সূরা নাবায় মানুষের প্রতি যে অনুগ্রহের কথা তুলে ধরা হয়েছে
সূরা নাবা পবিত্র কোরআনের ত্রিশতম পারার প্রথম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪০। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এই সূরায় জান্নাত-জান্নাম, কিয়ামত দিবস, জান্নাতে বসবাসকারীদের নেয়ামতরাজি ও জাহান্নামে বসবাসীদের শান্তি কেমন হবে- এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে এই সূরার শুরুর দিকে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দান করা এমন কিছু নেয়ামতের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ প্রতিনিয়ত গ্রহণ করে থাকে। যেই নেয়ামতগুলো ছাড়া একজন মানুষের চলাফেরা কঠিন। এমন ১২টি নেয়ামতের কথা তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
নেয়ামতগুলো হলো- শয্যার স্থান, পৃথিবীর স্থিতিশীলতার জন্য পর্বতমালা, রাতের আধার, মানুষের জীবন সঙ্গী, আরামের ঘুম, জীবন জীবিকার জন্য উপযুক্ত কর্মের সময়। এখানে আরও আলোচনা করা হয়েছে, সাত আসমান, সূর্য, আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি ও ঘন উদ্যানের কথা।
সূরা নাবার ৬-১৬ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এই বিষয়গুলোর বর্ণনা তুলে ধরেছেন আল্লাহ তায়ালা বর্ণিত হয়েছে-
اَلَمۡ نَجۡعَلِ الۡاَرۡضَ مِہٰدًا ۙ ٦ وَّالۡجِبَالَ اَوۡتَادًا ۪ۙ ٧ وَّخَلَقۡنٰکُمۡ اَزۡوَاجًا ۙ ٨ وَّجَعَلۡنَا نَوۡمَکُمۡ سُبَاتًا ۙ ٩ وَّجَعَلۡنَا الَّیۡلَ لِبَاسًا ۙ ١۰ وَّجَعَلۡنَا النَّہَارَ مَعَاشًا ۪ ١١ وَّبَنَیۡنَا فَوۡقَکُمۡ سَبۡعًا شِدَادًا ۙ ١٢ وَّجَعَلۡنَا سِرَاجًا وَّہَّاجًا ۪ۙ ١٣ وَّاَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡمُعۡصِرٰتِ مَآءً ثَجَّاجًا ۙ ١٤ لِّنُخۡرِجَ بِہٖ حَبًّا وَّنَبَاتًا ۙ ١٥ وَّجَنّٰتٍ اَلۡفَافًا ؕ ١٦
আমি কি বানাইনি যমীনকে শয্যা? আর পর্বতসমূহকে পেরেক? আর আমি রাতকে করেছি আবরণ। আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম। আর আমি দিনকে করেছি জীবিকার্জনের সময়। আমি তোমাদের উপরে বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ।আর আমি সৃষ্টি করেছি উজ্জ্বল একটি প্রদীপ। আর আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি। যাতে তা দিয়ে আমি শস্য ও উদ্ভিদ উৎপন্ন করতে পারি। আর ঘন উদ্যানসমূহ। (সূরা নাবা, (৭৮), আয়াত, ৬-১৬)
এই নেয়ামতগুলো আলোচনার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমি কি বানাইনি যমীনকে শয্যা?’ অর্থাৎ, বিছানার মতো মানুষ ভূপৃষ্ঠের উপর চলা-ফেরা করে, উঠা-বসা করে, শয়ন করে এবং সমস্ত কাজ-কর্ম করে থাক। পৃথিবীকে আল্লাহ তায়ালা বিছানার মত স্থীতিশীল করে বিক্ষিপ্তভাবে হেলা-দোলা থেকে রক্ষা করেছেন।
আরও পড়ুন
এরপর পাহাড়ের কথা তুলে ধরে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি পর্বতসমূহকে পৃথিবীর জন্য পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন; যাতে পৃথিবী স্থির থাকে এবং হেলা-দোলা না করে। কেননা, হেলা-দোলা ও বিক্ষিপ্ত অস্থিরতার অবস্থায় পৃথিবী বাসযোগ্য হতো না।
এরপর মানুষের জীবন সঙ্গীর ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি বিচিত্র ধরনের আকার-আকৃতি ও রঙে-বর্ণে সৃষ্টি করেছেন। সুশ্রী-কুশ্রী, লম্বা-বেঁটে, গৌরবর্ণ-কৃষ্ণবর্ণ ইত্যাদি বিভিন্ন বৈচিত্রে সৃষ্টি করেছেন।
ঘুমের নেয়ামতের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, মানুষকে দুনিয়ায় কাজ করার যোগ্য করার জন্য মহান আল্লাহ অত্যন্ত কর্মকুশলতা সহকারে তার প্রকৃতিতে ঘুমের এক চাহিদা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কর্মের ক্লান্তির পর ঘুম তাকে স্বস্তি, আরাম ও শান্তি দান করে।
মানুষের আরামের ঘুমের জন্য রাতের আলোচনা করে বলা হয়েছে, রাতের অন্ধকার এবং কালো বর্ণ প্রতিটি জিনিসকে নিজের আঁচলে আবৃত ও গোপন করে নেয়। যেমনভাবে, আবরণ বা পোষাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহকে আবৃত ও গোপন করে নেয়।
এবং মানুষের কাজের উপযোগী করে দিনের উজ্জ্বলময় বানিয়েছেন; যাতে লোকেরা জীবিকা ও রুযী অন্বেষণের জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে পারে।
এরপর আকাশের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, আকাশ তৈরি হয়েছে অত্যন্ত দৃঢ়-সংঘবদ্ধভাবে, তার মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তনও কখনো হয় না, ধ্বংস হয় না, ফেটে যায় না।
এরপর মানুষের চলাফের সুবিধার জন্য সূর্যকে প্রজ্জ্বলিত প্ৰদীপ করে সৃষ্টির কথা তুলে ধরা হয়েছে। মানুষকে আকাশ থেকে দান করা বৃষ্টির নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, বৃষ্টির মাধ্যমে উদ্ভিদ, শাক-সবজি এবং ঘাস-পাতা ইত্যাদি জন্মায় যা মানুষ ও পশুপাখি ভক্ষণ করে থাকে।
এনটি