শায়খ মাজিদ সাঈদ বিন মাসউদ উসমানি আর নেই
সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা মুকাররামায় কাবাঘর সংলগ্ন মাদরাসা সাওলাতিয়ার পরিচালক মাওলানা মাজিদ সাঈদ বিন মাসউদ উসমানি বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) মক্কায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তিনি খ্রিস্টান মিশনারিদের বিপক্ষে বিজয়ী মহান বিতার্কিক, জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ ইজহারে হকের লেখক ও মাদরাসা সৌতালিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা রহমতুল্লাহ কিরানভি (রহ.)-এর নাতি ছিলেন।
১৮৭৩ সালে এক বাঙালি দ্বীনদার মহীয়সী নারী সাওলাতুন নিসা বেগমের বিপুল অর্থায়নে তার নামে মাওলানা রহমতুল্লাহ কিরানভি (রহ.) হারামে কাবাসংলগ্নে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাদরাসাতুস সাওলাতিয়া। জানা যায়, আরব ব-দ্বীপে প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে প্রচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। এর আগে এখানে অ্যাকাডেমিক আকৃতিতে এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।
মাওলানা রহমতুল্লাহ কিরানভি (রহ.) ১৮৫৪ সালে হিজরত করে মক্কা মুকাররামায় চলে যান। সেখানে তিনি সংক্ষিপ্ত পরিসরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইলমে তাজবিদের (কোরআনের বিশুদ্ধ পাঠ) শিক্ষা দেন। ওই সময় একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ধারণা জন্মে তার মনে। যেখানে পরিপূর্ণ দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি আরবি ভাষা প্রচার-প্রসারের কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেই সূত্র ধরেই কলকাতার মহীয়সী সেই নারীর অর্থায়নে কাবার পাশে শাবাকিয়া নামক স্থানে এক টুকরো জমি ক্রয় করেন। আর সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় মাদরাসাতুস সাওলাতিয়া মক্কা মুকাররামা। ওই মহীয়সী নারী যতদিন বেঁচে ছিলেন— ততদিন প্রায় সব খরচ তিনি নিজেই বহন করতেন।
মাওলানা রহমতুল্লাহ কিরানভি (রহ.) এর ইন্তেকালের পর এই মাদরাসার পরিচালনার দায়িত্ব নেন উপমহাদেশের অবিসংবাদিত নেতা ও ১৮৫৭ সনে ইংরেজবিরোধী সিপাহী বিদ্রোহের সময় নির্বাচিত আমিরুল মুমিন হজরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.)।
এ মাদরাসাতেই হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) ইলমে তাজবিদের শিক্ষা লাভ করেন। এবং এখানে বসেই এ শাস্ত্রে তার লিখিত সুপ্রসিদ্ধ কিতাব জামালুল কোরআন রচনা করেন।
হিজাজের ইতিহাস বিশ্লেষণ শায়খ হাশিম আল-আমির বলেন, ‘মাওলানা রহমতুল্লাহ কিরানভি (রহ.) ১৮৫৪ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে এখানে এসে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের তাজবিদ শিক্ষা দেন। এরপর ওই সৌতালাতুন্নিসা বেগমের অর্থায়নে ১৮৭৩ঈ সনে প্রতিষ্ঠা করেন মাদরাসাতুল সাওলাতিয়া। এই মাদরাসার ছাত্রদের মাঝে মক্কার হাশেমি রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা শরিফ হুসাইন ও মক্কার শায়খুল উলামাখ্যাত শায়খ আবদুল্লাহ সিরাজসহ প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ঈ সন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত স্থানে বহাল থাকে। এরপর যখন হারাম শরিফের সম্প্রসারণের কাজ হয়— তখন মাদরাসাটি স্থানান্তর করে কাবার দক্ষিণ পাশে কা’কায়্যাহ নামক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটি দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সারা মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে আছে। বর্তমানেও সেই প্রাচীনরীতিতেই প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে সেখানে।
১৯২৬ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ মাদরাসাটি পরিদর্শন করে শিক্ষানীতি দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মিশরের আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাবেলায় এই প্রতিষ্ঠানটি আমার দেশের আজহার।
একবার মরহুম মাওলানা মাজিদ সাঈদ বিন মাসউদ উসমানি বিদগ্ধ গবেষক মাওলানা নূরুল হাসান রাশেদ কান্ধলবির সঙ্গে ভারতের দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় আগমন করেছিলেন। শ্রদ্ধেয় উসতাজ শায়খ সাইয়েদ মুহাম্মদ সালমান হুসাইনি নদভীর সভাপতিত্বে তিনি আমাদের ক্লাসে লেকচার দিয়েছিলেন। তখন সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করে তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন।