রমজানে তাকওয়া অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ ছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
এই আয়াত থেকে আমাদের জন্য স্পষ্ট বার্তা হলো- রোজার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির গুণে গুণান্বিত হওয়া। এখন প্রশ্ন হলো- প্রত্যেক রোজাদার কি মুত্তাকি হয়ে যায়? রোজা রাখলেই কি মানুষের মনে আল্লাহভীতি চলে আসে?
উত্তর হবে- না। নবীজি (সা.) আরও ব্যাখ্যা করে এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার ব্যক্তি রয়েছে, যারা রোজা থেকে শুধুই ক্ষুধা ও তৃষ্ণা পায়। (রোজার ইহকালীন ও পরকালীন উপকারিতা থেকে অনেক দূরে হয় তাদের অবস্থান)। (বায়হাকি)
তাই আমাদের ভাবতে হবে। চিন্তা করতে হবে। আমরা রমজানে কীভাবে তাকওয়া অর্জন করতে পারি? রমজানের মাধ্যমে জীবনের গতি কিভাবে পরিবর্তন করতে পারি? কোরআন ও হাদিসের আলোকে সেরকম কিছু পথচিত্র তুলে ধরছি।
এক. রমজানের মাধ্যমে জীবন বদলের দৃঢ় সংকল্প
দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে যে, এই মাসজুড়ে আমি আল্লাহর আনুগত্যে থাকবো। সকল পাপ ও অন্যায় থেকে দূরে থাকবো। নিজে কোন কোন পাপে জড়িত রয়েছি— ভেবে-চিন্তে তা চিহ্নিত করবো। পহেলা রমজান থেকে সেই পাপগুলো থেকে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে সময় কাটাবো। দিনশেষে সেই পাপ থেকে কতটুকু দূরে থাকতে পেরেছি— তা হিসাব করবো।
দুই. আল্লাহর কাছ থেকে রোজার পুরস্কার লাভের প্রত্যাশা
মকবুল রোজার উপকারিতা তথা পুরস্কারের কথা সর্বদা চোখের সামনে রাখতে হবে। এই পুরস্কারের ঘোষণা আপনার সামনে থাকলেই পূর্ণরূপে রোজা রাখা আপনার জন্য সহজ হবে। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খারাপাভ্যাসও নিয়ন্ত্রণ করে— রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়া অনেক সহজ হবে।
রমজানের পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ইমানের সঙ্গে পুণ্যের আশায় রোজা রাখবে, তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে।’ (বোখারি)
তিন. আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক রোজা রাখতে হবে :
আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে রমজানের দিনে যেভাবে বৈধ বস্তু তথা খাদ্য, পানীয় ও বৈধ যৌনাচার আমরা ত্যাগ করি অনুরূপ আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে আমাদের হারাম তথা অবৈধ কাজও পরিহার করতে হবে। এটাই রমজানের মৌলিক শিক্ষা। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহর নির্দেশ পালনে অভ্যস্থ হওয়া। এই শিক্ষা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে আমাদের তাকওয়া অর্জন।
এই দিকে ইঙ্গিত করে নবিজি (সা.) বলেন, যে মিথ্যা কথা ও মিথ্যায় আবর্তিত কাজ ছাড়বেনা। তার পানাহার ছাড়ার কোনো মূল্য নেই আল্লাহর কাছে। (বুখারি)
চার. রমজানকে কোরআনময় করা
রমজান কোরআনের মাস। কোরআনের ভাষায়, ‘রমজান মাস এই মাসেই মানুষের হিদায়তের জন্য অবতীর্ণ হয় আল কুরআন। ( বাক্বারা-১৮৫)
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) নবীজির কাছে এসে কোরআন শুনতেন।
তাই মুমিন ব্যক্তির উচিত, রমজানে কোরআনচর্চায় ব্যাপক সময় ব্যয় করা। বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা, কোরআনের অর্থ বুঝা ও কোরআনের আয়াতে বর্ণিত বিধানগুলো অনুধাবনের চেষ্টা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, উক্ত পদ্ধতিতে কোরআনচর্চাই রমজানে তাকওয়া অর্জনের কার্যকরী মাধ্যম।
পাঁচ. রমজানে নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়ের অভ্যাস করা
ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ। তাহাজ্জুদের নামাজ নবীজি (সা.) ওপর ফরজ ছিল আর আমাদের জন্য নফল। তথাপি তাহাজ্জুদের নামাজ অতি মর্যাদাকর নামাজ। কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ে শেষ রাতে দোয়া কবুল হয়। যেহেতু তাহাজ্জুদের নামাজ শেষ রাতে আদায় করতে হয়, তাই এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও বান্দার দোয়া কবুল হয়। আর এভাবে তাকওয়া অর্জনে পথে অগ্রসর হতে হবে।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদরে তাওফিক দান করুন।
মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, ককসবাজার