ভুলে প্রথমে বাম দিকে সালাম ফেরালে যা করবেন
সালাম ফেরানো নামাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এটি নামাজের অন্যতম ওয়াজিব আমল। সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা হয়। সালাম ফেরানোর সঠিক নিয়ম হলো- চেহারা কেবলা দিকে থাকা অবস্থায় সালামের শব্দ বলা শুরু করা এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা ডানে ফেরানো। একইভাবে দ্বিতীয় সালাম ফেরানোর সময়ও কিবলার দিক থেকে সালাম বলা শুরু করতে হবে এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা বাম দিকে ফেরাতে হবে।
প্রখ্যাত ফকিহ মাওলানা রশদ আহমাদ গাঙ্গুহি রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘চেহারা সামনে থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে, এরপর ডান দিকে চেহারা নিতে নিতে সালাম শেষ করবে।’ (আল-কাউকাবুদ্ দুররি : ১/২৮৯-২৯০)
বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ইমাম নববি রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘কেবলার দিকে চেহারা থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে এবং চেহারা ঘুরানো অবস্থায় সালাম সম্পন্ন করতে থাকবে। যাতে চেহারা ঘুরানো শেষ হওয়ার সাথে সালামও শেষ হয়ে যায়। (আলমাজমু শরহুল মুহাজ্জাব : ৩/৪৫৮)
ডান দিকেই প্রথমে সালাম ফেরানো হয় এবং এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। তবে কেউ ভুল বশত কখনো বাম দিকে সালাম ফেরালে নামাজ হয়েছে কিনা এমন সন্দেহ তৈরি হয় মনে। এবং এ বিষয়ক ধর্মীয় সঠিক বিধান জানা না থাকলে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ইসলামি আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন-
নামাজে ভুলে বাম দিকে আগে সালাম ফিরিয়ে ফেললে পরে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে নেলেই হবে। আবার নতুন করে বাম দিকে সালাম ফেরানোর প্রয়োজন নেই। আর এই ভুলের কারণে সাহু সিজদাও ওয়াজিব হয় না। তাই এক্ষেত্রে সাহু সিজদা করতে হবে না।
(বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১২৮; আল কাউসার অনলাইন, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২৪)
আরও পড়ুন
নামাজের ওয়াজিব কাজ ১৪টি। তাহলো —
১. প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়া।(বুখারি: ৭৫৬)
২. প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সুরা বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা। (বুখারি: ৭৭৬)
৩. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা। (বুখারি: ৭৭৬)
৪. সুরা ফাতিহা অন্য সুরার আগে পড়া। (বুখারি: ৭৪৩)
৫. নামাজের সব রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা। (বুখারি: ৭৯৩)
৬. প্রথম বৈঠক করা। তিন অথবা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাতের পর বসা। বুখারি: ৮২৮)
৭. উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া। (বুখারি: ৮৩০-৮৩১)
৮. প্রতি রাকাতের ফরজ ও ওয়াজিবগুলোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা। (বুখারি: ৬২৫১)
৯. ফরজ ও ওয়াজিবগুলো নিজ নিজ স্থানে আদায় করা। যেমন দ্বিতীয় সিজদা প্রথম সিজদার পরপর করা। (বুখারি: ৬২৫১)
১০. বিতর নামাজে তৃতীয় রাকাতে কিরাতের পর কোনো দোয়া পড়া। অবশ্য দোয়া কুনুত পড়লে ওয়াজিবের সঙ্গে সুন্নতও আদায় হয়ে যাবে। (বুখারি: ১০০২)
১১. দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা। (আবু দাউদ: ১১৫৩)
১২. দুই ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলার পর রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবির বলা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৫৭০৭)
১৩. ইমামের জন্য জোহর, আসর এবং দিনের বেলায় সুন্নত ও নফল নামাজে কিরাত আস্তে পড়া। আর ফজর, মাগরিব, এশা, জুমা, দুই ঈদ, তারাবিহ ও রমজান মাসের বিতর নামাজে কিরাত শব্দ করে পড়া। (মুসলিম: ২৫৯; তিরমিজি ১/১০৬)।
১৪. সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। (বুখারি: ৮৩৭)
এনটি