তাদের চোখ থাকবে অবনত। তারা (কাফেরগণ) বলে, আমাদেরকে কি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে? আমরা যখন গলিত অস্থিতে পরিণত হব তখনও কি? তারা বলে, তাহলে তো সেটা বড় ক্ষতির প্রত্যাবর্তন। বস্তুত তা একটি মাত্র বিকট আওয়াজই হবে। অমনি তারা খোলা মাঠে আবির্ভূত হবে।
(হে রাসূল!) তোমার কাছে কি মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে? যখন তার প্রতিপালক তাকে পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় ডাক দিয়ে বলেছিলেন, ফিরাউনের কাছে যাও, সে বড় ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। তাকে বল, তোমার কি এ আগ্রহ আছে যে, তুমি শুধরে যাবে? এবং আমি তোমাকে দেখাব তোমার প্রতিপালকের পথ, যাতে তুমি তাকে ভয় কর? অতঃপর মূসা তাকে দেখাল মহা নিদর্শন। তবুও সে (তাকে) অস্বীকার করল ও অমান্য করল। তারপর প্রতিবিধানের চেষ্টা করতে ফিরে গেল।
তারপর সকলকে সমবেত করল এবং উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করল, বলল, আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক। বলল, আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক। পরিণামে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করলেন আখেরাত ও দুনিয়ার শাস্তিতে। বস্তুত যে আল্লাহর ভয় করে তার জন্য এ ঘটনার মধ্যে অবশ্যই শিক্ষা আছে।
(হে মানুষ!) তোমাদেরকে সৃষ্টি করা বেশি কঠিন, না আকাশকে। আল্লাহ তা নির্মাণ করেছেন। তিনি তার উচ্চতা উত্তোলন করেছেন, তারপর তা সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি তার রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং তার দিনের আলো প্রকাশ করেছেন। এবং তারপর পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। তা থেকে তার পানি ও তৃণ বের করেছেন। এবং পর্বতসমূহকে প্রোথিত করেছেন। তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের পশুদের ভোগের জন্য।
অতঃপর যখন মহা বিপর্যয় সংঘটিত হবে। যে দিন মানুষ তার যাবতীয় কৃতকর্ম স্মরণ করবে। এবং প্রত্যেক দর্শকের সামনে জাহান্নামকে প্রকাশ করা হবে। তখন যে ব্যক্তি অবাধ্যতা করেছিল, এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছিল, জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা।
আর যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় পোষণ করত এবং নিজেকে মন্দ চাহিদা হতে বিরত রাখত, জান্নাতই হবে তার ঠিকানা।
তারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে যে, তা কখন সংঘটিত হবে? এ বিষয়ে আলোচনা করার সাথে তোমার কী সম্পর্ক? এর চূড়ান্ত জ্ঞান তো তোমার প্রতিপালকেরই। যে ব্যক্তি তার ভয় রাখে তুমি কেবল তার সতর্ককারী। যে দিন তারা তা দেখতে পাবে সে দিন তাদের মনে হবে, যেন তারা (দুনিয়ায় বা কবরে) এক সন্ধ্যা বা এক সকালের বেশি অবস্থান করেনি।