তাবলিগ জামাতে যে ৬টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়
আল্লাহ তায়ালা ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান- ইসলামের মৌলিক আকিদার অংশ। এই আকিদা ও বিশ্বাস ঈমানের মূল ভিত্তি। ঈমানের পরই আসে বাস্তব জীবনে ইসলামের বিধি-বিধানের প্রয়োগের বিষয়টি। ইসলামের মৌলিক আকিদা বংশ পরম্পরায় অনেকের মাঝে বিদ্যমান থাকলেও বাস্তব জীবনে ইসলামী বিধান মানার প্রতি তেমন গুরুত্ব নেই অনেকেরই।
বেশির ভাগ মুসলমানই ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান মানাকে জরুরি মনে করেন না। অবহেলায় পাশ কাটিয়ে চলেন। তাবলিগ জামাতের অন্যতম উদ্দেশ্য ইসলামের মৌলিক বিষয় পালনে মানুষকে আগ্রহী করে তোলা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও নির্দেশিত আমল অনুযায়ী জীবনযাপনের গুরুত্ব অনুধাবন করানো। এ বিষয়টি সামনে রেখে ছয়টি উসুল বা মূলনীতি শেখানো হয় তাবলিগ জামাতে। যে মূলনীতির ওপরই পরিচালিত হয় তাবলিগ জামাত। সেই উসুলগুলো হলো-
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে থেকে সাহাবারা মেহনত করে আমল করার কারণে ওনেক গুণে গুণান্বিত হইয়াছিল, ওই গুণের উপর মেহনত করিয়া আমল করিতে পারলে দ্বীন ইসলামের ওপর চলা অতি সহজ।
আরও পড়ুন
গুণগুলো হচ্ছে, ১. কালিমা ২. নামাজ ৩. এলেম ও জিকির ৪. একরামুল মুসলিমিন ৫. সহি নিয়ত ৬. দাওয়াতে তাবলিগ।
১. কালিমা : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
অর্থাৎ : আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, হজরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহ পাকের প্রেরিত রাসুল।
কালিমার উদ্দেশ্যে : আসমান জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সব আল্লাহ পাকের বানানো মাখলুক। মহান আল্লাহ নির্দেশ ব্যতীত এই মাখলুক কিছুই করতে পারে না। আর মহান আল্লাহপাক এই মাখলুক ব্যতীত সব করতে পারেন।
কালিমার উপকারিতা : রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যে, সে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলেছে আল্লাহ পাক তার ওপর দোযখের আগুন হারাম করে দিবেন। বুখারি : ৬৪২৩
২. নামাজ : আল্লাহ তায়ালার কুদরত থেকে সরাসরি ফায়দা হাসিল করার উপায় হল, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের হুকুমগুলোকে মুহাম্মদ সা. এর পদ্ধতিতে পুরা করা তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হল নামাজ।
নামাজের উপকারিতা : আল্লাহপাক এরশাদ করেন, নিশ্চয় নামাজ নির্লজ্জা ও অশোভনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে। সুরা আনকাবুত : ৪৫
৩. এলেম ও জিকির : আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে সরাসরি ফায়দা হাসিল করার জন্য আল্লাহ পাকের হুকুমকে হজরত মুহাম্মদ সা. এর তরিকায় পালন করার উদ্দেশ্যে এলেম হাসিল করা। অর্থাৎ এ বিষয়ে যাচাই করা যে, আল্লাহপাক বর্তমান অবস্থায় আমার কাছে কী চাইছে।
উপকারিতা : আল্লাহ বলেন, আপনার ওপর কিতাব ও জ্ঞানের বিষয় নাজিল করেছেন এবং আপনাকে এমন সব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না, আর আপনার প্রতি অসীম অনুগ্রহ রয়েছে। সুরা নিসা : ১১৪
৪. একরামুল মুসলিমিন : বান্দাদের সঙ্গে সম্পর্কিত আল্লাহ পাকের হুকুমকে রাসুল সা. এর তরিকায় পালন করা এবং তাতে মুসলমানদের সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা।
রাসুল সা. এরশাদ করেন, যে বান্দা আল্লাহ পাকের জন্য কোনো মানুষকে মহব্বত করল, সে আপন মহান রবকে সম্মান করল। মুসনাদে আহমেদ : ২৫৯
৫. ছহি নিয়ত : আল্লাহ তায়ালার হুকুমকে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য পালন করা।
উপকারিতা : রাসুল সা. বলেছেন, মানুষ যখন সওয়াবের নিয়তে আপন পরিবারের ওপর খরচ করে এই খরচ করার ওপর সে সদকার সওয়াব পায়। বুখারি : ৫৫
৬. দাওয়াতে তাবলিগ : নিজের বিশ্বাস ও আমলকে সহিহ করা এবং মানুষকে সহিহ বিশ্বাস ও আমলের ওপর আনার জন্য রাসুল সা. এর তরিকাকে সমস্ত দুনিয়ায় চালু করার চেষ্টা করা।
উপকারিতা : রাসুল সা.কে বলা হয়েছে, আপনি বলে দিন, আমার রাস্তা তো এটাই যে, আমি পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহ পাকের দিকে দাওয়াত দিই, এবং যারা আমার অনুসারী তারাও (আল্লাহ পাকের দিকে দাওয়াত দেন)। সুরা ইউসুফ : ১০৮
এনটি