সূরা গাশিয়াতে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের যে অবস্থা বর্ণিত হয়েছে
সূরা গাশিয়াহ পবিত্র কোরআনের ৮৮ নম্বর সূরা। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও পবিত্র কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত। এর আয়াত সংখ্যা ২৬।
সূরা গাশিয়াহ
ہَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ الۡغَاشِیَۃِ ؕ ١ وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ خَاشِعَۃٌ ۙ ٢ عَامِلَۃٌ نَّاصِبَۃٌ ۙ ٣ تَصۡلٰی نَارًا حَامِیَۃً ۙ ٤ تُسۡقٰی مِنۡ عَیۡنٍ اٰنِیَۃٍ ؕ ٥ لَیۡسَ لَہُمۡ طَعَامٌ اِلَّا مِنۡ ضَرِیۡعٍ ۙ ٦ لَّا یُسۡمِنُ وَلَا یُغۡنِیۡ مِنۡ جُوۡعٍ ؕ ٧ وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ نَّاعِمَۃٌ ۙ ٨ لِّسَعۡیِہَا رَاضِیَۃٌ ۙ ٩ فِیۡ جَنَّۃٍ عَالِیَۃٍ ۙ ١۰ لَّا تَسۡمَعُ فِیۡہَا لَاغِیَۃً ؕ ١١ فِیۡہَا عَیۡنٌ جَارِیَۃٌ ۘ ١٢ فِیۡہَا سُرُرٌ مَّرۡفُوۡعَۃٌ ۙ ١٣ وَّاَکۡوَابٌ مَّوۡضُوۡعَۃٌ ۙ ١٤ وَّنَمَارِقُ مَصۡفُوۡفَۃٌ ۙ ١٥ وَّزَرَابِیُّ مَبۡثُوۡثَۃٌ ؕ ١٦ اَفَلَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَی الۡاِبِلِ کَیۡفَ خُلِقَتۡ ٝ ١٧ وَاِلَی السَّمَآءِ کَیۡفَ رُفِعَتۡ ٝ ١٨ وَاِلَی الۡجِبَالِ کَیۡفَ نُصِبَتۡ ٝ ١٩ وَاِلَی الۡاَرۡضِ کَیۡفَ سُطِحَتۡ ٝ ٢۰ فَذَکِّرۡ ۟ؕ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُذَکِّرٌ ؕ ٢١ لَسۡتَ عَلَیۡہِمۡ بِمُصَۜیۡطِرٍ ۙ ٢٢ اِلَّا مَنۡ تَوَلّٰی وَکَفَرَ ۙ ٢٣ فَیُعَذِّبُہُ اللّٰہُ الۡعَذَابَ الۡاَکۡبَرَ ؕ ٢٤ اِنَّ اِلَیۡنَاۤ اِیَابَہُمۡ ۙ ٢٥ ثُمَّ اِنَّ عَلَیۡنَا حِسَابَہُمۡ ٪ ٢٦
সূরা গাশিয়াহ বাংলা অর্থ :
তোমার কাছে কি পৌঁছেছে সেই ঘটনার সংবাদ, যা সবকিছুকে আচ্ছন্ন করবে? সে দিন বহু চেহারা থাকবে অবনত। বিপর্যস্ত, ক্লান্ত। তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে। তাদেরকে টগবগে গরম প্রস্রবণ হতে পানি পান করানো হবে। তাদের জন্য কণ্টকিত গুল্ম ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না। যা তাদের পুষ্টি যোগাবে না এবং তাদের ক্ষুধাও মিটাবে না।
সে দিন বহু চেহারা থাকবে সজীব। (দুনিয়ায়) নিজেদের কৃত শ্রমের কারণে সন্তুষ্ট।তারা থাকবে আলিশান জান্নাতে। যেখানে তারা কোন নিরর্থক কথা শুনবে না। সে জান্নাতে থাকবে বহমান প্রস্রবণ। তাতে উঁচু-উঁচু আসন থাকবে। সামনে রাখা থাকবে পান-পাত্র। এবং সারি-সারি নরম বালিশ। এবং বিছানো গালিচা।
আরও পড়ুন
তবে কি তারা লক্ষ করে না উটের প্রতি, কিভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং আকাশের প্রতি, কিভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে? এবং পাহাড়সমূহের প্রতি, কিভাবে তাকে প্রোথিত করা হয়েছে? এবং ভূমির প্রতি, কিভাবে তা বিছানো হয়েছে?
সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি উপদেশ দিতে থাক, তুমি তো একজন উপদেশদাতাই। তোমাকে তাদের উপর জবরদস্তি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
তবে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও কুফর অবলম্বন করলে, আল্লাহ তাকে মহা শাস্তি দান করবেন। নিশ্চয়ই তাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। অতঃপর তাদের হিসাব গ্রহণ অবশ্যই আমার দায়িত্ব।
সূরা গাশিয়াতে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে
এই সূরার শুরুতেই কিয়ামত দিবসের কথা আলোচনা করা হয়েছে। কিয়ামতে মুমিন ও কাফের আলাদা আলাদা বিভক্ত দু' দল হবে এবং মুখমণ্ডল দ্বারা পৃথকভাবে পরিচিত হবে। প্রথমে কাফেরদের মুখমণ্ডলের এক অবস্থা এই বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের চেহারা থাকবে অবনত ও লাঞ্ছিতদের মতো।
অর্থাৎ, তাদের আযাব এমন কষ্টদায়ক হবে যে, তাতে তাদের অবস্থা খুবই করুণ হবে। গরম উত্তপ্ত আগুন তাদেরকে সবদিক থেকে ঘিরে ধরবে। এই আগুনের উত্তাপ দুনিয়ার আগুনের মতো কোনো সময় কম অথবা নিঃশেষ হয় না। বরং এটা চিরন্তন উত্তপ্ত। তাদের শাস্তির আরেকটি ধাপ হলো অত্যন্ত গরম ফুটন্ত পানি পান করানো হবে তাদের।
জাহান্নামিদের এক প্রকার কণ্টকবিশিষ্ট ঘাস খেতে দেওয়া হবে। পৃথিবীর মাটিতে এ ধরনের গুল্ম ছড়ায়। দুৰ্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত কাঁটার কারণে জন্তু-জানোয়ার এর ধারে কাছেও যায় না। বনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, এটা এমন এক খাবার যা খেয়ে কেউ মোটা তাজা হবে না এবং এতে ক্ষুধা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে না।
এরপর জান্নাতবাসীদের আলোচনা করা হয়েছে। দুনিয়ায় তারা যেসব প্রচেষ্টা চালিয়ে ও কাজ করে এসেছে আখেরাতে তার চমৎকার ফল দেখে তারা আনন্দিত হবে। জান্নাতে জান্নাতীরা কোন আসার ও মর্মম্ভদ কথাবার্তা শুনতে পাবে না। মিথ্যা, কুফৱী কথাবার্তা, গালিগালাজ, অপবাদ ও পীড়াদায়ক কথাবার্তা এ জাতীয় কিছুই শুনতে পাবে না সেখানে।
তাদের জীবনাচার সবদিক থেকেই উন্নত হবে। শয্যা অবস্থান, মর্যাদা ও স্থান সবদিক থেকেই উন্নত। সাধারণত মানুষ এ ধরনের শয্যা পছন্দ করে থাকে। আল্লাহর বন্ধুরা যখন এ সমস্ত শয্যায় বসতে চাইবে, তখনি সেগুলো তাদের জন্য নিচু হয়ে আসবে।
জান্নাত ও জাহান্নামীদের বিভিন্ন অবস্থার কথা তুলে ধরার পর আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টি নৈপূণ্যের কথা তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে তিনি উটের উদাহরণ এনেছেন।
উট আরব দেশে ব্যাপক প্রচলিত ছিল। আরবের অধিকাংশ যানবাহন ছিল এই উট। এই জন্য আল্লাহ তাআলা তার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, এই জন্তুর সৃষ্টি-বৈচিত্র্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর।
তাকে কত বৃহৎ আকারের দেহ দান করেছি। আর কত শক্তি তার মধ্যে রয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা তোমাদের জন্য নম্র ও তোমাদের অনুগত। তোমরা তার উপর যত চাও বোঝা রাখ, সে তা বহন করতে অস্বীকার করে না; তোমাদের অধীনস্থই থাকে। এ ছাড়াও তার গোশত খাবার ও তার দুধ পান করার কাজে আসে এবং তার পশম দ্বারা গরমের পোশাক প্রস্তুত হয়ে থাকে।
এরপর আল্লাহ তায়ালা আসমানের উদাহরণ তুলে ধরেছেন। বলেছেন, আকাশকে বহু উঁচুতে রাখা হয়েছে। পাঁচশত বছরের দূরত্বের পথ; তা বিনা খুঁটিতে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে কোন ফাটল ও বক্রতা নেই। পরন্তু তাকে আমি নক্ষত্র দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি।
এরপর পাহাড়ের উদাহরণ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেমনভাবে তাকে পৃথিবীর উপর পেরেক স্বরূপ গেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে পৃথিবী নড়া-চড়া না করতে পারে। এ ছাড়া এতে আছে খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য উপকারিতা।
কেয়ামতের অবস্থা এবং মুমিন ও কাফেরের প্রতিদান এবং শাস্তি বর্ণনা করার পর কেয়ামতে অবিশ্বাসী হঠকারীদের পথপ্রদর্শনের জন্যে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কুদরতের কয়েকটি নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার কথা বলেছেন।
আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন আকাশ ও পৃথিবীতে অসংখ্য। এখানে মরুচারী আরবদের অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যশীল চারটি নিদর্শনের উল্লেখ করা হয়েছে। আরবরা উটে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্তের সফর করে। তখন তাদের সর্বাধিক নিকটে থাকে উট, উপরে আকাশ, নিচে ভূপৃষ্ঠ এবং অগ্র-পশ্চাতে সারি সারি পর্বতমালা। এই চারটি বস্তু সম্পর্কেই তাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
এরপর কেমনভাবে তাকে সমতল বানিয়ে মানুষের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে তা আলোচনা করা হয়েছে। তাতে মানুষ চলা-ফেরা ও কাজ-কারবার করে এবং আকাশ-চুম্বি উচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করে থাকে।
এসব আলোচনার পর কাফেররা নবীজির আদেশ না মানার কারণে তার ভেতর যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সান্ত্বনার জন্যে বলা হয়েছে, আপনার বর্ণিত ন্যায়সংগত যুক্তি মানতে যদি কোন ব্যক্তি প্ৰস্তুত না হয়, তাহলে মানা না মানা তার ইচ্ছা। আপনি তাদের শাসক নন যে, তাদেরকে মুমিন করতেই হবে। আপনার কাজ শুধু প্রচার করা ও উপদেশ দেয়া। লোকদেরকে ভুল ও সঠিক এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য জানিয়ে দেয়া। তাদেরকে ভুল পথে চলার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা। কাজেই এ দায়িত্ব আপনি পালন করে যেতে থাকুন। এতটুকু করেই আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। তাদের হিসাব-নিকাশ, শাস্তি ও প্রতিদান আমার কাজ।
যারা আল্লাহর রাসূলের আহ্বানে সাড়া দেবে না এবং আল্লাহর অদেশ মানবে না তাদের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।
এনটি