ঈসালে সওয়াবের আমল করবেন যেভাবে
‘ঈসালে সওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস সাওয়াব’ (তবে এ ক্ষেত্রে আরবীতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ‘ইহদাউস সাওয়াব’)।
এর আভিধানিক অর্থ হল সওয়াব পৌঁছানো। ইসলামের পরিভাষায় ইসালে সওয়াব হলো- কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা। যেকোনো নেক কাজের ইসালে সওয়াব করা জায়েজ।
ঈসালে সওয়াবের সঠিক পদ্ধতি হলো, মৌখিক এবং শারীরিক ইবাদতের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি যে ইবাদত করে, নফল নামাজ পড়ে, নফল রোজা রাখে, তাসবিহ আদায় করে, তিলাওয়াত করে, নফল হজ বা ওমরা করে, তাওয়াফ করে এগুলোতে শুধু এই নিয়ত করে নিবে যে, এর সওয়াবটুকু আল্লাহ তায়ালা আমার অমুক আত্মীয়, প্রিয়জন বা বন্ধুর রূহে পৌঁছিয়ে দিন— এটাই হচ্ছে ঈসালে সওয়াব। ঈসালে সওয়াবের কারণে নিজের আমলের সওয়াব কমে না। যে সওয়াবটুকু আমলকারী ব্যক্তির নিজের পাবার কথা তা তিনি ঠিকই অর্জন করবেন একই সঙ্গে যার ঈসালে সওয়াবের নিয়তে আমল করা হয়েছে তিনিও পুরো সওয়াব পাবেন।
জীবিতদের কাছে মৃতের সব থেকে বড় পাওনা জানাজা ও দাফন কাফন। জানাজার নামাজ মৃতের জন্য দোয়ার মতো। জানাজা ছাড়াও মৃতের জন্য দোয়া ও ঈসালে সওয়াবের আমল গুরুত্বপূর্ণ। আর ইসলামী ভ্রাতৃত্বের একটি সাধারণ হক হল, আপনপর জীবিত-মৃত নির্বিশেষে সকল মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করা। আর যারা না-ফেরার জগতে পাড়ি জমিয়েছেন তারা যেহেতু কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন এবং আমাদের আগে ঈমান এনেছেন তাই তাদের জন্য বিশেষভাবে কাম্য। দোয়া জীবিত-মৃত সকলের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
وَ الَّذِیْنَ جَآءُوْ مِنْۢ بَعْدِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِیْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ۠
এবং (ফাই-এর সম্পদ তাদেরও প্রাপ্য আছে) যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা করুন আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু। (সূরা হাশর, (৫৯), আয়াত, ১০)
আরও পড়ুন
এখানে পূববর্তী মুমিনদের জন্য (যাতে জীবিত ও মৃত সকলই আছেন) দোয়া করার প্রশংসা করা হয়েছে। দোয়া যদি তাদের জন্য উপকারী না হয়, তবে এখানে এ দোয়ার প্রশংসা করা হতো না।
মৃতের কবর জিয়ারত, তার জন্য নফল দান-সদকা, দোয়ার মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা যায়।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? বললেন, হাঁ। সাদ রা. বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ২৭৫৬)
এনটি