খতম তারাবিতে কোন দিন কোন সূরা ও পারা তিলাওয়াত করা হবে?
রমজানের গুরুত্বপুর্ণ ইবাদত ও সুন্নত আমল তারাবির নামাজ। তারাবির বিশেষ ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস, ২০৪৭)
তারাবির ফজিলত
অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তার জীবনের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত, হাদিস, ১৮৬২)
রমজানের পুরোটা সময় বরকতপূর্ণ ও ইবাদতের জন্য নির্ধারিত। এ মাসে যেকোনো ইবাদত করা হলে তার সওয়াব বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে একটি নফল আমল করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি নফল আদায় করল।’ (মিশকাত, হাদিস, ১৮৬৮)
সুতরাং রমজানে তারাবি নামাজের সওয়াবও এই হিসেবে দেওয়া হবে। তারাবি নামাজ আদায়কারীকে ফরজের সওয়াব প্রদান করা হবে। প্রত্যেক মুমিনকে তারাবি নামাজ আদায়ে সবসময় যত্নবান হতে হবে।
আরও পড়ুন
তারাবির বিধান
পুরুষদের জন্য তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা সুন্নত আমল। নারীদের জন্যও ২০ রাকাত তারাবি সুন্নত। তারাবির নামাজের সময় হলো- এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত।
খতম তারাবিতে পুরো কোরআন পড়ার প্রচলন রয়েছে। এতে করে কিয়ামুল লাইন বা দীর্ঘ সময় নিয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ হয়। এবং নামাজে কোরআনের খতম শোনার সৌভাগ্য অর্জন হয়। যারা কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না, তাদের জন্য কোরআন নাজিলের বরকতময় মাসে পুরো কোরআন শোনার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় খতম তারাবি।
দেশের বেশির ভাগ মসজিদে খতম তারাবির ব্যবস্থা করা হয়। কোরআন খতমের সহজতার জন্য এবং রমজানের শেষে ঈদ এবং অন্যান্য কাজের ব্যস্ততার আগেই স্বস্তির সঙ্গে খতম তারাবি যেন শেষ হয় এজন্য বিশেষ নিয়মে মসজিদগুলোতে খতম তারাবি পড়া হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও এই নিয়ম বলে দেওয়া হয় প্রতি বছর রমজানের আগে।
খতম তারাবিতে কোন দিন কোন সূরা পড়া হবে?
নিয়মানুযায়ী তারাবিতে প্রথম ছয় দিন দেড় পারা করে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। ছয় দিনে পড়া হবে ৯ পারা। আর বাকি ২১ দিনে এক পারা করে তিলাওয়াত করা হয়। খতম তারাবিতে প্রথম ৬ দিনেই পড়া হয় কোরআনের ৭টি সূরা। বাকি সূরাগুলো পড়া হয় পর্যায়ক্রমে। তারাবিতে কোন দিন কোন সূরা পড়া হয় তা এখানে তুলে ধরা হলো—
প্রথম দিন : সুরা ফাতিহা প্রথম আয়াত থেকে সুরা বাকারা ২০৩ আয়াত।
দ্বিতীয় দিন : সুরা বাকারা ২০৩ আয়াত থেকে আলে ইমরান ৯১ নম্বর আয়াত।
তৃতীয় দিন : সুরা আলে ইমরান ৯২ থেকে সুরা নিসা ৮৭ আয়াত।
চতুর্থ দিন : সুরা নিসা ৮৮ থেকে সুরা মায়িদাহ ৮২ আয়াত।
পঞ্চম দিন : সুরা মায়িদাহ ৮৮ থেকে সুরা আরাফ ১১ আয়াত।
ষষ্ঠ দিন : সুরা আরাফ ১২ থেকে সুরা আনফাল ৪০ আয়াত।
সপ্তম দিন : সুরা আনফাল ৪১ আয়াত থেকে সুরা তওবা ৯৩ আয়াত।
অষ্টম দিন: সুরা তওবা ৯৪ আয়াত থেকে সুরা হুদ ৫ আয়াত।
নবম দিন : সুরা হুদ ৬ আয়াত থেকে সুরা ইউসুফ ৫২ আয়াত।
দশম দিন: সুরা ইউসুফ ৫৩ আয়াত থেকে সুরা হিজর ১ আয়াত
১১তম দিন : সুরা হিজর ২ আয়াত থেকে সুরা নহল ১২৮ আয়াত।
১২তম দিন : সুরা বনি ইসরাইল ১ আয়াত থেকে সুরা কাহাফ ৭৪ আয়াত।
১৩তম দিন : সুরা কাহাফ ৭৫ আয়াত থেকে সুরা তোহা ১৩৫ আয়াত।
১৪তম দিন : সুরা আম্বিয়া ১ আয়াত থেকে সুরা হজ ৭৮ আয়াত।
১৫তম দিন : সুরা মুমিন ১ আয়াত থেকে সুরা ফোরকান ৭৮ আয়াত।
১৬তম দিন : সুরা ফোরকান ২১ আয়াত থেকে সুরা নমল ৫৯ আয়াত।
১৭তম দিন : সুরা নমল ৬০ আয়াত থেকে সুরা আনকাবুত ৪৪ আয়াত।
১৮তম দিন : সুরা আনকাবুত ৪৫ আয়াত থেকে সুরা আহজাব ৩০ আয়াত।
১৯তম দিন : সুরা আহজাব ৩১ আয়াত থেকে সুরা ইয়াসিন ২১ আয়াত।
২০তম দিন : সুরা ইয়াসিন ২২ আয়াত থেকে সুরা জুমা ৩১ আয়াত।
২১তম দিন : সুরা জুমা ৩২ আয়াত থেকে সুরা হা–মিম সিজদা ৪৬ আয়াত।
২২তম দিন : সুরা হামিম সিজদা ৪৭ আয়াত থেকে সুরা জাসিয়া ৩৭ আয়াত।
২৩তম দিন : সুরা কাফ ১ আয়াত থেকে সুরা জারিয়াত ৩০ আয়াত।
২৪তম দিন : সুরা জারিয়াত ৩১ আয়াত থেকে সুরা হাদিদ ২৯ আয়াত।
২৫তম দিন : সুরা মুজাদালা ১ আয়াত থেকে সুরা তাহরিম ১২ আয়াত।
২৬তম দিন : সুরা মুলক ১ আয়াত থেকে সুরা মুরসালাত ৫০ আয়াত।
২৭তম দিন : সুরা নাবা ১ আয়াত থেকে সুরা নাস ৬ আয়াত।
এনটি