মহানবী সা.-এর সেবক সাহাবি ছিলেন যারা
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত বা সেবা করতে পারাকে নিজেদের জন্য সৌভাগ্যের মনে করতেন সাহাবিরা। বিখ্যাত সাহাবিদের সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লামের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করতেন। অনেকেই প্রায় নিয়মিত তার সেবা করার সুযোগ পেতেন।
কোনো সাহাবি ব্যক্তিগত কাজের কারণে নিয়মিত রাসূলের সেবায় অংশ নিতে পারতেন না। তবে নিয়মিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবায় নিয়জিত থাকতেন এমন কয়েকজন সাহাবি সম্পর্কে তুলে ধরা হলো এখানে।
প্রায় সবসময় ও নিয়মিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন এমন সাহাবিদের মধ্যে ছিলেন— আনাস ইবনে মালেক রা., আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., রাবিআ ইবনে কাআব আল আসলামি রা., উকবা বিন আমের আলজুহানি রা., আবুস সামহ রা., বুকাইর বিন সুদাখ রা.।
আরও পড়ুন
আনাস ইবনে মালেক রা.
রাসুসূলুল্লাহ সা.-এর দীর্ঘ সময়ের প্রিয় সেবক সাহাবি আনাস রা.। মদিনার বিখ্যাত খাজরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার সন্তান ছিলেন। তার উপনাম আবু হামজা। মা উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান রা.। হিজরতের ১০ বছর আগে মদিনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তার বয়স যখন ১০ বছর তখন তার মা তাঁকে নিয়ে রাসূল সা.-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, আনসারদের নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই আপনাকে কিছু না কিছু হাদিয়া দিয়েছে; আমি তো কিছু দিতে পারিনি। আমার আছে এই ছেলে। সে লিখতে জানে। আপনার খিদমতের জন্য একে কবুল করে নিন।
সেদিন থেকে আনাস রা. রাসূল সা.-এর খিদমতে আত্মনিয়োগ করেন এবং রাসূল সা.-এর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানা ১০ বছর খিদমত করেন। (আনসাবুল আশরাফ, পৃষ্ঠা ১০২২)
রাসূলুল্লাহ সা.-এর খিদমতের বরকতে তিনি অসংখ্য হাদিসও বর্ণনা করেন। তিনি সুদীর্ঘ হায়াত, অঢেল সম্পদ ও অনেক সন্তান লাভ করেন। তিনি ৯৩ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৪২৩)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ছিলেন প্রথম যুগের অগ্রগণ্য সাহাবিদের একজন। তিনি বদর যুদ্ধসহ সব যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সঙ্গী ছিলেন। তিনি সে সময়ের বড় ফকিহ, মুহাদ্দিস ছিলেন। তার সঙ্গে নবী সা.-এর সম্পর্ক ছিল খুবই দৃঢ়। অনেকে ভাবতেন তিনি নবী সা.-এর পরিবারের সদস্য। কারণ তিনি ও তার মা প্রায়ই মহানবী সা.-এর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন।
আবু মুসা আশআরি রা. বলেন, আমরা মদিনায় এসে ইবনে মাসউদকে রাসূল সা.-এর পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করতাম। কেননা রাসূল সা.-এর কাছে তার ও তার মায়ের অধিক পরিমাণে যাওয়া-আসা ছিল। (তিরমিজি, হাদিস, ৩৮০৬)
তা ছাড়া তিনি সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা.-এর বিশেষ খাদেম ছিলেন। হাদিস ও তারিখের কিতাবে তার উপাধি ‘সাহিবুল নালাইন ওয়াল বিসাদ ওয়াল মিতহারা’ অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সা.-এর পাদুকা, তাকিয়া ও অজুর পাত্র বহনকারী। (বুখারি, হাদিস, ৩৯৬১) নবীজির বিখ্যাত এই সেবক সাহাবি ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।
আরও পড়ুন
রাবিআ ইবনে কাআব আল আসলামি রা.
সাহাবি রাবিআ ইবনে কাআব আল আসলামি রা. ছিলেন প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। তিনি আহলে সুফফার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ সময় নবীজির খিদমতও আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি নবীজির অজুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আনা-নেওয়ার খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
এক বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-এর সঙ্গে রাত যাপন করছিলাম। আমি তার অজুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। তিনি আমাকে বলেন, কিছু চাও। আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি। তিনি বলেন, এ ছাড়া আরও কিছু আছে কি? আমি বললাম, এটাই আমার আবেদন। তিনি বলেন, তাহলে তুমি বেশি পরিমাণে সিজদা করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য করো। (মুসলিম, হাদিস, ৯৮১)। ৬৩ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
বুকাইর বিন সুদাখ রা.
বুকাইর বিন সুদাখ রা.-কে বকর বিন সুদাখ আল লাইসিও বলা হয়। তিনি ছোট সময় থেকেই নবীজির ঘরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি তখনো নাবালক ছিলেন (যার কারণে পর্দার কোনো সমস্যা হতো না)। যখন তিনি প্রাপ্তবয়স্কে উপনীত হন তখন নবীজিকে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল আমি তো এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছি। তখন নবীজি তার জন্য প্রাণভরে দোয়া করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৫/৩৫৫)
উকবা বিন আমের আলজুহানি রা.
উকবা বিন আমের আলজুহানি রা.। তিনি মিসরের অধিবাসী, নবীজির বিশিষ্ট সাহাবি। তিনি কোরআন ও ফারায়েজ বিষয়ে বেশ দক্ষ ছিলেন। এমনকি তিনি ভালো লিখতে ও পড়তে জানতেন এবং সে সময়ের বিশিষ্ট কবিও ছিলেন। তা ছাড়া তিনি নবীজির সফরের যানবাহন চালানোর খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন। নবীজি যখনই কোনো সফরে বের হতেন তখন খচ্চর বা ঘোড়া চলানোর দায়িত্ব তিনি পালন করতেন। (জাদুল মাআদ : ১/১১৩)
আবুস সামহ রা.
কেউ কেউ বলেছেন তার নাম ইয়াদ। তিনি নবীজির খাদেম ছিলেন। নবীজির গোসলের সময় তিনি পর্দার ব্যবস্থা করতেন। এক বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি নবী সা.-এর খিদমত করতাম। তিনি গোসল করার ইচ্ছা করলে আমাকে বলতেন, তুমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়াও। তখন আমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখতাম।
একবার হাসান অথবা হুসাইন রা.-কে আনা হলে তাদের একজন তার বুকে পেশাব করে দিলেন। আমি তা ধৌত করতে এলে তিনি বলেন, মেয়েশিশুর পেশাব ধোয়া আবশ্যক হয়। আর ছেলেশিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস, ৩৭৬)