মোগল আমলে নির্মিত বিখ্যাত ৫ মসজিদ
মধ্যযুগীয় ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী সাম্রাজ্য ছিল মোগল সাম্রাজ্য। ১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সাল ৩৩১ বছর সময়কাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এই সাম্রাজ্য।
সমৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে আজকের আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ ছিল এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। এ সকল দেশে অবস্থিত মোগল শাসনামলের বিভিন্ন নিদর্শন আজও সাক্ষ্য দিয়ে আসছে মোগলদের সমৃদ্ধির।
মোগল শাসকরা শুধু রাজনৈতিকভাবেই শক্তিশালী ছিলেন, সাম্রাজ্যের পরিবর্তন, সংস্কৃতি, সামাজিক জীবন ও স্থাপত্যের উন্নয়নে তাদের রয়েছে অসাধারণ স্বাক্ষর।
অনেক স্মৃতিসৌধ, মসজিদ ও দুর্গ নির্মাণ করে স্থাপত্যের স্বর্ণযুগে অবস্থান করে গেছেন মোগল সাম্রাজ্যের অধিকাংশ শৈল্পিক মনের সম্রাট। এর সাক্ষী বহন করে আগ্রার তাজমহল, দিল্লির লালকেল্লাসহ নানা অসাধারণ সব স্থাপত্য।
মোগল আমলে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে তাদের নির্মিত মসজিদগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মোগল আমলে নির্মিত বিখ্যাত ৫ মসজিদের বিবরণ তুলে ধরা হল।
১. কাবুলী বাগ মসজিদ
১৫২৭ সালে ভারতের পানিপথে কাবুলী বাগ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর তার স্ত্রী কাবুলী বেগমের নামে এই মসজিদটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিলেন।
২. বাবরি মসজিদ
১৫২৮ থেকে ১৫২৯ সালে সম্রাট বাবরের শাসনামলে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদটি নির্মাণ হয়েছিল। সে সময়কার সেনাপতি মীর বাকী বাবরের নাম অনুসারে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
৩. কিলা-ই-কোহনা মসজিদ
১৫৪১ সালে ভারতের দিল্লিতে কিলা-ই-কোহনা মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মোগল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ূনের আমলে এ মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। এটি দিল্লির পুরানা কিলাতে অবস্থিত।
৪. ওয়াজির খান মসজিদ
১৬৩৪ থেকে ১৬৩৫ সালের মধ্যে সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে লাহোরে ওয়াজির খান মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সময়কার লাহোরের গভর্নর হাকিম শেখ ইলম আদ্বীন আনসারী এটি তার নাম অনুসারে নির্মাণ করেন। তিনি ওয়াজির খান নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
মসজিদটি একটি উচ্চ ভিত্তির ওপর নির্মিত। এর বাইরের পরিসীমা হলো ২৭৯ ফুট (৮৫ মিটার) বাই ১৫৯ ফুট (৪৮ মিটার)। এর দীর্ঘ অংশটি শাহি গুজারগাহর সঙ্গে সমান্তরাল। মসজিদটি চুনাপাথর সহযোগে ইট দ্বারা নির্মিত। বিভিন্ন অঞ্চলের সজ্জাশৈলী ব্যবহারের কারণে ওয়াজির খান মসজিদ বেশ সুপরিচিত।
আরও পড়ুন
ওয়াজির খান চকের দিকে থাকা বহির্ভাগ টাইল ও ক্যালিগ্রাফি দ্বারা শোভিত করা হয়েছে। এতে কোরআনের আয়াত, হাদিস, দোয়া ইত্যাদি উৎকীর্ণ রয়েছে। নামাজের মূল স্থানের ইওয়ানে কোরআনের আয়াত উৎকীর্ণ রয়েছে। ক্যালিগ্রাফার হাজি ইউসুফ কাশ্মিরি এগুলো উৎকীর্ণ করেছেন।
৫. জামে মসজিদ (দিল্লি)
১৬৪৪ থেকে ১৬৬৫ সালের মধ্যে দিল্লিতে সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে জামা মসজিদ নির্মাণ হয়েছিল। এটি দিল্লির লাল কেল্লার বিপরীতে অবস্থিত। মসজিদটি সাধারণত দিল্লিতে জাহান নোমাহ নামেই বেশি পরিচিত।
দিল্লির জামে মসজিদ বিশাল বিশাল তিন গম্বুজ বিশিষ্ট, মধ্যখানে মিহরাব ও মোগল স্টাইলে মিম্বার। পূর্ব দিক উন্মুক্ত। মসজিদের বিশাল উঠান মূল মসজিদ থেকে তিন-চার ফুট নিচে। মসজিদের এ বিশাল চত্বরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান, তথা উত্তর-দক্ষিণ ১০৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিম ১০৯ মিটার।
মসজিদের উত্তর দিকে কোনায় ধর্মীয় পবিত্র জিনিস সংরক্ষণ করা আছে, তন্মধ্যে পবিত্র কোরআনের ২৮ পরিচ্ছেদ, যা আলী (রা.) কর্তৃক লিখিত এবং ১৫ পরিচ্ছেদ লিখেছেন ইমাম হোসাইন (রা.)। আরো রক্ষিত আছে নবী পাক (সা.)-এর তবরুকাত।
এনটি