চাঁদ দেখে রোজা রাখার গুরুত্ব
আরবি বা ইসলামি বর্ষপঞ্জির মাসগুলো শুরু হয় চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রোজা, ঈদ, কোরবানির দিন তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ দেখার পর। অধিকাংশ আরবি মাস ২৯ অথবা ত্রিশদিনের হয়ে থাকে।
তাই রমজানের শুরুর দিনক্ষণ জানতে শাবান মাস শেষে রমজানের চাঁদ দেখার এবং চাঁদ উঠার সঠিক খবরের অপেক্ষায় থাকেন পুরো বিশ্বের মুসলমানেরা। আবার রমজানের শেষে ঈদ পালন করা হয় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে।
রোজা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল
চাঁদ দেখে রোজা রাখা এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাঙা ও ঈদ পালনের বিষয়টি মূলত হাদিসের নির্দেশনা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে করে থাকেন মুসলমানেরা।
চাঁদ দেখার বিধান
ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে, শাবান মাসের ২৯ তারিখ সামগ্রিকভাবে চাঁদ দেখাকে ফরজে কেফায়া বলেন। আর রাসূল সা.-এর ব্যক্তিগত আমলের কারণে প্রত্যেক মুমিনের জন্য আকাশে চাঁদের অনুসন্ধান করা মুস্তাহাব মনে করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা রেখো না এবং তা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা ছেড়ে দিয়ো না।’ (মুআত্তা মালিক, হাদিস, ৬৩৫)
আরও পড়ুন
চাঁদ দেখা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে...
শাবান মাসের শেষে চাঁদ দেখা নিয়ে অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ফেকাহবিদদের মতামত হলো— নিজে চাঁদ দেখা বা চাঁদ দেখেছে এমন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা কিংবা শাবান মাস পূর্ণভাবে অতিবাহিত করা ছাড়া রাসূল সা. কখনো রমজান মাসের রোজা পালন শুরু করতেন না। হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মানুষ সম্মিলিতভাবে চাঁদ দেখতে লাগল, তাদের মাঝে আমি রাসূকে সা. এসে সংবাদ প্রদান করলাম— আমি চাঁদ দেখেছি। এ সংবাদের ওপর ভিত্তি করে রাসূল সা. নিজে রোজা রাখলেন এবং সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (আবু দাউদ, হাদিস, ২৩৪)।
হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, একজন গ্রাম্য সজ্জন ব্যক্তি রাসূল সা.-এর কাছে আরজ করলেন, আমি রমজানের চাঁদ দেখেছি। রাসূল সা. বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই? লোকটি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। রাসূল সা. বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। রাসূল সা. অতঃপর হজরত বেলালকে রা. লক্ষ্য করে বললেন, হে বেলাল! মানুষকে জানিয়ে দাও, তারা যেন আগামীকাল রোজা রাখে। (আবু দাউদ, হাদিস, ২৩৪০)।
চাঁদ দেখার পর যে দোয়া পড়বেন
আল্লাহর রাসূল সা. রমজানের চাঁদ দেখে খুশি আনন্দিত হতেন। রাসুল সা.-এর সাহাবিরাও রা. খুশি হতেন ও দোয়া পড়তেন। সাহাবি তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়াটি পাঠ করতেন—
اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস, ৩৫২৬)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত অন্য এক বর্ণনায় দোয়াটি এভাবে এসেছে-
اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ وَالتَّوْفِيْقِ لِما تُحِبُّ وَتَرْضَى رَبِّيْ وِرَبُّكَ اللهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিক; লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদ্বা, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলাম এবং যে জিনিসটি আপনি পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হোন— সেটার তাওফিকের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (সুনানে দারিমি, হাদিস,১৬৯৭)