হজ-ওমরা যাত্রীরা যাত্রাপথে যা করবেন
বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ হজ-ওমরা করতে মক্কায় যান। নিজ দেশ থেকে মক্কায় পৌঁছা পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মানুষের হজ-ওমরা পালনের বিষয়টি পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এইভাবে বর্ণনা করেছেন—
وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡ
আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ, আয়াত : ২৭)
ইবনে আবী হাতেম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে হজ ফরজ হওয়ার কথা ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয়, তখন তিনি আল্লাহ তায়ালাকে বললেন. এখানে তো জনমানবহীন প্রান্তর। ঘোষণা শোনার মত কেউ নেই; যেখানে জনবসতি আছে। সেখানে আমার আওয়াজ কিভাবে পৌছবে?
জবাবে আল্লাহ তায়ালা বললেন, আপনার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা। বিশ্বে পৌছানোর দায়িত্ব আমার। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলে আল্লাহ তায়ালা তা উচ্চ করে দেন।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনের মাধ্যমে মুসলিম জাতির কাছে সেই ঘোষণা পৌঁছে দিয়েছেন। তাইতো কাবায় গিয়ে রবের সামনে উপস্থিত হতে ব্যাকুল হয়ে উঠেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানেরা। পুরো বছর ওমরা পালনে মক্কায় যান ওমরাপালনকারীরা।
মক্কায় বিশ্ব মুসলিমের ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায় হজ মৌসুমে। হজের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় হজযাত্রীদের। অধিকাংশ হজযাত্রীই নিজ দেশের এয়াপোর্টেই ইহরামের পোশাক পরেন।
হজ-ওমরায় যাত্রাপথে করণীয়
দীর্ঘ পথে তারা বিভিন্নভাবে সময় কাটান। তবে একজন হজ-ওমরাযাত্রী ভ্রমণের সময়টা যেভাবে কাটাতে পারেন তার বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হলো—
>>অনর্থক কথা-কাজ এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থনযোগ্য নয় এমন কথা-কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। পুরো যাত্রাপথে যতটুকু সম্ভব আল্লাহর জিকির, কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত।
>> এ সময় এমন বই বা কিতাবাদিও পড়া যেতে পারে যেখানে হজ-ওমরার বিভিন্ন বিধান ও আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এমন বইও পড়া যেতে পারে যা নিজের আত্মশুদ্ধি ও পরকালের জীবনের জন্য সহায়ক।
>> কোনোভাবেই গুনাহের কথাবার্তা বা কাজ করা যাবে না এবং জাতীয় কিছুতে জড়ানো যাবে না।
>> বিমানে মুভি-সিনেমা অনর্থক ভিডিও দেখা যাবে না।
আরও পড়ুন
হজ-ওমরার গুরুত্ব
হজ ও ওমরা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি ইবাদত। হজ সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর জীবনে একবার ফরজ। ফরজ হজের বাইরে একজন মুসলমান যতবার ইচ্ছা হজ করতে পারেন। তবে হজের ইবাদতগুলো জিলহজ মাসের দ্বিতীয় দশকে মোট পাঁচ দিন (৮-১২ জিলহজ) পালন করা হয়।
অপরদিকে ওমরা একটি সুন্নত আমল। হজের পাঁচদিন ছাড়া বছরের যেকোনো সময় ওমরা পালন করা যায়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হজ ও ওমরা পালনের কথা বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে,
وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰهِ
আর হজ ও ওমরা আল্লাহর জন্য পূর্ণ কর। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৯৬)
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
نَّ الصَّفَا وَ الۡمَرۡوَۃَ مِنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ ۚ فَمَنۡ حَجَّ الۡبَیۡتَ اَوِ اعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِ اَنۡ یَّطَّوَّفَ بِهِمَا ؕ وَ مَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ شَاکِرٌ عَلِیۡمٌ
‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম, তাই যারা হজ করবে বা ওমরা করবে; তারা এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ (সাঈ) করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৮)
হজ-ওমরার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরা একটার পর অপরটা করো। কেননা, হজ ও ওমরা দারিদ্র্য বিমোচন ও গুনাহ দূর করে দেয় ঠিক সেভাবে, যেভাবে হাঁপরের আগুন লোহা, সোনা ও রুপা থেকে ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
অপর এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘এক ওমরা থেকে পরবর্তী ওমরা পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহগুলোর জন্য কাফফারা স্বরূপ।’ (বুখারি, হাদিস : ১৬৮৩, মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫)।