রমজানের শেষ দশক যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
রমজান হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসজুড়ে বিরাজ করে রহমত, বরকত ও ক্ষমার ঘোষণা। তবে এর শেষ দশকের আলাদা গুরুত্ব ও বিশেষত্ব রয়েছে। বেশ কয়েকটি কারণে রমজানের শেষ দশকটি গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো—
লাইলাতুল কদর
রমজানের এই শেষ দশকের মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল কদর তথা ভাগ্য রজনী। কোরআন ও হাদিসে কদর রাতের বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘কদর রজনী হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনীর সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত।’ (সূরা কদর, আয়াত : ৩-৫)
এ রাতে বান্দাদের ওপর আল্লাহর অবারিত রহমত বর্ষিত হয়। তাদের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
প্রত্যেক বেজোড় রাতের কোনো একটি লাইলাতুল কদর হতে পারে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
তাই এ রাত অন্বেষণে আমাদের যেমন আগ্রহী হওয়া জরুরি, তেমনই এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি পালনেও যত্নবান হওয়া কাম্য।
কোরআন খতমের সেরা মুহুর্ত
রমজান মাসের শেষ দশকে বিশেষত কদরের রাতে আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদ নাজিল করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয় আমি কদর রজনীতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি।’ (সূরা কদর, আয়াত : ১)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি বরকতপূর্ণ রজনীতে, বস্তুত আমি সতর্ককারী।’ (সূরা দুখান, আয়াত : ৩)
এখানে বরকতময় রজনী বলে শবে কদরকে বোঝানো হয়েছে। আমরা যারা রমজানে কোরআন তিলাওয়াত করি তারা শেষ দশকে কোরআন খতম করলে তা বেশি ফজিলতপূর্ণ।
ইতিকাফ
শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ। দুনিয়ার সকল ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে একনিষ্ঠচিত্তে আল্লাহর ঘরে বসে ইবাদত করাকে ইতিকাফ বলা হয়। ইতিকাফে আল্লাহর কাছে বান্দার আবেদন অনেকটা এমন ধাকে যে— ক্ষমা না নিয়ে ঘরে ফিরব না।
রাসূল সা. শেষ দশকে নিয়মিত ইতিকাফ করতেন। মদিনার জীবনে একটি রমজানে (জিহাদের সফরে থাকার কারণে) ইতেকাফ করতে পারেননি। তাই পরবর্তী বছর ২০ দিন ইতিকাফ করে তা পূরণ করে নিয়েছেন। সাহাবিরাও তার সাথে ইতিকাফে অংশগ্রহণ করেছেন।
আরও পড়ুন
ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফায়দা হলো, ইতিকাফকারী অত্যন্ত পবিত্র ও গুনাহমুক্ত পরিবেশে থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে শেষ দশকে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থানই ইবাদত বলে গণ্য হয়ে থাকে।
ইতিকাফের সময় একজন মুসলমান পুরোপুরি আমলে মগ্ন হওয়ার চেষ্টা করনে। এ সময় তার কাছ থেকে ভুল-ত্রুটি প্রকাশের সম্ভবনা থাকে না। তাই ইতিকাফের মাধ্যমে রোজার যাবতীয় হক ও আদব রক্ষা হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। সর্বোপরি ইতিকাফ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি ইবাদত।
সদকাতুল ফিতর
সদকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করতে হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে ফিতরা আদায়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং নিয়ম-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন।
নবীযুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ ইসলামের পাঁচ রোকন ও দ্বীনের অন্যান্য মৌলিক আমল ও ইবাদতের মতো সদাকাতুল ফিতরও নিয়মিত আদায় করছেন।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. সদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়, তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্যই এটা জরুরি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২২৭)
তাই সকলের কর্তব্য, খুশিমনে এই ফিতরা আদায় করা, যেন এর মাধ্যমে গরিবের মুখে হাসি ফোটানো যায় এবং নিজের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হয়।