মহানবী সা.-এর কাছে যেভাবে আসতেন জিবরাঈল আ.
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহী নিয়ে আসতেন হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম। পূর্ববর্তী নবীদের কাছেও ওহী নিয়ে আসতেন তিনি। হেরা গুহায় ওহী নিয়ে আগমনের আগমনের পর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন তখন ওয়ারাকা ইবনে নওফিল বলেছিলেন বলেছিলেন, ‘ ‘ইনি হচ্ছেন সেই মহান ফেরেশতা যিনি মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসেছিলেন.. ‘।
এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে দেখেছিলেন বিশাল আকৃতির। প্রথমবার ওহী নাজিলের পর ২৪ হাজার বার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা্ল্লামের কাছে আগমন করেছিলেন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম।
তিনি কোনো কোনো সময় সবার অলক্ষ্যে ওহী নাজিল করে চলে যেতেন। আবার কোনো কোনো সময় মানব আকৃতিতে আগমন করতেন। তিনি প্রায় সময় দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর আকৃতি ধারণ করে আসতেন।
একবার জিবরাইল আলাইহিস সালাম ধবধবে সাদা পোশাকে এবং নিকষ কালো কেশবিশিষ্ট অবস্থায় ছদ্মবেশে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে হাজির হন। হাদিস বিশারদদের মতে, দশম হিজরিতে বিদায় হজের কিছুকাল আগে জিবরাইল আলাইহিস সালাম সাহাবায়ে কেরামদের দ্বিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তার মধ্যে সফরের কোনো চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবায়ে কেরাম দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমাদের কেউ তাকে চিনতে পারেনি।
আরও পড়ুন
কোনো কোনো হাদিস বিশারদের মতে প্রথমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও চিনতে পারেননি। অবশেষে লোকটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এসে নিজের দুই হাটু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে বসে পড়েন। এরপর নিজের দুই হাত উরুর ওপর রাখেন। সাহাবায়ে কেরাম অবাক হয়ে তার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।
কে ছিলেন এই দাহিয়াতুল কালবি রা.
আরব অন্ধকার যুগে তথা আইয়ামে জাহিলিয়াহ বিরাজমান অবস্থায় মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া নিয়ম ছিল। সে জীবন্ত মেয়ে সন্তানের কবর দেওয়া দলের প্রধান ছিলেন হযরত দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আইয়ামে জাহেলিয়াত থেকে মুক্তি দিয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত বাড়ালেন তার দিকে।
তখন দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া দলের প্রধান। আমার স্ত্রী আমার অজান্তে একটি মেয়ে সন্তানকে লালন পালন করছিল, ১০/১২ বৎসর বয়সে তা আমার চোখে ধরা পড়ে। মেয়েটির রূপ চেহারায় আমিও পিতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে গেলাম। কিন্তু জাহেলিয়াতের নীতি আমাকে বার বার তাড়া করতে লাগলো, তুমি আরবের বুকে মেয়ে সন্তান জীবন্ত কবর দেওয়া দলের সর্দার হয়ে পিতৃস্নেহের কাছে হেরে গেলে?
পরিশেষে বাধ্য হয়ে মিথ্যে ছলনায় স্ত্রীকে বললাম, মেয়েকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়ে দাও। তাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। মেয়েটিকে নিয়ে মরুভূমির পথ ধরে অনেক দূরে চলছি। ধুধু মরুভূমিতে আমি ও আমার সন্তানই যাত্রী। মেয়েটির রূপ, লাবণ্যময়ী চেহারা আমাকে উন্মাদ করে তুলছিল। কিন্তু কি করব? জাহিলিয়াতের নীতির কাছে হেরে গেলাম।
মরুভূমিতে হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটির পিপাসা পেল। সে আমার কাছে পানি চেয়ে বললো, আব্বা আমাকে একটু পানি দেন। বললাম, মা একটু অপেক্ষা কর, এ সুযোগেই আমার কবর দেওয়ার লুকাইত যন্ত্রপাতি বের করে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম। অনেক গভীর করে উপরে উঠে এলাম। মেয়েটি তৃষ্ণার্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। মেয়েকে বললাম, দেখতো মা, পানি উঠছে কিনা?
মেয়েটি অধীর আগ্রহে তাকাতেই দু’চোখ বন্ধ করে মেয়েকে কুপের মধ্যে ফেলে দিয়ে মাটি দিতে শুরু করি। মেয়েটির সে কান্না আর আমাকে আব্বা আব্বা বলে ডাকার শব্দ আমার কানে আজও ভেসে উঠে।
হে আল্লাহর রাসূল! এমন পাপাত্মা পিতা, মেয়ে সন্তানদের জীবিত কবর দেওয়ার যে পাপ আমি করেছি, এমন পাপ নিয়ে ইসলাম কি আমাকে গ্রহণ করবে?
হযরত দাহিয়াতুল কালবী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কথা শুনে দয়াল নবীর দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। তাকিয়ে থাকলেন তার মুখ পানে। ওহি না আসা পর্যন্ত তিনি কোনো কথা বলেন না। চুপ করে থাকলেন, এমন সময় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আগমন করেন এবং বলেন,
হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দীপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করুন, ‘আল ইসলামু ইয়াহদিমু মা-কানা ক্বাবলাহ।’ অর্থাৎ, ‘ইসলাম বিগত জীবনের সমস্ত পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়’।
এ ঘোষণার পর হজরত দাহিয়াতুল কালবী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলেন। তিনি এমন সুন্দর ও সুদর্শন ছিলেন যে, তার আকৃতিতেই অধিকাংশ সময় ওহী নিয়ে আসতেন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম।
এনটি