হজযাত্রীরা নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করবেন যেভাবে
হজের প্রচলন শুরু হয়েছে মুসলিম জাতির পিতা খলিলুল্লাহ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে। আল্লাহ তায়ালা তাকে আদেশ দিয়েছেন—
এবং মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে (সওয়ার হয়ে), তারা আসবে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে। (সুরা হজ, আয়াত, ২৭)
তবে মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে নবম হিজরি থেকে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে— ‘এই ঘরের হজ করা মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার।’ (সূরা আল ইমরান : ৯৭)
হজ ফরজ হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবারের হজের সফরের আমির বানিয়েছিলেন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে। এই কাফেলায় মোট ৩০০ মুসলিম অংশ নেন। এর আগে হজ ফরজ ছিল না।
আরও পড়ুন
হজের মূল কার্যক্রম পালন করা হয় মূলত জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত। তবে হজের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন মুসলমানেরা। ভিসা, হজের নিবন্ধন, এজেন্সীর সঙ্গে যোগাযোগসহ দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অবলম্বন করতে হয় হজযাত্রীদের। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হজের জন্য মানসিক প্রস্তুতি।
হজ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি মানসিক প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে—
হজের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ধারণা
হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। হজ পালনের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। তা সম্পন্ন করতে বেশ কিছু আমল করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সাঈ, মিনা-মুজদালিয়া ও আরাফার ময়দানে অবস্থান। জামারায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ।
সঠিকভাবে হজ পালনের জন্য এই বিধানগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে একজন হজযাত্রীর। বিভিন্ন বইপত্র, আলেমদের সঙ্গে যোগাযোগ বা হজসম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স থেকে এই বিষয়ে জেনে নিতে হবে আগেই।
কোথায় কী পড়তে হবে...
হজের আমলগুলো করার সময় কোথায় কী পড়তে হবে, কোন দোয়া পড়া, আমল করা জরুরি বা সুন্নত এসব বিষয় জেনে নিতে হবে। এবং হজের সফর শুরুর আগেই এসব মুখস্ত করে নিতে হবে।
শারীরিক শক্তি ব্যয়ের মানসিকতা রাখা
ইসলামের ফরজ ইবাদতগুলোর কিছু মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার কিছু সম্পদের সঙ্গে। কিছু ইবাদত আবার শারীরিক সক্ষমতা ও সম্পদের প্রাচুর্যের সঙ্গে জড়িত। হজের জন্য শারীরিক সক্ষমতা ও সম্পদ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।
তাওয়াফ, সাঈ, জামারায় পাথর নিক্ষেপ, মিনা-মুজদালিফা, আরাফায় অবস্থানের সময় প্রচুর শারীরিক শক্তির এবং কষ্ট করার মানসিকতা রাখতে হবে। আগে থেকেই এভাবে প্রস্ততি নিতে হবে।
নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে
ইসলামে যেকোনো আমলের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত জরুরি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন, প্রত্যেক আমল নিয়তের ওপর নির্ভশীল। (বুখারি : হাদিস ১) এজন্য যেকোনো আমল কবুলের অন্যতম শর্ত হলো নিয়ত শুদ্ধ করা।
হজের ক্ষেত্রে নিয়তের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। কারণ, এখানে যেসব আমল করা হয়, তাতে লোক দেখানোর প্রবণতা রয়েছে ব্যাপক।
হজকে পার্থিব যেকোনও ধরনের খ্যাতির বাইরে রাখতে হবে। অন্যথায় তা রিয়া বা লোক দেখানো আমল বলে গণ্য হবে।
রাসুলুল্লাহ সা. আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এমন হজের তওফিক দাও, যা হবে রিয়া ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা হতে মুক্ত।’ (ইবনে মাজা : হাদিস ৮৯০)
এনটি