কোরআনের ‘ওই সূরাটি’ বেশি পছন্দ, এভাবে বলা কি ঠিক?
মানুষের হেদায়েতের জন্য পবিত্র কোরআনে ১১৪টি সূরা নাজিল করেছেন আল্লাহ তায়ালা। প্রতিটি সূরা অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। সূরাগুলোতে আল্লাহ তায়ালার বিধি-নিষেধ, পরকালের পুরস্কার, শাস্তি- এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মানুষকে সতর্ক করার জন্য পূর্ববর্তী জাতির ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে।
হেদায়েতের বাণী কোরআনকে যারা ভালোবাসেন, বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করেন, তাদের আল্লাহর পরিজন বলে অভিহিত করা হয়েছে হাদিসে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিছু মানুষ আল্লাহর পরিজন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তেলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ২১৫)
কোরআন তিলাওয়াত করা মুমিন এবং আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাদের একটি বিশেষ গুণ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰهُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ اِذَا تُلِیَتۡ عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتُهٗ زَادَتۡهُمۡ اِیۡمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ
‘মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের কাছে পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে।’ (সুরা আনফাল, (৮), আয়াত, ২)
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
اَللّٰهُ نَزَّلَ اَحۡسَنَ الۡحَدِیۡثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِیَ ٭ۖ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُوۡدُ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ۚ ثُمَّ تَلِیۡنُ جُلُوۡدُهُمۡ وَ قُلُوۡبُهُمۡ اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکَ هُدَی اللّٰهِ یَهۡدِیۡ بِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَمَا لَهٗ مِنۡ هَادٍ
‘আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণীসংবলিত কিতাব, যা সুসামঞ্জস্য এবং যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত করা হয়। এতে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের গা রোমাঞ্চিত হয়, অতঃপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর পথনির্দেশ, তিনি তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করেন। আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই।’ (সুরা ঝুমার, (৩৯), আয়াত, ২৩)
পবিত্র কোরআনের সূরাগুলোর সবগুলোই বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। কিন্তু সব সূরার বর্ণনা ও আলোচনার বিষয়বস্তু ভিন্ন। কোনো সূরাতে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্য, তার গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, আবার কোনোটিতে জান্নাতের নেয়ামতের বর্ণনা, কোনোটি অবাধ্যদের জন্য জাহান্নামে নির্ধারিত শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। কোনোটিতে রয়েছে মানুষের ওপর আল্লাহ তায়ালার দান করা নেয়ামতের বর্ণনা।
আরও পড়ুন
কোরআন বুঝে বুঝে তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে কারো কাছে হয়তো কখনো বিশেষ কোনো একটি সূরাকে ভালো লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কেউ হয়তোবা বলে ফেলতে পারেন- ‘কোরআনের অমুক সূরাটি আমার বেশি পছন্দের’। যেহেতু কোরআনের সব সূরা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। তাই অনেকের মনে খটকা লাগতে পারে এভাবে বলা ঠিক কিনা,এতে কোরআনের কোনো অসম্মান করা হবে কিনা!
এ বিষয়ে আলেমদের মতামত হলো- এভাবে বললে কোরআনের কোনো অসম্মান হবে না। হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ رَجُلًا عَلَى سَرِيَّةٍ، وَكَانَ يَقْرَأُ لِأَصْحَابِهِ فِي صَلَاتِهِ فَيَخْتِمُ بِقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: سَلُوهُ لِأَيِّ شَيْءٍ يَصْنَعُ ذَلِكَ. فَسَأَلُوهُ فَقَالَ: لِأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمَنِ، وَأَنَا أُحِبُّ أَنْ أَقْرَأَ بِهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: أَخْبِرُوهُ أَنَّ اللهَ يُحِبُّهُ
‘আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে একটি মুজাহিদ দলের প্রধান করে অভিযানে পাঠালেন। সালাতে তিনি যখন তাঁর সাথীদের নিয়ে ইমামত করতেন, তখন ইখ্লাস সূরাটি দিয়ে সালাত শেষ করতেন। তারা যখন অভিযান থেকে ফিরে আসল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে ব্যাপারটি আলোচনা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাঁকেই জিজ্ঞেস করে কেন সে এ কাজটি করেছে? এরপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন, এ সূরাটির আল্লাহ্ তা’আলার গুণাবলী রয়েছে। এ জন্য সূরাটিতে পড়তে আমি ভালোবাসি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ্ তাঁকে ভালবাসেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৭৩৭৫)
এনটি