রোজাদারের জন্য হাদিসে যেসব সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রোজা ছাড়া বান্দার সকল ইবাদত তার নিজের জন্য। রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দিব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)।
একজন মানুষের জন্য এর থেকে সৌভাগ্যের আর কিছু নেই যে, সারা জাহানের মালিক, সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, রাহমানুর রাহিম সন্তুষ্ট হয়ে নিজেই তাকে প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন। এ থেকেই রোজার মর্যাদা অনুমান করা যায়।
রোজাদারের জন্য একাধিক হাদিসে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে রাসূল সা. জান্নাতের নেয়ামত সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য এমন বস্তু তৈরি করে রেখেছেন যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং কোন অন্তর যা কখনো চিন্তাও করেনি।...(মুসলিম শরিফ, ৬৮৭২)
রোজাদারের জন্য হাদিসে একাধিক পুরস্কারের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এখানে তার বিবরণ দেওয়া হলো—
দুটি আনন্দের মুহুর্ত
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস, ৭৬৬, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৮)।
আরও পড়ুন
জান্নাতে বিশেষ ফটক
জান্নাতে রোজাদারের জন্য আলাদা একটি ফটক থাকবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য জান্নতে রাইয়ান নামক একটি ফটক থাকবে। যে ফটক দিয়ে শুধু রোজা পালনকারী ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবে। তাদের প্রবেশ শেষে সেই ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি সেই ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)।
রোজাদার শয়তান থেকে নিরাপদ
রোজাদার শয়তানের কুপ্ররোচনা থেকে নিরাপদ থাকে। ফলে সে পাপাচারে লিপ্ত হয় না ও নিজেকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজা (সব ধরনের অশ্লীল ও মন্দ কাজের) ঢালস্বরূপ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)।
রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ কাছে প্রিয়
রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশক আম্বারের সুগন্ধের চেয়েও অধিক পছন্দের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, রোজা পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মিশকের সুগন্ধি থেকে বেশি পছন্দনীয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২১৩)।
রোজা শুধু আল্লাহর জন্য
রোজা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। আল্লাহ নিজে এর পুরুষ্কার দিবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, বনি আদমের সকল ইবাদত তাদের নিজের জন্য, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেবো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)।
কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে রোজা
কিয়ামতের দিন রোজা নিজে রোজা পালনকারীর জন্য সুপারিশ করবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।
রোজা বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তাকে পানাহার, যৌনকর্ম ও অন্যান্য পাপ কাজ থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাদের উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৬২৬)।
পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হবে
রোজার কারণে রোজাদারের পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস :
১৯০১)।