সূরা ইনশিকাকে কিয়ামত ও আখেরাতে মানুষের অবস্থা নিয়ে যা বলা হয়েছে
সূরা ইনশিকাক পবিত্র কোরআনের ৮৪ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ২৫। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত।
এই সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে এর প্রথম আয়াত আরবি শব্দ ইনশাক্কাত থেকে। ইনশিকাক মানে ফেটে যাওয়া। অর্থাৎ এ নামকরণের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে, এটি এমন একটি সূরা যাতে আকাশের ফেটে যাওয়ার উল্লেখ আছে।
সূরা ইনশিকাক
اِذَا السَّمَآءُ انۡشَقَّتۡ ۙ ١ وَاَذِنَتۡ لِرَبِّہَا وَحُقَّتۡ ۙ ٢ وَاِذَا الۡاَرۡضُ مُدَّتۡ ۙ ٣ وَاَلۡقَتۡ مَا فِیۡہَا وَتَخَلَّتۡ ۙ ٤ وَاَذِنَتۡ لِرَبِّہَا وَحُقَّتۡ ؕ ٥ یٰۤاَیُّہَا الۡاِنۡسَانُ اِنَّکَ کَادِحٌ اِلٰی رَبِّکَ کَدۡحًا فَمُلٰقِیۡہِ ۚ ٦ فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ بِیَمِیۡنِہٖ ۙ ٧ فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا ۙ ٨ وَّیَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَہۡلِہٖ مَسۡرُوۡرًا ؕ ٩ وَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ وَرَآءَ ظَہۡرِہٖ ۙ ١۰ فَسَوۡفَ یَدۡعُوۡا ثُبُوۡرًا ۙ ١١ وَّیَصۡلٰی سَعِیۡرًا ؕ ١٢ اِنَّہٗ کَانَ فِیۡۤ اَہۡلِہٖ مَسۡرُوۡرًا ؕ ١٣ اِنَّہٗ ظَنَّ اَنۡ لَّنۡ یَّحُوۡرَ ۚۛ ١٤ بَلٰۤی ۚۛ اِنَّ رَبَّہٗ کَانَ بِہٖ بَصِیۡرًا ؕ ١٥ فَلَاۤ اُقۡسِمُ بِالشَّفَقِ ۙ ١٦ وَالَّیۡلِ وَمَا وَسَقَ ۙ ١٧ وَالۡقَمَرِ اِذَا اتَّسَقَ ۙ ١٨ لَتَرۡکَبُنَّ طَبَقًا عَنۡ طَبَقٍ ؕ ١٩ فَمَا لَہُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ۙ ٢۰ وَاِذَا قُرِئَ عَلَیۡہِمُ الۡقُرۡاٰنُ لَا یَسۡجُدُوۡنَ ؕٛ ٢١ بَلِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُکَذِّبُوۡنَ ۫ۖ ٢٢ وَاللّٰہُ اَعۡلَمُ بِمَا یُوۡعُوۡنَ ۫ۖ ٢٣ فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ ۙ ٢٤ اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَہُمۡ اَجۡرٌ غَیۡرُ مَمۡنُوۡنٍ ٪ ٢٥
সূরা ইনশিকাক বাংলা অর্থ :
যখন আকাশ ফেটে যাবে। এবং তার প্রতিপালকের আদেশ শুনে তা পালন করবে এবং তা তার জন্য অপরিহার্য। এবং পৃথিবীকে যখন সম্প্রসারিত করা হবে। এবং তার অভ্যন্তরে যা-কিছু আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করে সে শূন্যগর্ভ হয়ে যাবে। এবং সে তার প্রতিপালকের আদেশ শুনে তা পালন করবে এবং তা তার জন্য অপরিহার্য। (তখন মানুষ তার পরিণাম জানতে পারবে)।
হে মানুষ! তুমি নিজ প্রতিপালকের কাছে না পৌঁছা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যাবে, পরিশেষে তুমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করবে। অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে। তার থেকে তো হিসাব নেওয়া হবে সহজ হিসাব। এবং সে তার পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যাবে আনন্দচিত্তে।
কিন্তু যাকে তার আমলনামা দেওয়া হবে তার পিঠের পিছন থেকে, সে মৃত্যুকে ডাকবে। এবং সে প্রজ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। পূর্বে সে তার পরিবারবর্গের মধ্যে বেশ আনন্দে ছিল। সে মনে করেছিল, কখনই (আল্লাহর কাছে) ফিরে যাবে না। কেন নয়? নিশ্চয়ই তার প্রতিপালক তার উপর দৃষ্টি রাখছিলেন।
আমি শপথ করছি সান্ধ্য-লালিমার। এবং রাতের আর তা যা-কিছুকে জড়িয়ে রাখে তার। এবং চাঁদের, যখন তা ভরাট হয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে। তোমরা এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে আরোহণ করতে থাকবে।
সুতরাং তাদের কী হল যে, তারা ঈমান আনে না? এবং যখন তাদের সামনে কোরআন পড়া হয়, তখন সিজদা করে না? বরং কাফেরগণ সত্য প্রত্যাখ্যান করে। তারা যা-কিছু জমা করছে আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। সুতরাং তুমি তাদেরকে এক যন্ত্রণাময় শাস্তির সুসংবাদ দাও। তবে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তারা লাভ করবে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।
আরও পড়ুন
সূরা ইনশিকাকে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে
সূরা ইনশিকাকে কিয়ামত ও আখেরাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম পাঁচটি আয়াতে কিয়ামতের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কিয়ামত যে সত্যিই অনুষ্ঠিত হবে তার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অবস্থা বর্ণনা করে বলা হযেছে, সেদিন আকাশ ফেটে যাবে পৃথিবীকে ছড়িয়ে দিয়ে একটি সমতল ময়দানে পরিণত করা হবে। পৃথিবীর পেটে যা কিছু আছে (অর্থাৎ মৃত মানুষের শরীরের অংশসমূহ এবং তাদের কার্যাবলীর বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ) সব বের করে বাইরে ফেলে দেয়া হবে। এমনকি তার মধ্যে আর কিছুই থাকবে না। এর সপক্ষে যুক্তি পেশ করে বলা হয়েছে , আকাশ ও পৃথিবীর জন্য এটিই হবে তাদের রবের হুকুম। আর যেহেতু এ দু’টি আল্লাহর সৃষ্টি, কাজেই তারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে পারবে না। তাদের জন্য তাদের রবের হুকুম তামিল করাটাই সত্য।
এরপর ৬ থেকে ১৯ পর্যন্ত আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষ সচেতন বা অচেতন যে কোনভাবেই হোক না কেন সেই মনযিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে তার নিজেকে তার রবের সামনে পেশ করতে হবে। তখন সমস্ত মানুষ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাবে।
এক, যাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। তাদেরকে কোন প্রকার কঠিন হিসেব নিকেশের সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই সহজে মাফ করে দেয়া হবে।
দুই, যাদের আমলনামা পিঠের দিকে দেয়া হবে। তারা চাইবে, কোনভাবে যদি তাদের মৃত্যু হতো। কিন্তু মৃত্যুর বদলে তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেয়া হবে।
তারা দুনিয়ায় এই বিভ্রান্তিতে ডুবে ছিল যে, তাদেরকে কখনো আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে না। এ কারণে তারা এ পরিণতির সম্মুখীন হবে। অথচ তাদের রব তাদের সমস্ত কার্যক্রম দেখছিলেন। এসব কার্যক্রমের ব্যাপারে জবাবদিহি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার তাদের কোনো কারণ ছিল না।
দুনিয়ার কর্ম- জীবন থেকে আখেরাতের শাস্তি ও পুরস্কারের জীবন পর্যন্ত তাদের পর্যায়ক্রমে পৌঁছে যাওয়ার ব্যাপারটি ঠিক তেমনই নিশ্চিত যেমন সূর্য ডুবে যাওয়ার পর পশ্চিম আকাশে লাল আভা দেখা দেয়া , দিনের পরে রাতের আসা, সে সময় মানুষ ও সকল প্রাণীর নিজ নিজ ডেরায় ফিরে আসা এবং একাদশীর একফালি চাঁদের ধীরে ধীরে চতুরদশীয় পূর্ণচন্দ্রে পরিণত হওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত।
এনটি