প্রতিটি মুহূর্ত মুমিনের জন্য মূল্যবান
মুমিনের প্রতিটি ক্ষণ-মুহূর্ত এবং দিন-রাত খুশি ও আনন্দের। বছরের প্রতি মুহূর্ত তার জন্য দামি। বিশেষ করে ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ বা বছরের শেষ রাত। এই রাতটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। এতে অনুশোচনা (বিগত বছরের পর্যালোচনা) ও আত্মসমালোচনা করে আগামী বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া-দরুদ, নফল নামাজ ইত্যাদি ভালো কাজের মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করা উচিত।
বছর শেষে প্রকৃত মুসলমানের অনুভূতি ভিন্ন রকম হয়। শুধু আনন্দ-উচ্ছ্বাসের নয়; বরং এর সঙ্গে মিশে থাকে রাশি রাশি বেদনার স্ফুলিঙ্গ। কাজেই বছরের বিদায়-মুহূর্তে মুমিনের এ কথা ভেবে চিন্তামগ্ন হওয়া উচিত যে, একটি বছর তো আমি সমাপ্ত করেছি কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে সৃষ্টি করেছেন, সে উদ্দেশ্য আমি কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি?
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের হিসাবের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’
(সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ০১)
জীবন চলার বাঁকে বাঁকে নানা কিছুর সম্মুখীন হতে হয়। সুখ-দুঃখের মিশেলে অভিজ্ঞ হয় মানুষ। এভাবে ব্যাধি ও জরাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায় প্রতিটি প্রাণ। কাজেই সবাইকে সময় সচেতন হতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি দুর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন; তারপর দুর্বলতার পর শক্তি দেন, আবার শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৫৪)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, পরে শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর জমাট রক্ত থেকে, তারপর তোমাদের শিশুরূপে বের করেন, তারপর হও যৌবনপ্রাপ্ত, তারপর উপনীত হও বার্ধক্যে। তোমাদের কারো বা আগেই মৃত্যু হয়ে যায়।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৬৭-৬৮)
একটি হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন,
‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের আগমনের আগে গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্থতার আগে অবকাশকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৫৪৬০)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুটি নেয়ামতের মাধ্যমে যথাযথ উপকৃত হতে অনেক মানুষই ব্যর্থ হয়। তা হচ্ছে- সুস্থতা ও অবসর সময়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৯)
মহান খলিফা ওমর (রা.) তার খুতবায় ঐতিহাসিক একটি উক্তি উপস্থাপন করে বলেন,
‘তোমার কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’
(তিরমিজি, হাদিস : ৪/৬৩৮)
সুতরাং সময়ের সদ্ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। তাই নতুন বছরে পরিশুদ্ধ আমলের ও ইবাদতের নিষ্ঠাবিধৌত প্রতিশ্রুতি ও জীবনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দৃপ্ত অঙ্গীকার হওয়া উচিত।